চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সাইবার পরিসরে আপনি নিরাপদ তো?

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৫ জানুয়ারি, ২০২১ | ৬:১১ অপরাহ্ণ

সোশ্যাল মিডিয়ায় ফেক প্রোফাইল খুলে নিজেদের নাম পরিচয় বদলে নানা ধরনের প্রতারণা বা অপরাধ করছেন অনেকেই। বন্ধুর ছদ্মবেশে এসব ব্যক্তিরা বিভিন্ন মানুষের ফ্রেন্ডলিস্টে ঢুকে পড়ে বিভিন্ন ছবি ট্যাগ করে, নেতিবাচক কমেন্ট করে ও ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিয়ে সহজেই তাদের সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ণ এবং তাদেরকে বিভিন্নভাবে ক্ষতির মুখে ফেলে দিচ্ছেন।

সম্প্রতি, সোশ্যাল মিডিয়ায় এমনই এক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছেন আফরিন (ছদ্মনাম)। একদিন হঠাৎ করে তার ফেসবুকে রাসেল (ছদ্মনাম) নামের একজন ছেলের আইডি থেকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসে। আফরিন রিকোয়েস্টটি একসেপ্ট করে। এরপর বেশ কিছুদিন তারা মেসে্ঞ্জারে বার্তা চালাচালি করে। এরই মধ্যে হুট করে আফরিন দেখতে পান তার ইনবক্সে রাসেলের আইডি থেকে বেশ কিছু অশালীন ছবি পাঠানো হয়েছে। ছবিগুলো দেখে আফরিন হতভম্ব হয়ে যান।

সোশ্যাল মিডিয়ায় এ ধরনের ঘটনা অহরহ ঘটছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীদের ৭৯ শতাংশের বেশি অনলাইনে কখনও না কখনও বিভিন্নভাবে হয়রানি ও বুলিংয়ের শিকার হয়েছেন, যার মধ্যে প্রায় ৫৩ শতাংশ নারী। সোশ্যাল মিডিয়া সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে তারা এ সমস্যার মুখোমুখি হয়ে থাকেন। বিশেষ করে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়া প্রোফাইল শনাক্তকরণের অভাবে এ ধরণের বিপত্তি বেশিই ঘটে। তবে, একটু সচেতন থাকলেই এ পরিস্থিতি এড়ানো যায়।

বেশ কিছু বিষয়ে নজর দিলে খুব সহজেই ফেক প্রোফাইল শনাক্ত করা যেতে পারে। যেমন, সাধারণভাবে ফেক প্রোফাইলের প্রোফাইল পিকচারে নিজস্ব ছবি থাকে না, তাই সেগুলোকে সন্দেহের চোখে দেখা যেতে পারে, টাইমলাইনে গিয়ে তার পোস্টগুলো খেয়াল করা যেতে পারে এবং তিনি কী ধরনের কমেন্ট করছেন সেটাও লক্ষ্য রাখা যেতে পারে।

অনলাইনে দায়িত্বশীল আচরণ আমাদের ডিজিটাল ভবিষ্যৎ নিরাপদ করে তুলতে সহায়তা করতে পারে। এ লক্ষ্যেই গ্রামীণফোন পুনরায় তাদের অনলাইন সচেতনতা বিষয়ক উদ্যোগ ‘ইন্টারনেটের দুনিয়ায় জানতে হবে কোথায় আপনার থামতে হবে’ চালু করেছে। এ উদ্যোগের উদ্দেশ্য হলো সাধারণভাবে যেসব বিষয় আমাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়, তা সবার সামনে তুলে ধরা।

বর্তমানে, দেশে সাইবার অপরাধ বহুলাংশে বেড়েছে। তাই, এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন করতে এ উদ্যোগটিতে বিদ্যমান সাইবার অপরাধের পাঁচটি বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। এগুলো হলো: ভুয়া প্রোফাইল, গুজব, ব্যক্তিগত তথ্য, অনলাইন বুলিং এবং অনলাইনে হয়রানি। মানুষের সরল বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ বর্তমানে ইন্টারনেট দুনিয়ায় কেমন করে ভাইরাস ও এর ভ্যাকসিন নিয়ে গুজব ছড়াচ্ছে, ভুয়া প্রোফাইল তৈরির মাধ্যমে মানুষকে হয়রানি করছে ও বন্ধুর ছদ্মবেশে ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে এসবের চিত্রও এ উদ্যোগটিতে তুলে ধরা হয়েছে।

ডিজিটাল দুনিয়ায় ও বাস্তব দুনিয়ায় মানুষের আচরণগত পার্থক্য দেখা যায়। অনেক মানুষ অনলাইনে অনেক তথ্য সাধারণভাবেই শেয়ার করে, অথচ বাস্তব ক্ষেত্রে যেটা তারা কখনওই করে না। বাস্তব দুনিয়ায় কিছু মানুষ যে কাজগুলো করা থেকে বিরত থাকে সে কাজগুলোই কেন তারা ডিজিটাল দুনিয়ায় করে থাকে এ বিষয়টি নিয়ে এ উদ্যোগে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

গ্রামীণফোনের ফেসবুক পেজে এ উদ্যোগ নিয়ে তৈরি করা ওভিসিগুলো শেয়ার করা হলে দর্শকরা ইতিবাচকভাবে বিষয়গুলোকে গ্রহণ করেন এবং তারা এই ধরণের জনগুরুত্বপূর্ণ ও সময়পোযোগী বিষয়গুলোকে সুন্দরভাবে তুলে ধরার জন্য ভিডিওগুলোর নিচে কমেন্ট করে গ্রামীণফোনকে ধন্যবাদ জানান, পাশাপাশি নিজেদের এ নিয়ে তাদের ধারণা ও উপলব্ধির বিষয়গুলোও তুলে ধরেন।

ইন্টারনেট মানুষকে জ্ঞান আরোহণ, শিক্ষা, বিনোদন, বিপুল পরিমাণ ডাটা ব্যবহারের সুবিধা, বাক স্বাধীনতা, বিপুলসংখ্যক ভার্চুয়াল অডিয়েন্সের জন্য তথ্যভাণ্ডার এবং বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাজের জন্য তথ্য সরবরাহ করে থাকে। ইন্টারনেটের সীমাহীন জগতে সম্ভাবনা অসীম। তবে, এ অসীম সম্ভাবনার সুবিধা গ্রহণের সহজ সুযোগের পাশাপাশি অবহেলা এবং সতর্কতার অভাব আমাদের জীবনে নানা সঙ্কট তৈরি করতে পারে। তাই, আফরিনের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদের ঝুঁকি এড়াতে এবং আমাদের আশেপাশের মানুষগুলো নিয়ে নিরাপদে থাকতে প্রত্যেকের অনলাইনে করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা রাখা জরুরি।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট