চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

‘ন্যাশ’ বা ‘ফ্যাটি লিভার’ প্রতিরোধের এখনই সময়

ডা. আবদুল্লাহ আল মাহমুদ

৭ জুন, ২০২৩ | ৮:২৭ অপরাহ্ণ

‘ন্যাশ’ কি?

 

‘ফ্যাটি লিভার’ হলো লিভারে অতিরিক্তি চর্বি জমা হওয়া। লিভারের মোট আয়তনের শতকরা ৫ ভাগের বেশি চর্বি জমা হলে সেটি রোগ এবং এই রোগের নাম ‘ফ্যাটি লিভার’। অতিরিক্ত চর্বি যখন লিভারে প্রদাহ বা Inflammation তৈরি করে তাকে ‘ন্যাশ’ বলে।

ঝুঁকিতে কারা?

 

যে কোনো বয়সের নারী-পুরুষ এমনকি শিশু-কিশোর এবং গর্ভবতী মাও আক্রান্ত হতে পারে। ফ্যাটি লিভারে অন্যতম প্রধান কারণ খাদ্যাভ্যাস ও লাইফ স্টাইল। স্থূলতা বা মোটা হওয়া, যথেষ্ট শারীরিক পরিশ্রম না করা, ক্রুটিপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস এই রোগের প্রধান ঝুঁকি। আমাদের দেশে ইদানিং খুবই জনপ্রিয় ‘ফাস্ট ফুড’ কালচার এ দেশে ফ্যাটি লিভারের বাড়তি প্রাদুর্ভাবের বড় কারণ। এছাড়া যারা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হাইপোথাইরয়েডিজম, রক্ত অতিরিক্ত চর্বি বা ডিজলিপিডিমিয়া, হেপাটাইটিস সি এবং মহিলাদের পলিসিস্টিক ওভারিতে ভুগছেন তারাও ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হতে পারেন।

 

ব্যাপকতা:

 

ফ্যাটি লিভার বর্তমান বিশ্বের এক নীরব মহামারী। বিশ্বের শতকরা প্রায় ২৫-৩০ ভাগ মানুষ অর্থাৎ প্রতি ৪ জনে ১ জন ফ্যাটি লিভারে ভুগছেন। বর্তমানে প্রায় ১২ কোটি মানুষ ফ্যাটি লিভারে ভুগছেন এবং ২০৩০ সাল নাগাদ এই সংখ্যাটা হবে প্রায় ৩৬ কোটি। বাংলাদেশে আক্রান্ত সর্বোচ্চ ৩৪%। বর্তমান বিশ্বে লিভার সিরোসিস এবং লিভার ক্যান্সারের সবচেয়ে বড় কারণ হল ফ্যাটি লিভার বা ন্যাশ।

 

কিভাবে বুঝবেন?

 

ফ্যাটি লিভারের রোগীদের প্রায়ই কোন লক্ষণ থাকে না। এদের কেউ কেউ পেটের ডান পাশে ওপরের দিকে ব্যথা, ভার ভার ভাব বা অস্বস্তি, দুর্বলতা কিংবা খুব অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পরার কথা বলেন।

 

জটিলতা সমূহ:

 

যারা ফ্যাটি লিভারে ভুগছেন তাদের ২-৬% মানুষের ‘ন্যাশ’ হতে পারে। ‘ন্যাশ’ রোগীদের মধ্যে প্রায় ৩০% পরবর্তী সময়ে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হতে পারে। আর তাদের মধ্যে কারও কারও এমন কি লিভার ক্যান্সারও হতে পারে। তবে এটি লিভারের রোগ হওয়া সত্ত্বেও বেশিরভাগ রোগি মারা যান হৃদরোগে, স্ট্রোক কিংবা কিডনি সংক্রান্ত জটিলতায়।

 

রোগ নির্ণয়:

 

রক্তের লিভার ফাংশন টেস্ট এবং আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষার মাধ্যমে এ রোগের উপস্হিতি বোঝা যায়। কারো ক্ষেত্রে অন্যান্য রক্ত পরীক্ষা ও ফাইব্রোস্ক্যান পরীক্ষা করা লাগতে পারে।

 

চিকিৎসা:

 

এখনো এজন্য শতভাগ কার্যকর কোনো ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি। অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলা, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন এবং শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়ামই এ রোগের মূল চিকিৎসা। পাশাপাশি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ডিজলিপিডেমিয়া এবং হরমোন রোগ থাকলে সেগুলোর চিকিৎসা করতে হবে। ফ্যাটিলিভারের চিকিৎসায় সর্বশেষ আশাবাদি ঔষধটি হলো ওবিটাকলিক অ্যাসিড। যা লিভারের চর্বি এবং সম্ভবত স্থায়ী ক্ষত বা ফাইব্রোসিস কমায়।

 

প্রতিরোধে করণীয়:

 

আতংকিত বা উদাসীন না হয়ে লিভারের এই নীরব মহামারী প্রতিরোধে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে —

 

১) অতিরিক্ত শর্করা জাতীয় খাবার (ভাত/রুটি), চিনি যুক্ত খাবার ও পানীয় পরিহার করুন।
২) ফাস্ট ফুড, জাঙ্ক ফুড ও তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
৩) ওজন ও স্থূলতাকে নিয়ন্ত্রণ করুন।
৪) প্রচুর পরিমাণে আঁশযুক্ত শাকসবজি ও তাজা ফলমূল খান।
৫) সপ্তাহে ২-৩ দিন মাছ খান।
৬) প্রতিদিন শরীর চর্চার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
৭) কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন অধিক ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন এবং খাবার সময় এগুলো দেখা থেকে বিরত থাকুন।
৮) পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন।

 

লেখক: লিভার বিশেষজ্ঞ, সহকারী অধ্যাপক, লিভার বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ।

 

পূর্বকোণ/জেইউ/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট