চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

ইকথায়সিস ত্বকের খসখসে ভাব

ডা. প্রীতীশ বড়ুয়া

১২ ডিসেম্বর, ২০১৯ | ৩:৪০ পূর্বাহ্ণ

শীতকাল এলেই আমাদের মধ্যে কিছু কিছু চর্মরোগ বেশি পরিলক্ষিত হয়। তেমনই একটি চর্মরোগ- ইকথায়সিস। এর প্রকার নানা ধরণের হলেও আলোচনা শুধু ‘ইকথায়সিস ভালগারিস’ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। নানা প্রকার ইকথায়সিসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় অপেক্ষাকৃত কম ভয়াবহ- ইকথায়সিস ভালগারিস। রোগটি ইনহেরিটেড বা জন্মগত এবং একোয়ার্ড বা স্বোপার্জিত হতে পারে। জন্মগত ইকথায়সিস ভালগারিসে একদম ছোটবেলা থেকে লক্ষণ উপসর্গ প্রকাশ পেতে থাকে। বংশ ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়- কেউ না কেউ এতে আক্রান্ত। হাত-পা দিয়ে শুরু হলেও বয়সের সাথে সাথে সারাদেহে হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে শুরুর সাথে সাথে সারাদেহে এর লক্ষণ উপসর্গ প্রকাশ পায়। চামড়া ফাটাফাটা, খসখসে এবং মোটা হয়ে মাছের আঁইশের মতোন হয়ে যায়। অনেকসময় দেখতে খিরার খোসার মতোন লাগে। তবে শরীরের ভাঁজযুক্ত অঞ্চল স্বাভাবিক দেখা যায়। হাত পায়ের রেখাগুলো সাধারণ মানুষের চেয়ে বেশি স্পষ্ট ও প্রকট থাকে। রোগের তীব্রতায় ঘাম কমে গিয়ে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে। আক্রান্তদের মধ্যে এলার্জি জনিত রোগের প্রকোপ অথবা এলার্জির পারিবারিক ইতিহাস লক্ষ্য করা যায়। চামড়া শুকনো খসখসে থাকাতে সঙ্গত কারণে যুক্ত হয় চুলকানি। আর ফাটাফাটা ভাব ও চুলকানির কারণে নানান জীবাণুর সংক্রমণ ঘটতে পারে। একোয়ার্ড বা স্বোপার্জিত ইকথায়সিস ভালগারিসে প্রাপ্ত বয়স্করাই আক্রান্ত হয়। জন্মগত কোন জিন দায়ী থাকে না। ক্রনিক কিডনী ফেইলিউর, লিমফোমা সহ কিছু ক্যানসার, সারকোডিয়াসিস, কুষ্ঠ, এইডস এবং কিছু কিছু ঔষধের কারণে এটি হয়ে থাকে। আবার উল্টাভাবে চামড়ায় ইকথায়সিসের লক্ষণ দেখে উল্লেখিত রোগসমূহ চিহ্নিত হতে পারে। জন্মগত বা স্বোপার্জিত উভয়ক্ষেত্রে রোগের লক্ষণ উপসর্গ প্রায় একই রকম এবং নারী ও পুরুষ সমভাবে আক্রান্ত হতে পারে।

দুঃখজনক হলেও সত্যি- মাঝে মধ্যে একটু কমে আসলেও, রোগটি সম্পূর্ণ ভাবে নির্মূল সম্ভব নয়। এটিকে নিয়ন্ত্রণে বা প্রতিরোধে রাখতে হয়।
মুশকিল হলো এই সমস্ত রোগী বা তাদের আত্মীয়স্বজনের মূল চাওয়াই হয়- একেবারে নির্মূল। ফলে প্রতিরোধের উপায় সমূহে খুব একটা কর্ণপাত করে না। তারা ঘুরতে থাকে ডাক্তার থেকে ডাক্তার। যাদুটোনা, বান, বৈদ্য, নানান

অপ-চিকিৎসায় ক্ষতি ছাড়া সুফল আর আসে না। প্রতিরোধের মাধ্যমেই কেবল এটিকে আয়ত্ব রাখা যায়। খসখসে ফাটাফাটা থাকে বলে চামড়া সবসময় নরম মসৃণ ও তেলতেলে রাখতে হবে। তাই যে কোন তৈলাক্ত উপাদান যেমন- ভেসিলীন, গ্লিসারীন, অলিভ অয়েল নিয়মিত ব্যবহার করতে হবে। কতবার লাগাতে হবে অবস্থা অনুযায়ী তা নির্ভর করবে। মোটকথা বারবার লাগাতে হবে যাতে করে ত্বক সর্বদা তেলতেলে থাকে। পাশাপাশি জীবাণু সংক্রমণের হাত হতে রক্ষা পেতে মেনে চলতে হবে ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা। খাদ্যের সাথে এটির কোন যৌক্তিক সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি। ফাটাভাব মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেলে কিংবা জীবাণুর সংক্রমণ ঘটলে অবশ্যই অনুমোদিত ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট