চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪

চর্মরোগ : ইরাইথ্রাসমা ডা. প্রীতীশ বড়ুয়া

২৯ আগস্ট, ২০১৯ | ১:০৮ পূর্বাহ্ণ

ইরাইথ্রাসমা প্রায়ই দেখা যায় এমন একটি চর্মরোগ। এটি প্রধানত গ্রীষ্মম-লীয় রোগ, তাই আমাদের দেশেও এর প্রকোপ থাকাটাই স্বাভাবিক। করনিব্যাকটেরিয়াম মিনুটিসিয়াম নামক এক প্রকার ব্যাকটেরিয়া হচ্ছে এই রোগের জন্য দায়ী জীবাণু। ব্যাকটেরিয়াটি প্যাথোলজিক্যাল ভাষায় গ্রাম পজেটিভ, নন স্পোর ফরমিং, এরোবিক ব্যাসিলাই বলা হয়ে থাকে। আগেই বলা হয়েছে এটি প্রধানত গরম কালের চর্মরোগ। তাই গরমে, অতিরিক্ত ঘামে, অপরিচ্ছন্নতায় জীবাণুটি আমাদের শরীরে সুযোগ সন্ধানী আক্রমণ করে রোগ ঘটিয়ে থাকে। আবার অতিরিক্ত শারীরিক স্থূলতায়, বয়স বাড়ার পাশাপাশি, ত্বকের গাঢ় রঙে কিংবা শরীরের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থার ঘাটতিতে যেমন, ডায়াবেটিস, ক্যানসার ইত্যাদির কারণেও চর্মরোগটি দেখা দিতে পারে। নারী পুরুষ সবাই সমান ভাবে এতে আক্রান্ত হতে পারেন। তবে এদেশে পুরুষদের মাঝে বেশি দেখা যায়।

বগলের তলে, স্তনের নীচে, উরুসন্ধিতে, পায়ের আঙ্গুলের মধ্যস্থানে এই চর্মরোগটি বেশি আক্রমণ করলেও মোদ্দাকথায় গরম ঘাম যুক্ত শরীরের যে কোন স্থানে এটি দেখা দিতে পারে। সাদা চামড়ায় গোলাপি রঙের হলেও আমাদের মত বাদামি চামড়ায় এটি খয়েরি বা কালচে রঙের চর্ম চিহ্ন দিয়ে শুরু হয় এবং বিস্তার লাভ করে। চর্ম চিহ্নের ধারগুলি বেশ সহজেই বোঝা যায় অর্থাৎ স্বাভাবিক ত্বক থেকে আলাদা থাকে। উপরিতলে অনেক সময় একটু খোসাখোসা ও হালকা ফাটা ভাব থাকতে পারে। মাঝে মধ্যে খুব সামান্য চুলকানি থাকে যা গরমে বাড়ে। ইরেইথ্রাসমাকে নিরীহ চর্মরোগই বলা যায়। এর থেকে ক্ষতির সম্ভবনা নেই বললেই চলে। তবে খুব সামান্য ক্ষেত্রে ত্বকের দাগ স্থায়ী বা পুরু হয়ে যেতে পারে, সেই সাথে থাকতে পারে করনিব্যাকটেরিয়াম সহ অনান্য জীবাণুর তীব্র সংক্রমণ। রোগ নির্ণয় এর বেলায় তেমন একটা ঝামেলা হয় না। খালি চোখে দেখেই সাধারণত রোগটি বোঝা যায়। তবে চিকিৎসকদের খেয়াল রাখতে হয় কেননা অনেক সময় এই রোগটির সাথে ইন্টারট্রিগো বা কিছু ছত্রাক জনিত চর্মরোগের মিল বা সহবস্থান থাকতে পারে। রোগ নির্ণয়ের জন্য সামান্য কিছু ক্ষেত্রে উডস ল্যাম্প, স্কিন সোয়াব বা স্ক্র্যাপ পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে।

প্রতিরোধক এবং প্রতিকারক চিকিৎসার মূল মন্ত্র একই। তা হচ্ছে- ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি গরম ঘাম এড়িয়ে চলা। এছাড়াও আয়ত্তে থাকা অনান্য অনুঘটকগুলি যেমন- ডায়াবেটিস ও শারীরিক স্থূলতা নিয়ন্ত্রণ খুবই জরুরি। এই ব্যবস্থাগুলি গ্রহণ করলে রোগ ঔষধ ছাড়াই ভাল হয়ে যেতে পারে। প্রতিকারক চিকিৎসায় ত্বকে লাগানোর জন্য ফুসিডিক এসিড, ক্লিনডামাইসিন সহ কিছু এন্টিবায়টিক দেওয়া হয়ে থাকে। তীব্র অবস্থায় মুখে খাবার অ্যান্টিবায়টিকও যোগ করা যেতে পারে।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট