চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

দেশে ইউটিউবারদের মাসিক আয় পাঁচ লাখ টাকা

অনলাইন ডেস্ক

৫ জানুয়ারি, ২০২০ | ৯:৩২ অপরাহ্ণ

ভিডিও দেখতে হলে সবার আগে অনলাইন মাধ্যমে যে নামটির কথা মাথায় আসে, সেটি হচ্ছে- ইউটিউব। শহর থেকে গ্রামে সবখানেই ইউটিউবের দর্শক ছড়িয়ে আছে। কাজের ফাঁকে সুযোগ মিললেই ইউটিউবের লাল প্লে বাটনে চাপ দেন না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। গান, বিনোদন, ভ্রমণ কিংবা শিক্ষামূলক সব ধরনের ভিডিও পাওয়া যায় ভিডিওর সবচেয়ে বড় এ অনলাইন প্ল্যাটফর্মে। কিন্তু কারা তৈরি করেন এসব?

এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, দেশেই এখন তৈরি হয়েছে কয়েক হাজার ইউটিউবার। কেউ কেউ তো পেশা হিসেবে পুরোদমে বেছে নিয়েছেন ইউটিউবকে। মাসিক আয়ও একেবারে কম না। দেশের শীর্ষ ইউটিউবাররা প্রতি মাসে গড়ে আয় করেন ৩ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা।

ইউটিউবের দর্শক এবং নির্মাতা, সবাই বয়সে তরুণ। ২৫-৩৫ বছর বয়সীদের আধিপত্য বেশি এ অঙ্গনে। এই একটা প্ল্যাটফর্মেই জানা এবং আয়ের পথ খুলে দিয়েছে। চাকরি বা ব্যবসার পাশাপাশি অনেকেই বিকল্প আয়ের জন্য এখন অনেক তরুণ বেছে নিয়েছেন ইউটিউবকে। বেকারদের কেউ কেউ তো এ পথ বেছে নিয়ে রীতিমতো চমকে দিয়েছেন। ইউটিউবের পথ ধরেই প্রতি মাসে দেশে আসছে বড় অঙ্কের বৈদেশিক মুুদ্রা।

২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১০ কোটি। এই ১০ কোটি মানুষের প্রায় সবাই ইউটিউবে প্রায় ঢুঁ মারেন। তাদের জন্য ভিডিও নির্মাণে কাজ করছে বাংলাদেশি কয়েক হাজার তরুণ। তবে ঠিক কতজন ইউটিউবে ভিডিও নির্মাণ করে, সে হিসাব বিটিআরসি’র কাছে পাওয়া যায়নি।

বাংলাদেশে ইউটিউবের কোনো অফিস না থাকায় ইউটিউবের কাছ থেকে এ পরিসংখ্যান জানার সুযোগ হয়নি। তবে দেশে ইউটিউব ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করে এমন একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে জানা যায়, দেশে এখন তিন হাজারের বেশি ইউটিউব নির্মাতা রয়েছে। যারা নিয়মিত ইউটিউবে ভিডিও আপলোড করছে।

তাদের হিসাবে, গত পাঁচ বছরে দেশে চ্যানেলের সংখ্যাও বেড়েছে প্রায় ১০ গুণ। ব্যক্তিগত ব্যবস্থাপনা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিজেদের প্রচার ও তথ্যে প্রকাশের জন্য ইউটিউব চ্যানেল পরিচালনা করছে। বিশেষ করে মিডিয়া সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানেরই অন্তত একটি করে ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে। দেশের সবকটি টিভি, রেডিও, সংবাদপত্র, অনলাইন পত্রিকা, সঙ্গীত-বিনোদন প্রতিষ্ঠান, বিজ্ঞাপনী সংস্থা, নাটক নির্মাণ প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের ইউটিউব চ্যানেল দিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। এ ছাড়াও সঙ্গীতশিল্পী, অভিনেতা, খেলোয়াড়, শিক্ষক এমনকি রাজনীতিবিদরাও ইউটিউবে ভর করে তাদের বার্তা মানুষের কাছে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে এ মাধ্যমটি এখন যোগাযোগ আর প্রচারের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে পরিচিতি পেয়ে গেছে।

ইউটিউব র‌্যাঙ্কিং নিয়ে বিশ্বব্যাপী কাজ করে এমন প্রতিষ্ঠান সোশ্যাল ব্লেড। প্রতিষ্ঠানটির হিসাব মতে, বাংলাদেশে ইউটিউব চ্যানেলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাবস্ক্রাইবার ‘মায়াজাল’। বিভিন্ন ধরনের বিচিত্র বিষয় নিয়ে ভিডিও প্রকাশ করে চ্যানেলটি। কয়েকজন তরুণ এ চ্যানেলটি পরিচালনা করছে। ইউটিউবে তাদের সাবস্ক্রাইবার ৩০ লাখ ছাড়িয়েছে। প্রতি মাসে গড়ে তাদের আয় প্রায় পাঁচ লাখ টাকা।

সাইস্ক্রাইবারের দিক থেকে দ্বিতীয়তে অবস্থান করছে ‘ফারজানা ড্রইং একাডেমি’ নামের একটি চ্যানেল। বিভিন্ন বিষয়ক ড্রয়িং নিয়ে কাজ করে এ চ্যানেলটি। ফারজানা নামের এক তরুণী এ চ্যানেলটি পরিচালনা করছেন। তারও আনুমানিক আয় তিন লাখের বেশি। এছাড়া জনপ্রিয় বেশ কয়েকটি চ্যানেল আছে, যাদের প্রতি মাসে আয় ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা। এ তালিকায় ভ্রমণবিষয়ক চ্যানেল ‘তৌহিদ আফ্রিদি’, কৌতুকবিষয়ক চ্যানেল ‘আজাইরা লিমিটেড’, বাংলাদেশের সংস্কৃতিকবিষয়ক চ্যানেল ‘এরাউন্ড মি বিডি’ এগিয়ে আছে। এ ছাড়াও টেক রিভিউ বানিয়ে ‘এটিসি এন্ড্রয়েড টো টো কোম্পানি’, রান্নাবিষয়ক চ্যানেল ‘কুকিং স্টুডিও বাই উম্মে’ অনেকের কাছে জনপ্রিয়। নাট্যাভিনেতা আদনান ফারুক হিল্লোল ‘আদনান ফারুক’ নামে ও তার স্ত্রী ‘নওশীন নাহরিন’ও চ্যানেল পরিচালনা করে দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

কয়েকজন ইউটিউবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে অনেক তরুণ ইউটিউবে ভিডিও তৈরি করেই পড়াশোনা কিংবা সংসার চালাচ্ছেন। তাদের মতে, ২০২৫-২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ইউটিউবারের সংখ্যা আরও ১০ গুণ বাড়তে পারে।

ইউটিউবে কন্টেন্ট ক্রিয়েটররা কয়েকভাবে আয় করে থাকেন বলে জানা গেছে। প্রথমত, কনটেন্ট বানিয়ে গুগল এডসেন্ট থেকে, দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন দেশি প্রতিষ্ঠানের স্পন্সরশিপ নিয়ে কনটেন্ট বানিয়ে। শুধু ইউটিউবের জন্য তৈরি করা এমন কয়েকটি নাটকের দিকে তাকালেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে। এর বাইরে আয়মান সাদিকের শিক্ষা বিষয়ক চ্যানেল ‘টেন মিনিটস স্কুল’ ও টেলিকম সংস্থা রবির বিজ্ঞাপন ও স্পন্সর নিয়ে কনটেন্ট বানাচ্ছে।

তবে ইউটিউব সংশ্লিষ্টরা আয়ের ক্ষেত্রে বহুমুখী সঙ্কটে পড়ছে বলেও জানিয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশে ইউটিউবের অফিস না থাকা এবং বাংলাদেশকে মনিটাইজেশন না দেয়া সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা বলে ভাবছে তারা।

বিষয়টি নিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের সঙ্গে কথা বলে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ইউটিউব কর্তৃপক্ষ যে একচোখা নীতি অবলম্বন করছে, তার অবশ্যই পরিবর্তন হওয়া দরকার। শুধু ইউটিউব নয়, আমেরিকাভিত্তিক আরও কয়েকটি সোশ্যাল মিডিয়া আছে, তারা যেভাবে বাংলাদেশকে অবজ্ঞা করছে, সেটা কখনোই কাম্য নয়। বাংলাদেশকে তারা যেভাবে এখন দেখছে, বাংলাদেশ আর সে অবস্থানে নেই। বিশেষ করে মনিটাইজেশনসহ অন্য ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য এসব প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে।’

এদিকে, তথ্য প্রযুক্তি খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সরকার ইউটিউবের সঙ্গে কথা বলে মনিটাইজেশনে বিষয়টি নিশ্চিত করলে এ দেশের অনেক শিক্ষিত তরুণ-তরুণী ইউটিউবকে পুরোপুরি পেশা হিসেবে বেছে নিতে পারবে। দেশের অর্থনীতিতে ইউটিউবারদের ভূমিকাও তখন অনেক বেশি থাকবে বলে মনে করেন তারা।

 

 

পূর্বকোণ/আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট