চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ঐক্যবদ্ধ আমেরিকাই বাইডেনের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ

ডা. আফতাবুজ্জামান

২১ জানুয়ারি, ২০২১ | ৭:৫৯ পূর্বাহ্ণ

জো বাইডেন আমেরিকার ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন। নানা কারণে এই শপথ আমেরিকা এবং গণতন্ত্রের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

দেশ শাসনে জনগণের কিছু অংশের অংশগ্রহণের ধারণা দুই হাজার বছরের বেশি পুরনো হলেও এবং কিছু গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের জন্ম কয়েকশো বছর আগে হলেও সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণ ভিত্তিক আধুনিক গণতন্ত্রের বয়স একশো বছরের কিছু বেশি মাত্র। জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় শিশু গণতন্ত্র যেমন অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়েছে তেমনি আধুনিক গণতন্ত্রকেও নানা বিপদসংকুল অবস্থা অতিক্রম করতে হয়েছে। কিছু দেশ সমস্ত বাধা অতিক্রম করে গণতন্ত্র ও এর প্রতিষ্ঠান সমূহকে শক্তিশালী করেছে। এসব দেশের অন্যতম প্রধান দেশ যুক্তরাষ্ট্র। পৃথিবীর অনেক দেশের জন্যই যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান সমূহের স্থায়িত্ব ও নিরপেক্ষতা অনুপ্রেরণার উৎস। তা সত্ত্বেও স্মরণ কালের মধ্যে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র সবচেয়ে বড় হুমকির সম্মুখীন হয় বিগণ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার সমর্থকরা নির্বাচনের ফলাফল অস্বীকার করে এবং শান্তিপূর্ণ ভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার সমর্থকরা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান সমূহের শক্তির কাছে পরাজিত হয়, জয়ী হয় অধিকাংশ জনগণের মতামত।

এই যাত্রা বিপদ কাটলেও ট্রাম্পের উত্থান গণতন্ত্রের, বিশেষ করে লাগামহীন পুঁজিবাদের দুর্বলতাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। বছরের পর বছর প্রেসিডেন্টের পর প্রেসিডেন্ট বড় বড় কর্পোরেশন ও ধনবানদের স্বার্থ রক্ষা করেছে, সাধারণ মানুষ হয়েছে বঞ্চিত। বেড়েছে অসন্তোষ। বেড়েছে অবিশ্বাস। এই অবিশ্বাস ও অসন্তোষের সুযোগে বেড়ে উঠেছে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি এবং তাদের কাঁধে ভর দিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। আমেরিকার অন্তত চল্লিশ ভাগ মানুষ বিগত প্রেসিডেন্ট নির্বাচন মেনে নেয়নি। তারা জো বাইডেনকে বৈধ প্রেসিডেন্ট মনে করে না। বাইডেন তাই এক বিভক্ত দেশের প্রেসিডেন্ট। বলা হচ্ছে গৃহযুদ্ধের পর আমেরিকা এতোটা বিভক্ত কখনোই ছিলো না। এই বিভক্তি জোড়া লাগাতে হলে বাইডেনকে বিভক্তির মূল কারণ সমূহের সমাধানে কাজ করতে হবে, সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করতে হবে, তাদের অবস্থার উন্নতিকে তার প্রশাসনের প্রধান লক্ষ্য হিসাবে নির্ধারিত করতে হবে। দল মত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারলেই গণতন্ত্রের উপর মানুষের আস্থা ফিরে আসবে। এই আস্থা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নয়, সারা বিশ্বের জন্য প্রয়োজন। কারণ শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, পৃথিবীর অনেক দেশেই অসন্তোষ ও অবিশ্বাসের সুযোগে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি জনগণকে বিভক্ত করে আরো শক্তিশালী হচ্ছে।
তাই ইতিহাসের এক বিশেষ সন্ধিক্ষণে জো বাইডেনের ক্ষমতা গ্রহণ। তার সফলতা বা ব্যর্থতা ইতিহাসের গতি ও দিক বদলে দিতে পারে। আমরা তার সফলতা কামনা করি।

শেয়ার করুন