চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

কৃষকের ছেলে থেকে ইসরো’র চেয়ারম্যান

অনলাইন ডেস্ক

৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১২:০৫ পূর্বাহ্ণ

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক খবর থেকে জানা গেছে, খোঁজ মিলেছে ইসরো থেকে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পাঠানো ল্যান্ডার বিক্রমের। তবে এখনও বেতার সংযোগ করা সম্ভব হয়নি। রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে অরবিটারের পাঠানো ছবি মারফত হারিয়ে যাওয়া বিক্রমের খোঁজ পাওয়া যায়।  গত এক মাস ধরে সারা বিশ্বের আলোচনায় ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো। একই সঙ্গে আলোচিত ইসরোর চেয়ারম্যান কে শিবন-ও। কেননা তার হাত ধরেই তো মহাকাশে পাড়ি জমিয়েছে চন্দ্রযান ২।

মোটেই সহজ ছিল না কে শিবনের যাত্রাপথ। এক দ্ররিদ্র কৃষকের সন্তান হবার কারণে আর্থিক সমস্যায়  বারবার থমকে গেছে তার লেখাপড়া।

কে শিবনের জন্ম ১৯৫৭ সালের ১৪ এপ্রিল, তামিলনাড়ুর মেলা সারাক্কালভিলাই গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে। বাবা ছিলেন কৃষক। তার বাবা এতটাই গরীব ছিলেন যে, স্কুলে পড়তে জুতো কেনার টাকাও ছিল না তার। তাই খালি পায়েই স্কুলে যেতেন তিনি। কলেজে ভর্তি হওয়ার পরও অনেকটা একই রকম ছিলো তার জীবনযাত্রা। খালি পায়ে উঠে এসছিলো চপ্পল। তবে প্যান্ট কেনার পয়সা ছিলনা বলে ছাত্রজীবনের অধিকাংশ সময়ই ধুতি পরে কাটিয়েছেন। কিন্তু সংসারের এই অভাব অনটন তাকে লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি।

তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারীর একটি সরকারি স্কুলে পড়াশোনা করেছেন তিনি। ছোট থেকেই পড়াশোনার প্রতি ছিলো তীব্র আগ্রহ। কৃষক পরিবারে তার আগে কেউ সেভাবে লেখাপড়া করেনি। ১৯৮০ সালে মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে স্নাতক হয়েছিলেন। পরিবারে তিনিই প্রথম স্নাতক।

তবে কলেজ পাশের পর ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়েই পড়ার ইচ্ছা ছিলো তার। কিন্তু এত টাকা না থাকায় কৃষক বাবা তাকে ডিগ্রি ক্লাসে ভর্তি হতে বলেন। বাবার মন বদলাতে টানা এক সপ্তাহ উপবাস করেন তিনি। তাতেও গলেনি বাবার মন। শেষে বাধ্য হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন কলেজে ডিগ্রিতে।

সেখান থেকে অঙ্ক নিয়ে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। কিন্তু ছেলের ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার ইচ্ছা যে কতটা তীব্র শেষ পর্যন্ত তা অনুভব করতে পারেন বাবা। তাই স্নাতক পাস করার পর ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানোর জন্য জমি বিক্রি করেন। এরপর শিবনকে ডেকে বলেন, ‘তুমি যা করতে চেয়েছিলে এতদিন তোমাকে তা করতে দিইনি। কিন্তু আমি আর তোমাকে বাধা দেব না। জমি বেঁচে তোমার ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সের খরচ জোগাব।’

বেছে বেছে বাড়ির সবচেয়ে কাছের কলেজেই তাকে ভর্তি করিয়ে দেন বাবা। যাতে কলেজে ছুটির পরই ছেলে তাড়াতাড়ি বাড়ি গিয়ে ক্ষেতে কাজ করতে পারেন।

১৯৮২ সালে বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স থেকে এরোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা শেষ করেন শিবন। ওই বছরই ইসরো’র পিএসএলভি তৈরির প্রজেক্টে যুক্ত হন। তারপর আর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তরতর করে এগিয়ে গেছে তার ক্যারিয়ার। তিনি ইসরোর লিকুইড প্রপালশন সিস্টেম সেন্টারের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন ২০১৪ সালে। আর মহাকাশ গবেষণা সংস্থার কর্তৃত্ব হাতে পান গত বছর। এরপরই হাতে নেন ভারতের চন্দ্র অভিযান প্রকল্প।

চন্দ্রযান ২-এর মতো চ্যালেঞ্জিং প্রকল্পে আশানুরূপ ফল না মেলায় ভেঙে পড়েছিলেন ইসরোর চেয়ারম্যান বিজ্ঞানী শিবন-ও। শনিবার প্রধানমন্ত্রী মোদিকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তখন ভেঙে পড়া সিভনকে সামলে নেন মোদি।

পূর্বকোণ/ তাসফিয়া

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট