রুবেলা বা রুবিওলা একটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে ও তীব্র ভাইরাসঘটিত রোগ। এ রোগের জন্য মোরবিলি ভাইরাস (morbillivirus) দায়ী, যা এক ধরনের আরএনএ প্যারামিক্সো ভাইরাস। এ রোগের লক্ষণ প্রকাশের আগে আক্রান্তকারীর দেহে ১০ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত জীবাণু সুপ্তাবস্থায় থাকে। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে এ সময় আরো বেশি হতে পারে।
ভাইরাসটির বৈজ্ঞানিক নাম Measles morbillivirus। ভাইরাসটি প্রথমে শ্বাসনালিতে সংক্রমিত হয়, এরপর রক্তের মাধ্যমে দেহের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে।
আমাদের দেশে এই রোগ হাম (Measles) নামে বেশি পরিচিত। এটি একটি মারাত্মক সংক্রামক ব্যাধি রোগ। তৃতীয় বিশ্বে এ রোগ শিশুদের ব্যাপক ভোগান্তি এবং মৃত্যুর কারণ। সপ্তম শতাব্দী থেকে এ রোগের কথা জানা গেছে। তবে বাগদাদভিত্তিক পারসি চিকিৎসক আবু বকর মুহাম্মদ ইবন জাকারিয়া আল রাজি সর্বপ্রথম খ্রিস্টীয় নবম শতকে রুবেলা রোগটির বিস্তারিত লিখিত বর্ণনা দেন। অনুন্নত দেশে এ রোগে প্রতিবছর প্রায় ১৫ লাখ শিশু মারা যায়।
ঠিকমতো রুবেলা রোগের চিকিৎসা না করা হলে রোগী নানা জটিলতায় পড়তে পারে। তবে এই রোগ সম্পূর্ণ প্রতিরোধযোগ্য। শিশুরাই এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয় বলে এক বছর থেকে ১৮ মাস বয়সী শিশুদের এর ভ্যাকসিন দেওয়া হয়।
রুবেলা হলে প্রথমে জ্বর হয় এবং শরীর ম্যাজ ম্যাজ করে বা হালকা ব্যথা লাগে। প্রথম দু-এক দিন অনেক তীব্র জ্বরও হতে পারে। চোখ-মুখ ফুলে যেতে পারে। চোখ লাল হয় এবং চোখ ও নাক দিয়ে পানি পড়ে, হাঁচি হয়। শরীরে র্যাশ বা ছোট ছোট লালচে গুটি/ফুসকুড়ি দেখা দেয় এবং দ্রুতই তা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বিশেষত শিশুরা কিছুই খেতে চায় না এবং ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়ে।
রুবেলা হলে রোগীকে পুরোপুরি বিশ্রামে থাকতে হয়। এ সময় বাসা থেকে বের না হওয়াই ভালো। অবশ্যই প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। আর স্বাভাবিক খাবার দাবারের পাশাপাশি রোগীকে বেশি বেশি তরল খাবারও দিতে হবে। সাধারণত তিন দিনের চিকিৎসায়ই এ রোগের জ্বর ভালো হয় এবং সাত দিনের মধ্যেই আক্রান্ত রোগী পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠে।
রুবেলা প্রতিরোধযোগ্য একটি ব্যাধি। এর বিরুদ্ধে অত্যন্ত কার্যকর টিকা রয়েছে। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির অধীনে অন্যান্য রোগের পাশাপাশি রুবেলার বিরুদ্ধেও টিকা দেওয়া হয়।
পূর্বকোণ/সাফা/পারভেজ