চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

চর্মরোগ : পিটেড কেরাটোলাইসিস

ডা. প্রীতীশ বড়ুয়া

৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ | ১:২৯ পূর্বাহ্ণ

আমাদের দেশে বর্ষাকালে কিংবা ভেজা ভেজা থাকলে পায়ের তলায় শীলপাটা খোদাই এর মত কিছু চর্মচিত্র দেখা যায়। এই চর্মরোগটির ডাক্তারী নাম পিটেড কেরাটোলাইসিস। রোগটির জন্য দায়ী জীবাণু হচ্ছে কিছু ব্যাকটেরিয়া। যার মধ্যে রয়েছে, করনিব্যাকটেরিয়া, ডারমাটোফিলাস কনংগোলেনসিস, কাইটো-কক্কাস সেডেনটেরিয়াস, একটিনোমাসেস এবং স্টেপটোমাইসেস। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো আদ্র পরিবেশে চামড়ায় বংশবিস্তার ঘটায় এবং প্রোটিয়েজ নামক একপ্রকার রস তৈরী করে। এই রসই চামড়ার উপরিতলে ছোট ছোট গর্ত সৃষ্টি করে- যা দেখতে অনেকটা খোদাই করা শীলপাটার মত। আবার এই ব্যাকটেরিয়ারা কিছু সালফার যৌগ উৎপন্ন করে রোগটিকে দুর্গন্ধযুক্ত করে তোলে।
পিটেড কেরাটোলাইসিস রোগটিতে মহিলাদের তুলনায় পুরুষরা বেশি আক্রান্ত হন। কৃষিজীবি, খেলোয়াড়, নাবিক, জেলে, শিল্প-শ্রমিক, দমকল কর্মী, মোদ্দাকথায় যাদের পায়ের তলা ভেজা বা দীর্ঘক্ষণ আবদ্ধ থাকে তাদেরকেই বেশি আক্রমণ করে। এছাড়া অনান্য অণুঘটকের মধ্যে রয়েছে, পা হাতের তালু ঘামা, অতিরিক্ত মোটা চামড়া, বেশি বয়স এবং ডায়াবেটিস সহ প্রতিরোধী ক্ষমতা কমে যেতে পারে এমন সব রোগ। সাধারণভাবে এটি পায়ের তলার অগ্রভাগে, গোড়ালিতে ও আঙুলের তলে বেশি দেখা যায়।

তবে সময় সময় হাতের তালুতেও দেখা দিতে পারে। প্রথম প্রথম এটি ছোট ছোট গর্ত বা শীলপাটার মত খোদাই কর্ম দিয়ে দিয়ে শুরু হলেও পরবর্তীতে কিছু গর্ত মিলে বড় আকার ধারণ করতে পারে। গর্তগুলো এক একটা গ্রুপ নিয়ে হতে পারে এবং আক্রান্ত স্থান থাকে একটু সাদাটে ও স্যাঁতস্যাঁতে। চুলকানি খুব একটা না থাকলেও বিরক্তিকর বাজে গন্ধ উৎপন্ন হয়। মাঝেমধ্যে কিছু সামান্য জটিলতা ছাড়া তেমন একটা ক্ষতি করে না বললেই চলে। সাধারণভাবে চোখে দেখেই রোগটি নির্ণয় করা যায়। কিছু ক্ষেত্রে মাইক্রোসকোপিক ও উডস ল্যাম্প পরীক্ষা করা যেতে পারে। আর ছত্রাক রোগ থেকে আলাদা করার জন্য স্কিন স্ক্র্যাপিং প্রয়োজন হতে পারে।

এই চর্মরোগটির প্রতিরোধক ও প্রতিকারক উভয় চিকিৎসার মূল কথা হচ্ছে, ভেজা ভাব বা আর্দ্রতা দূর করা। পাশাপাশি অনেকক্ষণ বন্ধ জুতা না পরা, একই মোজার বারবার ব্যবহার থেকে দূরে থাকা, পা-হাত সাবান বা এন্টিসেপটিক দিয়ে পরিষ্কার করা ও ঘাম-মুক্ত রাখা ইত্যাদি। এছাড়াও নিয়ন্ত্রণ যোগ্য কিছু অণুঘটক আয়ত্বে রাখা দরকার। প্রতিকারক চিকিৎসার জন্য ইরেথ্রোমাইসিন, ক্লিনডামাইসিন, মিউপিউরিসিন, ফুসিডিক এসিড বা বেনজয়েল পার-অক্সাইড লোশন বা মলম লাগানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। কিছু ক্ষেত্রে মুখে খাবার ইরেথ্রোমাইসিন ব্যবহৃত হতে পারে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট