যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য সেদিন বিমানে ওঠার কথা ছিল ১৭ বছর বয়সী মুজতবা আল শওকতের। সে অনুসারে দাম্মাম বিমানবন্দরেও তিনি গিয়েছিলেন। হয়তো একটু পরে বিমানে ওঠে চলেও যেতেন। কিন্তু সৌদি আরবের পুলিশ তাকে সেখান থেকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসে। ২০১২ সালের ঘটনা এটি। সাত বছর পর সন্ত্রাসী সেল গঠনের অভিযোগে শিরচ্ছেদ করা হয় তার। সৌদি আদালতে বিচারের নথির ভিত্তিতে সিএনএনের করা প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
তার বাবা নাদের আল শওকত আদালতে বলেন, মুজতবার বিরুদ্ধে পুরো মামলাটি সাজানো। সেখানে এমন কোনো সেল ছিল না। তিনি বলেন, মাত্র কয়েকজন সত্যিকার অপরাধ করার কথা স্বীকার করেছেন। এই গণবিচারে নিজের ছেলের আইনজীবী হিসেবে কাজ করেন নাদের শওকত। তিনি বলেন, তার পরিবার খুবই দেশপ্রেমিক। এছাড়া তার ছেলে অধ্যবসায়ী ও মেধাবী। সৌদি আরবে তার প্রাতিষ্ঠানিক পরীক্ষার চূড়ান্ত পর্বে গড়ে ৯৪ শতাংশ নম্বর পেয়েছে সে। কিন্তু কোন কিছুই মুজতবাকে তার স্বপ্নের পথে ছুটতে দেয়নি। ২০১২ সালে আটক হওয়ার পর তাকে ৯০ দিন নির্জন কারাবাসে আটকে রাখা হয়।
আদালতের নথি বলছে, মুজতবা নিরাপত্তা বাহিনীর প্রতি মলোটভ ককটেল নিক্ষেপের কথা স্বীকার করেছেন। এছাড়া বিক্ষোভকারীদের জড়ো করতে ব্ল্যাকবেরি ফোনে তিনি একটি চ্যাট গ্রুপ খুলেছেন বলে অভিযোগে বলা হয়েছে। কিন্তু তার বাবা বলেন, তার ছেলে মাত্র দুবার বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন। প্রতিবার সে কেবল পাঁচ মিনিট করে সেখানে ছিল।
বিচারের নথিতে দেখা যায়, শওকতের বাবা বলছেন, তার ছেলে ব্যাপক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এতে সে দুর্বল হয়ে পড়ে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য করা হয়েছে। জবরদস্তিমূলক তার সই নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এতে সই না দিলে তার ওপর নির্যাতন বন্ধ হবে না। এ জন্যই সে সই দিয়েছে।
তবে এসব কিছুই তাকে রক্ষা করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত মুজতবাকে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদ-ের নির্দেশ দেয় দেশটির আদালত। চলতি সপ্তাহের শুরুতে যে ৩৭ জনের শিরচ্ছেদ করার ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব, তিনিও তাদের মধ্যে রয়েছেন।