চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

গভীর জঙ্গলে একা তরুণীর ১৬ রজনী

পূর্বকোণ ডেস্ক

২৭ মে, ২০১৯ | ৫:৪৮ অপরাহ্ণ

গভীর অরণ্যে একা আর নিঃসঙ্গ হয়েই বেঁচে থাকার লড়াই চালাতে হয়েছে এক মার্কিন তরুণীকে। ঘন-গভীর জঙ্গলে টানা ষোলটি রাত অর্থাৎ সতেরো দিন পার করতে হয়েছে তাকে। সেখানে খাবার বলতে বনের লতাপাতা ছাড়া আর কিছুই ছিল না। আর তেষ্টা মেটাতে ছিল কেবল নদীর পানি।

কোন ফিল্মের চিত্রনাট্য নয় এটি। নয় কোনো উপন্যাসের পটভূমিকা। দু’ সপ্তাহেরও বেশি আগে হাওয়াইয়ের মাউই দ্বীপে হাইকিংয়ে বেরিয়ে আর ফেরেননি এমান্ডা এলার নামের মার্কিন এ তরুণী। গভীর জঙ্গলে দীর্ঘ তল্লাশির পর শুক্রবার খোঁজ মিলল তার। জীবিত, কিন্তু একেবারেই বিধ্বস্ত। এমান্ডাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

জানা যায়, ৮ মে হাইকিংয়ে বেরিয়েছিলেন এমান্ডা। তারপর থেকে আর খোঁজ মেলেনি তার। এমান্ডার খোঁজে বেরিয়েছিল একাধিক উদ্ধারকারী দল। হেলিকপ্টারে তল্লাশি অভিযান শুরু হয়। অনেকে ভয় পেয়েছিলেন, ভেবেছিলেন তাকে হয়ত অপহরণ করা হয়েছে।

জঙ্গলের মাঝখানে পাওয়া গিয়েছিল এমান্ডার গাড়ি। আর সেটাই আশা জুগিয়েছে। এমান্ডার খোঁজে ফেসবুকে একটি পেজ তৈরি করা হয়েছিল। দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ নানা আশঙ্কা দানা বাঁধতে থাকে সেখানে। অপহরণের কথা বারবার উঠতে থাকে।

কিন্তু সেই তরুণীকে যারা চেনেন, বিশেষ করে এমান্ডার মা হাল ছাড়তে নারাজ ছিলেন। তার মেয়ে বেঁচে আছে, এমন বিশ্বাসই ছিল এমান্ডার মা জুলিয়া এলার।

তিনি বলেন, আমি জানতাম ও ঠিক বেঁচে আছে। কখনো আশা ছাড়িনি। এক এক সময় ভয় লেগেছে, কিন্তু নিজের মনকে শক্ত রেখেছি।

৩৫ বছর বয়সী এমান্ডা একজন যোগ ব্যায়ামের শিক্ষিকা, ফিজিক্যাল থেরাপিস্ট। সেইসঙ্গে স্কুবা ডাইভিং, হাইকিংও করেন। তার শারীরিক ও মানসিক জোর নিয়ে ভরসা ছিল সকলের। উদ্ধারকারী দলের অন্যতম জেভিয়ার ক্যান্টেলপ জানান, ফিটনেস তো আছেই, সেইসঙ্গে স্থানীয় অরণ্যের লতাপাতা নিয়ে তার অগাধ জ্ঞান রয়েছে। যেমন, কোনটা খাওয়া যায়, আর কোনটা বিষাক্ত। জানতাম সে লড়াইটা চালিয়ে যেতে পারবে।

বিভিন্ন প্রান্তে তল্লাশির পরে মাউই দ্বীপের মাকাওয়াও’র সংরক্ষিত অরণ্যে হেলিকপ্টার নিয়ে খোঁজ শুরু করেন জেভিয়াররা। তন্নতন্ন করে খোঁজার পরে শুক্রবার হঠাৎই এমান্ডাকে দেখতে পান তারা। দু’টি জলপ্রপাতের মাঝে একটি জায়গায় খালি পায়ে হাঁটছেন এমান্ডা। আর কপ্টারের দিকে তাকিয়ে পাগলের মতো হাত নেড়ে যাচ্ছেন।

জেভিয়ার জানান, সবাই একসঙ্গে হইহই করে উঠি। ওই তো হাত নাড়ছে এমান্ডা। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না তখনো। বিশ্বাসটাই যে ক্রমশ ফিকে হয়ে যাচ্ছিল। হেলিকপ্টার থেকে একটি বাস্কেট নামিয়ে দেয়া হয় নিচে। তাতেই চড়ে বসেন এমান্ডা। ফেসবুকে ছড়িয়েছে এমান্ডাকে উদ্ধারের সেই ফুটেজও।

জুলিয়া আরো জানান, মেয়ের একটি পা ভেঙেছে। এছাড়া আরো কিছু ছোটখাট আঘাতও রয়েছে। মনের ওপর দিয়েও ঝড়-ঝাপটা গেছে। দু’ সপ্তাহ শুধুমাত্র বুনো লতাপাতা আর নদীর পানি খেয়ে বেঁচে থাকা। ১৫ পাউন্ড ওজন কমে গেছে তার। জুলিয়া জানান, আনন্দে চোখে পানি চলে এসেছিল। ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ। ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরেছে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট