চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

ডেঙ্গু নিধনে ডিএনসিসির ১০ দিনব্যাপী চিরুনি অভিযান
ডেঙ্গু নিধনে ডিএনসিসির ১০ দিনব্যাপী চিরুনি অভিযান

নতুন নীতিমালা করবে অধিদপ্তর

বদলাচ্ছে ডেঙ্গু চিকিৎসা

অনলাইন ডেস্ক

২২ নভেম্বর, ২০১৯ | ১০:৫৪ অপরাহ্ণ

ডেঙ্গু চিকিৎসায় সরকার প্রণীত গাইডলাইনে পরিবর্তন আসছে। বর্তমান গাইডলাইন অনুযায়ী একই হাসপাতালে সব ধরনের ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল না। সব হাসপাতালেই বয়স্ক রোগীরা চিকিৎসা পেলেও শিশু ও গর্ভবতী নারীদের চিকিৎসা মেলেনি। চিকিৎসার জন্য এই দুই শ্রেণির রোগীদের এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটতে হয়েছে। ফলে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার আক্রান্ত কম হলেও নারী ও শিশুমৃত্যু হার ছিল বেশি। এই গাইডলাইন অনুযায়ী ডেঙ্গুর ধরন বুঝে চিকিৎসাব্যবস্থায়ও কিছু ত্রুটি ছিল এ বছর। বিশেষ

করে কোন ধরনের ডেঙ্গু রোগীর জন্য কী পরিমাণ ও গতিতে ফ্লুইড (আইভি স্যালাইন) দিতে হবে, সে ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা ছিল না। ফলে চিকিৎসকরা নিজেদের মতো চিকিৎসা করতে গিয়ে রোগীদের বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এ অব্যস্থাপনা বেসরকারি হাসপাতালে ছিল বেশি। রোগীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ায় সাধারণ ডেঙ্গু হেমোরেজিক ডেঙ্গুতে রূপ নিয়েছে। এটাও ডেঙ্গুতে মৃত্যুর অন্যতম কারণ ছিল।

এ ছাড়া বর্তমান গাইডলাইনে শিশু ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় কোনো নির্দেশনাই নেই। বয়স ও ওজন অনুযায়ী কোন শিশুকে ঠিক কী পরিমাণ আইভি ফ্লুইড দিতে হবে তা বলা হয়নি। ফলে শিশু ডেঙ্গু রোগীরা সঠিক চিকিৎসা পায়নি। সূত্র: দেশ রূপান্তর।

গতকাল বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরুরি সভায় এ বছর ডেঙ্গু চিকিৎসায় এসব ত্রুটি উঠে আসে। আগামীতে ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধের উপায় কী হবে সেই পদক্ষেপ নিতে অধিদপ্তর এ সভার আয়োজন করেছিল। সভায় অধিদপ্তর, সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং দুই সিটি করপোরেশনের বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তাসহ রোগতত্ত্ব, কীটতত্ত্ব ও প্রাণিবিদ্যা বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে পরিবর্তিত ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে চিকিৎসা পরিবর্তন করে সে অনুযায়ী গাইডলাইন করার সিদ্ধান্ত হয়।

সভায় উপস্থিত ছিলেন অধিদপ্তরের এমন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জনান, সভায় এ বছর ডেঙ্গু চিকিৎসায় আইভি স্যালাইন বা ফ্লুইড ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। সেখানে বলা হয়েছে, বর্তমান গাইডলাইন অনুযায়ী ফ্লুইড ব্যবস্থাপনা সঠিক ছিল না। এছাড়া গাইডলাইনের আরও কিছু ত্রুটি আলোচনা হয়। পরে সভায় আগামী বছর ডেঙ্গু রোগের সঠিক চিকিৎসায় গাইডলাইনের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা অংশ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়। বিশেষ করে ডেঙ্গুতে মৃত্যু কমাতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসায় পরিবর্তন আসছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, গর্ভবতী মা, শিশুসহ সব রোগী যেন একটা কেন্দ্রেই (হাসপাতাল) চিকিৎসা পান, সেটা গাইডলাইনে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সব রোগীর চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা আলাদা আলাদা না করে একটা ফোল্ডারে একসাথে রাখা হবে। চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা আরও সমন্বিত করতে গাইডলাইন বদলানো হচ্ছে। তবে চিকিৎসায় কী ধরনের পরিবর্তন আসছে, তা তিনি বলেননি।

ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসায় সরকারের বর্তমান গাইডলাইনের বেশকিছু ত্রুটির কথা বলেছেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক ও রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া তিনি জানান, বর্তমান গাইডলাইন অসম্পূর্ণ। ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট ঠিক না। বিশেষ করে শিশু ডেঙ্গু রোগীর ব্যাপারে গাইডলাইনে কিছুই নেই। অথচ শিশুদের শরীরে ফ্লুইড দেয়া খুব কঠিন। ওজন হিসেব করে ড্রপ বাই ড্রপ দিতে হয়। এক ধরনের চিকন সুচ আছে যেটা দিয়ে দিলে ফ্লুইডের ফোঁটা বড় হয়ে পড়ে। এবার ডেঙ্গুতে মোট আক্রান্তের ৩০ শতাংশই ছিল শিশু। তাছাড়া এবারের গাইডলাইন তাৎক্ষণিকভাবে তড়িঘড়ি করে তৈরি। সেখানে ডেঙ্গুর ধরন অনুযায়ী সঠিক চিকিৎসা নির্দেশনা নেই। সুতরাং আগামী ডেঙ্গু মৌসুমের জন্য এখনই সঠিক গাইডলাইন তৈরি করা উচিত। সভায় এ বছর ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ ও ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসায় বেশকিছু ত্রুটির কথাও উঠে আসে।

এ ব্যাপারে অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, এবার ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদের প্রস্তুতি ছিল না। মশক নিধন হয়নি। শুধু মশা না, মশার ডিম ও বাচ্চা ধ্বংস করতে হয়। সে ব্যাপারে কোনো প্রস্তুতিই ছিল না।

ডেঙ্গুতে মৃত্যুর প্রসঙ্গে এই কর্মকর্তা জানান, রোগীরা হাসপাতালে আসতে দেরি করেছে। অথবা সঠিক সময়ে চিকিৎসা পায়নি। ফলে হেমোরেজিকে (রক্তক্ষরণ) আক্রান্ত হয়েছে। সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ কম থাকায় অন্য হাসপাতালে ছুটতে হয়েছে। এটাও মৃত্যুর কারণ।

সভায় আগামী বছর ডেঙ্গু প্রতিরোধে কিছু পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা ভালো ছিল। কিন্তু মশা নিধন কার্যক্রম ছিল না। ঢাকার বাইরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নেই বললেই চলে। সেখানে এখনো ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। তার মানে এডিস মশা আছে। নিধন হয়নি। আগামী বছর ডেঙ্গু প্রতিরোধ করতে হলে এখন থেকেই ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সমন্বিতভাবে মশা নিধন করতে হবে।

সভায় উপস্থিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার জানান, গ্রামাঞ্চলের মশা নিধনে বেশি নজর দিতে হবে। সেখানে মশা নিধনের কোনো ব্যবস্থা নেই। বিশেষ করে গ্রামে বংশবিস্তার করা এডিস এলবোপিকটাস নিধনে জোর দিতে হবে। শহরের এডিস ইজিপ্টাই ঘরের মধ্যে থাকে। কিন্তু এলবোপিকটাস ঘরের বাইরের পানিতে থাকে। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি কেন্দ্র চালু করতে হবে। এ কেন্দ্র এখন থেকেই কোন ওষুধ ব্যবহার করা হবে, তা ঠিক করবে। এখন থেকে বছরজুড়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কাজ করতে হবে।

ডেঙ্গুতে ১২১ জনের মৃত্যু : ডেঙ্গুতে আরও ৯ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ১২১ জনে। গতকাল বৃহস্পতিবার অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) ডেথ রিভিউ কমিটি সর্বশেষ মোট ২৬৪ জন সন্দেহভাজন ডেঙ্গুতে মৃত মানুষের মধ্যে ১৯৩টি মৃত্যুর কারণ পর্যালোচনা করে। এর মধ্যে ১২১ জনের ডেঙ্গুতে মৃত্যু নিশ্চিত করে। সরকারি হিসেবে এ বছর গতকাল পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মোট আক্রান্ত হয়েছে ৯৯ হাজার ২৬৩ জন।

পূর্বকোণ-রাশেদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট