চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

৪০ বছরের ইতিহাসে ভারতের অর্থনীতিতে বড় ধস

৪০ বছরের ইতিহাসে ভারতের অর্থনীতিতে বড় ধস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ৯:৫৫ অপরাহ্ণ

ভারতে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে নেমে এসেছে ভয়াবহ অর্থনৈতিক ধস। সোমবার (৩১ আগস্ট) প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যানে অনুযায়ী, গত ৪০ বছরের মধ্যে বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক তথা এপ্রিল-জুনে দেশটির অর্থনীতি নজিরবিহীনভাবে ২৩.৯% সংকুচিত হয়েছে।

গত ২৫ মার্চ থেকে দেশজোড়া লকডাউনের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পোৎপাদন হঠাৎ স্তব্ধ হয়ে যায়। ১ জুন থেকে ধীরে ধীরে লকডাউন ওঠা শুরু হলেও ব্যবসা-বাণিজ্য, কলকারখানায় উৎপাদন, কর্মসংস্থান তৈরিতে তেমন গতি আসেনি।

স্বাধীনতার পর দেশটিতে অর্থনীতির এতটা গভীর সংকোচন আর কখনো হয়নি। এরপর সম্ভাব্য ধারণা অনুযায়ী জুলাই-সেপ্টেম্বরেও অর্থনীতির সংকোচন অব্যাহত থাকলে সামনে অবস্থা আরও খারাপ হবে।

রেটিং সংস্থা ক্রিসিলের আশঙ্কা, স্বাধীনতার পর ভারত এই নিয়ে চতুর্থবার মন্দার সম্মুখীন ও এই মন্দা হয়তো সবচেয়ে তীব্র হবে। সংস্থাটির মতে, অর্থনীতি যদি পরের প্রান্তিকগুলোতে খানিকটা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে তা হলেও পুরো অর্থবছরে সংকুচিত হতে পারে ৫% ভারতীয় অর্থনীতি।

ভারতের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম বলেন, গত ১২ মাসে দেশের জিডিপি-র চার ভাগের এক ভাগ মুছে গেছে। অন্যভাবে বলতে গেলে ২০১৯-২০ অর্থ বছরের জিডিপি প্রায় ২০ শতাংশ কমেছে।

অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, শুধু এপ্রিল থেকে জুন নয় বরং অর্থনীতির সঙ্কোচন অব্যাহত থাকবে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই তিন মাসে ইতিহাসে এই প্রথম নতুন লগ্নি ৪৭% কমেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের দাবি, ‘আনলক’ পর্ব শুরু হওয়ার পরে দ্রুত গতিতে ঘুরে দাঁড়াবে অর্থনীতি। কিন্তু গতকাল সোমবারই দেখা গেছে, জুলাই মাসেও আটটি প্রধান পরিকাঠামো ক্ষেত্রে সঙ্কোচন হয়েছে। এই নিয়ে টানা পাঁচ মাস পরিকাঠামো ক্ষেত্রে সঙ্কোচন চলছে। জুলাইয়ে পরিকাঠামো ৯.৬% উৎপাদন কমেছে শিল্পে। ইস্পাত, সিমেন্ট উৎপাদন কমেছে। ফলে অন্য ক্ষেত্রেও উৎপাদন কমার পরিমাণ স্পষ্ট।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রের ব্যাখ্যা, সরকারি পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট যে, বর্ষার মৌসুম ভাল না হলে এবং কেন্দ্র ও রাজ্য মিলে খাদ্য সুরক্ষা, জনস্বাস্থ্য, ১০০ দিনের কাজ, নগদ ভর্তুকিতে টাকা না ঢাললে অর্থনীতির সঙ্কোচন আরও বেশি হত। ৩ মাসে সরকারি খরচ বেড়েছে প্রায় ১৬% বেড়েছে। কিন্তু ভারতের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি দেশের বাজার বা কেনাকাটায় ধাক্কা লেগে সঙ্কোচন ২৭%। কিন্তু সরকারি খরচ বাড়িয়ে অর্থনীতি সচল রাখতে হলেও লকডাউনের ধাক্কায় কমে গেছে সরকারের রাজস্ব আয়ও। সরকারি কোষাগারের তথ্যমতে, এপ্রিল থেকে জুলাই, চার মাসে রাজকোষ ঘাটতি লক্ষ্য ছাপিয়ে গেছে গোটা বছরের রাজকোষ ঘাটতির।

অর্থনীতিবিদদের অনেকেই মনে করছেন, কর্পোরেট সংস্থার পরিসংখ্যান থেকে অসংগঠিত ক্ষেত্রের ছবি পুরোপুরি ধরা পড়বে না বিধায় ছবিটা এর থেকেও খারাপ । লকডাউনের জেরে অসংগঠিত ক্ষেত্রেই বেশি ধাক্কা লাগার ফলে পরিযায়ী শ্রমিক থেকে গরীব মানুষ রুটিরুজি হারিয়েছেন।

উপদেষ্টা সংস্থা সিএমআইই’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চের শেষে লকডাউন ঘোষণা হয়েছিল। সেই মার্চে দেশে বেকারত্বের হার ছিল ৮.৭৫%। পাঁচ মাস পরে সেই বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ শতাংশের ওপরেই।

 

 

 

 

 

 

 

 

পূর্বকোণ/আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট