চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

১৭ হাজার বাংলাদেশি অবরুদ্ধ দ. কোরিয়ায়

অনলাইন ডেস্ক

২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৯:৪৯ অপরাহ্ণ

নভেল করোনাভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। হঠাৎ করেই এ ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এরই মধ্যে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে দেশটির সরকার। এ পরিস্থিতিতে চরম আতঙ্কে আছে দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থানরত প্রায় ১৭ হাজার বাংলাদেশী। প্রায় অবরুদ্ধ অবস্থায় দিন কাটছে তাদের।

দক্ষিণ কোরিয়ার পুসান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেডিসিনে সিনিয়র রিসার্চ সায়েন্টিস্ট হিসেবে কাজ করছেন এসএম বখতিয়ার-উল ইসলাম। গতকাল তিনি বলেন, আমাদের ইউনিভার্সিটিতে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস সংক্রমণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। এরপরও সতর্কতা হিসেবে এখানে আমরা সবাই মাস্ক পরে চলাফেরা করছি। সবার মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছে। রাস্তাঘাটে গাড়ি আছে, কিন্তু যাত্রী বা চালক কেউ কারো সঙ্গে কথা বলছেন না। অ্যাপ দিয়ে কাজ চলছে। গত রোববার যখন সংক্রমণের খবরটি প্রথম ছড়িয়ে পড়ে তখন হঠাৎ করেই সবাই আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ক্রেতাদের চাপে শপিংমলগুলো হঠাৎ নিত্যপণ্যশূন্য হয়ে যায়। সবাই শুকনা খাবার ও ফলমূল কিনে বাড়িতে মজুদ করতে শুরু করায় এ অবস্থা তৈরি হয়। সূত্র : বণিকবার্তা

তিনি বলেন, যেসব বাংলাদেশী পরিবার নিয়ে এখানে আছেন তারা বেশি চিন্তিত। কারণ কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো এরই মধ্যে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শিশুদের বাসায় রাখতে হচ্ছে। সংক্রমিতদের একটা বড় অংশই এ দেইগু শহরের, যেখানে অন্তত চার হাজার বাংলাদেশী রয়েছেন। তারা বেশি আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থায় আছেন বলে শুনেছি।

দ্রুত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় কোরিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশীদের সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা করার জন্য বলেছেন দক্ষিণ কোরিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম। গতকাল এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের ঝাঁকুনিতে পড়েছে কোরিয়া। শুধু কোরিয়া নয়, পুরো পৃথিবীতে হু হু করে বাড়ছে ভয়ংকর নভেল করোনাভাইরাস। রেড এলার্ট জারি করেছে কোরিয়া সরকার। করোনা শুনলেই আঁতকে উঠছে মানুষ। এ অবস্থায় তিনি প্রবাসীদের সবসময় মাস্ক ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে যেকোনো প্রয়োজনে দূতাবাস সার্বিক সহযোগিতা করবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন।

সংক্রমণ বাড়তে থাকায় স্থবির হয়ে আছে দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষের জনজীবন। অধিক প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে কেউ বের হচ্ছে না। দুদিন ধরে রাস্তায় মানুষজন নেই বললেই চলে। জনমানবশূন্য কোরিয়ার বাজারগুলো। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কোরিয়া সরকার। অসুস্থদের জন্য চিকিৎসা সরঞ্জাম, শয্যা ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জাতীয়ভাবে হেল্প লাইন চালু করা হয়েছে। সবাইকে ১৩৩৯-এ কল করে সব বিষয়ে জানাতে আহ্বান জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগ।

এদিকে তিন সেনার শরীরে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ায় সব সামরিক ঘাঁটি বন্ধ করে দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। শুধু তা-ই নয়, স্যামসাং মোবাইল ডিভাইস ফ্যাক্টরিতে এক ব্যক্তি নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কারণে পুরো কারখানা বন্ধ করে দেয়া হয়।  মসজিদ, গির্জাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটির প্রশাসন।

দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সিউলে লজিস্টিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ইএস শিপিংয়ের স্বত্বাধিকারী সজল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাসের প্রভাবে সিউলে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। প্রবাসী বাংলাদেশী যারা এখানে আছেন তারা প্রয়োজন ছাড়া খুব একটা বাইরে বের হচ্ছেন না। আবহাওয়া খুব ঠাণ্ডা (২ ডিগ্রি) হওয়ায় এমনিতেই লোকজন খুব একটা বাইরে থাকেন না। তিনি বলেন, কোরিয়ায় সবাইকে দিনে কমপক্ষে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। চাইলেই কেউ ঘরে বসে থাকতে পারছেন না। এর মধ্যেও আমরা বাংলাদেশীরা সবাই সতর্ক অবস্থায় আছি।

কোরিয়ার পর্যটন বিভাগ তার দেশের নাগরিকদের ছয়টি দেশে ভ্রমণে সতর্কতা জারি করেছে। দেশগুলো হচ্ছে চীন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, জাপান ও তাইওয়ান। আর ভিসাবিহীন ব্যক্তিদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগ এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে যাওয়া রুখতে বিদেশী যাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাদের মেয়াদ আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হলো।

দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দ্রুত ছড়ালেও সেখানকার বাসিন্দারা এখনো পুরোপুরি সচেতন নয় বলে মনে করেন বাংলাদেশী শিক্ষার্থী জালাল উদ্দিন। বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়ার ক্যাঙ্গৌন ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে এমএস করছেন তিনি। গতকাল জালাল উদ্দিন বলেন, আমাদের ইউনিভার্সিটিতে এ পর্যন্ত তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে গতকাল (সোমবার) যিনি শনাক্ত হয়েছেন তিনি ক্যাম্পাসেই ছিলেন। আমরা যে ক্যাফেটেরিয়ায় খাবার খাই সেখানে তিনিও খেতেন। ওই ব্যক্তির করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই আমরা মাস্ক ব্যবহার করছি। যদিও অনেক কোরিয়ান নাগরিক বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। তিনি বলেন, এর আগে যারা চায়না থেকে এসেছিল, তাদের কোয়ারান্টাইন করে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বাকিদের ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।

প্রসঙ্গত, মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাস ডিজিজ বা কভিড-১৯-এ সংক্রমিত হওয়ার সংখ্যা চীনে ক্রমেই কমে আসছে। আর চীনের বাইরে এখন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটিতে এ পর্যন্ত সংক্রমিতের সংখ্যা সপ্তাহের ব্যবধানে তিন গুণ বেড়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে চীনের প্রতিবেশী দেশটি এখন সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে। দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর দেইগুর একটি গির্জা থেকে ভাইরাসটি এখন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।

গতকাল পর্যন্ত ভাইরাসটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৪৩। এর মধ্যে গতকালই নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ২৪১ জন। ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে গতকাল পর্যন্ত আটজনের মৃত্যু হয়েছে।

পরিস্থিতি সামাল দিতে উচ্চমাত্রায় সতর্কতা জারির পাশাপাশি দেইগুসহ অন্যান্য শহরকে কার্যত বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে পারে সিউল। কোরিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের তথ্যানুযায়ী, যে গির্জা থেকে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে বলে বলা হচ্ছে, সেখানকার ৯ হাজার ৩০০ সদস্যকে কোয়ারান্টাইনে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

 

 

পূর্বকোণ/আরপি

শেয়ার করুন