চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

হাত দিয়ে বোনা ঘাসের সেতু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১৭ জুন, ২০১৯ | ১০:৪৭ অপরাহ্ণ

দক্ষিণ আমেরিকার দেশ পেরুর কুজকো রাজ্যের পাশ ঘেঁষে বয়ে যাওয়া আপুরিমাক নদীর অববাহিকায় বাস করছে হাজার বছরের পুরানো ইনকা সভ্যতার উত্তরসূরিরা।

এই নদীর ওপরে চলাচলের জন্য তারা এক বিশেষ উপায়ে সেতু নির্মাণ করেন। এই সেতু তারা তৈরি করেন ঘাস দিয়ে।

কিউএসওয়াচাকা সেতুটির পুরোটা বোনা হয়েছে হাত দিয়ে। এবং এই সেতু টানা ৬শ’ বছর ব্যবহৃত হয়েছে। ২০১৩ সালে এই সেতুটিকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করা হয়।

ইনকা সাম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলের সংযোগ হিসেবে কাজ করতো সেতুগুলো। এই ধরণের সেতু বানানোর প্রথাটি ইনকা সম্প্রদায়ে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম চলে আসছে, যেন নদী পারাপারে নতুন স্বাদ পাওয়া যায়।

প্রথা অনুযায়ী এই সেতু নির্মাণে যুক্ত থাকতে পারেন শুধু প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষরা। তবে নারীরা পাহাড়ের ওপর বসে ছোট ছোট দড়ি বোনার কাজ করেন।

নতুন সেতু বসানোর আগে পুরুষরা, পুরনো সেতুটি সরিয়ে নেন। তারা ছোট ছোট দড়িগুলোকে একসঙ্গে করে বোনেন।

এই সেতুর প্রধান ভিত্তি হিসেবে কাজ করে ছয়টি বড় আকারের ত্রিপাল দড়ি। যেগুলোর প্রতিটি প্রায় ১ ফুট মোটা হয়ে থাকে। ১২০টি চিকন দড়ি পেঁচিয়ে এটি তৈরি করা হয়।

প্রতিটি পরিবারকে দুই স্তরের দড়ি সরবরাহ করতে হয়। কোয়া ইচু নামের বিশেষ ধরনের শক্ত ঘাস দিয়ে তৈরি করা হয় এই সেতু।

প্রতিটি দড়ি বোনা হয় হাত দিয়ে। প্রতিটি ঘাস পাথর দিয়ে পিটিয়ে সমান করা হয়। তারপর পানিতে ভিজিয়ে রাখা হয় দীর্ঘক্ষণ।

যখন সবাই সেতু বানানোর কাজে ব্যস্ত থাকে তখন গ্রামের কেউ কেউ কাঠের চুলায় রান্নার আয়োজন করেন। গ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে এই কাঠের চুলাগুলো সংগ্রহ করা হয়। রান্না করা হয় মুরগি, গিনিপিগ, ট্রাউট মাছের মতো আরো  নানা খাবার।

পুরনো সেতুটিকে কেটে নদীর পানিতেই ফেলে দেয়া হয়। কেননা এটি ঘাসের তৈরি হওয়ায় পানিতে পচে মিশে যায়। প্রকৃতির কোনো ক্ষতি করে না।

সেতুর জন্য বানানো মোটা ছয়টি দড়ির মধ্যে চারটি বসানো হয় সেতুর মেঝে হিসেবে। বাকি দুটো বসানো হয় কিছুটা উঁচুতে হাত রাখার জন্য। এবং এই ছয়টি দড়ি ঝোলানোর জন্য গিরিখাদের দুই প্রান্তে বিশালাকার পাথরের সঙ্গে শক্ত করে বাঁধা হয়। সঠিক মাপে দড়ি ঝোলাতেই সময় ব্যয় হয় সবচেয়ে বেশি।

এরপর কয়েকজন ব্যক্তি এই দড়িগুলোর ওপর হেঁটে হেঁটে ছোট আকারের দড়ি দিয়ে বাকি সেতু বোনার কাজ করেন। এই কাজ তারাই করতে পারেন, যাদের কোনো উচ্চতাভীতি নেই।

তারা মূলত ছোট দড়িগুলো দিয়ে মেঝের সঙ্গে হাতলকে জুড়ে দেন। অর্থাৎ বেড়ার মতো নির্মাণ করেন, যেন সবাই নির্ভয়ে সেতু পার হতে পারে।

সেতু নির্মাণের এই পুরো প্রক্রিয়ায় কোনো আধুনিক সরঞ্জাম বা যন্ত্র ব্যবহার করা হয় না। এখানে ব্যবহৃত হয় শুধু ঘাস আর জনশক্তি।

কিউএসওয়াচাকা নামের এই সেতুটি বছরে একবার পুনঃনির্মাণ করা হয়। সেতু বানানো শেষে আয়োজন করা হয় খাবার দাবার আর সংগীতানুষ্ঠানের।

মূলত চারদিন ধরে চলে এই সেতু বানানোর আনুষ্ঠানিকতা। চতুর্থ দিনেই উৎসব করা হয়।

পূর্বকোণ/ময়মী

শেয়ার করুন