চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

দুজনেই একে অন্যকে মৃত ভেবেছিলেন, দেখা হল ৪৭ বছর পর !

অনলাইন ডেস্ক

২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ | ৪:৩১ অপরাহ্ণ

কম্বোডিয়ার বাসিন্দা দুই বোনের দেখা হলো ৪৭ বছর পর, যাদের একজনের বয়স ৯৮ বছর এবং আরেকজনের ১০১। ১৯৭০ এর দশকে খেমার রুজের সন্ত্রাসবাদী শাসনামলে প্রায় ২০ লাখ মানুষ মারা গেছে বলে ধারণা করা হয়। দুবোনের উভয়ই সে সময় একে অন্যকে মৃত ভেবেছিলেন। এই দুই বোনের এক ভাইও রয়েছে। যার বয়স এখন ৯২ বছর। ৯৮ বছর বয়সী বোন বুন সেনের সেই ভাইয়ের সঙ্গেও দেখা হয় তার।

স্থানীয় এক এনজিও জানায়, বুন সেনকে তার ৯২ বছর বয়সী ভাইয়ের সঙ্গে পুনরায় দেখা করানো হয়। বুন সেন ভেবেছিলেন তার এই ভাইটিও হয়তো আর বেঁচে নেই। দুই বোনের সর্বশেষ দেখা হয়েছিল ১৯৭৩ সালে। পোল পটের নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্টরা কম্বোডিয়ার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার দুই বছর আগে। খেমার রুজের শাসনামলে অনেক পরিবার ভেঙে পড়েছিল। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল একে অপর থেকে। হাজার হাজার শিশুকে তাদের মা-বাবার কাছ থেকে আলাদা করে দেয়া হয়েছিল। পোল পট শাসনামলে বুন সেন তার স্বামীকে হারিয়েছিলেন। ১৯৭৯ সালে ভিয়েতনামের সামরিক বাহিনীর অভিযানে খেমার রুজের পতন হয়েছিল। এরপর বুন সেন রাজধানী নম পেনের কুখ্যাত স্টাং মিঞ্চে ময়লার ভাগাড়ের কাছে বসবাস শুরু করেন।

দীর্ঘদিন তিনি ময়লা ঘেঁটে সময় কাটিয়েছেন। সেখান তিনি পুনর্ব্যবহারযোগ্য জিনিসপত্র খুঁজে বের করে বিক্রি করতেন। ওই আয় দিয়ে আশপাশের দরিদ্র শিশুদের দেখভাল করতেন তিনি। তিনি সব সময় তার নিজ গ্রামে যাওয়ার স্বপ্নের কথা বলতেন। তার গ্রামের বাড়ি ক্যামপং চাম প্রদেশে, রাজধানী নম পেন থেকে যার দূরত্ব প্রায় ৯০ মাইল পূর্বে। তবে এত বয়স হয়ে যাওয়া, হাঁটতে চলতে না পারাসহ অসংখ্য কারণে তার জন্য যেকোনো যাত্রা খুব কঠিন হয়ে পড়েছিল। কম্বোডিয়ান চিলড্রেনস ফান্ড নামের একটি স্থানীয় এনজিও ২০০৪ সাল থেকে বুন সেনকে সহায়তা করে আসছিল। তারা বুন সেনকে তার গ্রামের বাড়িতে ঘুরিয়ে আনার ব্যবস্থা শুরু করে। তখনই তারা আবিষ্কার করে যে বুন সেনের বড় বোন এবং ছোট ভাই এখনো বেঁচে আছেন এবং তাদের গ্রামের বাড়িতেই বাস করছেন। প্রায় অর্ধ শতাব্দীর পরে, বুন সেন গত সপ্তাহে তার বড় বোন বুন চিয়া এবং ছোট ভাইয়ের সঙ্গে পুনরায় মিলিত হন। বুন সেন বলেন, ‘আমি অনেক দিন আগে আমার গ্রাম ছেড়ে চলে এসেছিলাম এবং কখনই ফিরে যাইনি, আমি সব সময় ভেবেছিলাম আমার বোন এবং ভাইয়েরা মারা গেছে।’

তিনি বলেন, ‘এই বয়সে এসেও আমি আমার বড় বোনকে ধরতে পারছি, এটার অর্থ অপরিসীম। আর আমার ছোট ভাইটি যখন প্রথম আমার হাত ছুঁয়ে দেখে, তখনই আমি কাঁদতে শুরু করি।’ বড় বোন বুন চিয়ার স্বামীকেও খেমার রুজরা হত্যা করা করেছিল এবং তিনি ১২টি সন্তান নিয়ে বিধবা হয়ে পড়েন। তিনি ভেবেছিলেন তার স্বামীর মতো তার ছোট বোনও হয়তো মারা গিয়েছে। বুন সিয়া বলেন, ‘পোল পটের হাতে আমাদের ১৩ জন আত্মীয় মারা যান এবং আমরা ভেবেছিলাম তাদের মধ্যে বুন সেনও ছিল। এত দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেছে। আমরা তাকে নিয়ে অনেক কথা বলেছি। তবে আমি কখনই ভাবিনি যে আমরা আবার তার দেখা পাবো।’ এখন এই বোনেরা তাদের মাঝে হারিয়ে যাওয়া সময়গুলো পূরণ করে নেয়ার চেষ্টা করছেন। এই সপ্তাহে তারা একসঙ্গে রাজধানী সফরে গিয়েছেন।

 

 

 

 

 

 

পূর্বকোণ/এম

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট