চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

ঈদে সুস্থ থাকুন পুষ্টিবিদ হাসিনা আক্তার লিপি

১১ আগস্ট, ২০১৯ | ১:৫৯ পূর্বাহ্ণ

কোরবানির মাংসের চর্বি ছেড়ে, কম তেলে রান্নার পর পরিমিত খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন পুষ্টিবিদ হাসিনা আক্তার লিপি। বয়সের কোটা যাদের ৪০ পেরিয়েছে তাদের প্রত্যেককে স্বাস্থ্য সচেতনতার আহ্বান জানিয়ে এ পুষ্টিবিদ বলেন, খাদ্য তালিকায় কোন মাংস কী পরিমাণে রাখা যাবে কিংবা কতটুকু চর্বিযুক্ত মাংস খাওয়া যাবে তা মানতে হবে। আর সুস্থ থাকতে চাইলে কোন চর্বিযুক্ত মাংসই খাওয়া যাবে না। তিনি বলেন, কোনবানির ঈদে প্রত্যেকের ঘরেই মাংস একটু বেশি থাকে। ঘরে মাংস আছে সেজন্য প্রতিবেলায় বা প্রতিদিন মাংস খেতে হবে-এটা ঠিক নয়। সচেতন হতে হবে, সাবধান হতে হবে। সাবধান মানে কোরবানির মাংস খাওয়া নিষেধ নয়। সাবধান মানে সচেতন হওয়া। তিনি বলেন, প্রতিবেলায় আগে ২-৪ পিস খেতেন। হঠাৎ যদি অতিরিক্ত মাংস খান, তাহলে কি আপনার পাকস্থলী সহ্য করতে পারবে? নিশ্চয়ই না। দেখা দিবে অসুস্থতা। বলা যায়, সুস্থ মানুষও অতিরিক্ত মাংস খেয়ে সহ্য করতে পারবে না। আর যারা আগে থেকেই অসুস্থ। কোন না কোন রোগে ভুগছেন। বিশেষ করে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি জটিলতা কিংবা রক্তে ইউরিক এসিড বৃদ্ধির মত রোগে আক্রান্ত তারা আরো বহুগুণ সচেতন থাকতে হবে। আমার মতে, প্রতিবেলায় ২ পিস মাংস খাবেন। তবে সেই মাংসে যেন কোন সাদা চর্বি না থাকে। অর্থাৎ মাংসের গায়ে যে সাদা চর্বি থাকে তা সম্পূর্ণ ফেলে দিতে হবে। স্বাদের অজুহাতেও ওই সাদা চর্বি খাওয়া যাবে না। মনে রাখতে হবে ওই সাদা চর্বিটা আপনার রক্তনালীতে গিয়ে জমে যাবে। ঠিক নদীতে যেমন বালি জমে চর পড়ে ওই রকম। রক্তনালীতে যদি চর্বি জমে চর পড়ে তবে রক্ত সঞ্চালনে বাধা পাবে। এরপর হার্টে রক্ত যদি ঠিকমত প্রবাহিত না হয় তখন হার্টের সমস্যা দেখা দিবে। অথবা ব্লক হয়ে যাবে। তাই মনে রাখতে হবে, যে চর্বি মাংসে স্বাদ বাড়ায় তা কিন্তু সরাসরি আপনার স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে। পশুর ওই চর্বিকে মানুষের শরীরের জন্য এককথায় বিষও বলা যেতে পারে। তাই জেনে শুনে এমন বিষ না খাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন ওই পুষ্টিবিদ।
পুষ্টিবিদ হলেও রসুইঘরেও কম যান না। কোরবানির মাংস রান্নার কিছু পদ্ধতিও বাতলে দিয়েছেন তিনি। তার পরামর্শ হলো-চর্বি ছাড়া মাংস খাবেন। রান্না করা মাংস ঠা-া হলে উপরে হলুদ রঙের আবরণ পরে। সেটা তুলে ফেলে দিতে হবে। অতঃপর পুনরায় গরম করে মাংস খাওয়ার উপযোগী করুন। তাছাড়া মাংসের টিকিয়া, কাবাব, স্পাইসি, মিটরোল, কোপ্তা ইত্যাদি চর্বি ছাড়া তৈরি করুন। হার্টের রোগী, উচ্চ রক্তচাপ বিশেষ করে ৪০ বছরের উপরে যাদের বয়স তারা মগজ ও কলিজা খাওয়া একেবারেই নিষেধ।
মাংস ভালভাবে সিদ্ধ করে খেতে হবে। সঠিক নিয়মে সংরক্ষণ করতে হবে। মাংস ফ্রিজিং করার ক্ষেত্রে একবার ধুয়ে রক্ত মুক্ত করে পরিষ্কার প্যাকেটে মুড়ে গুছিয়ে রাখতে হবে। যারা জ¦াল দিয়ে রাখতে চান, তারা ভালমত জ¦াল দিয়ে রাখুন।
অন্যান্য সময়ের চেয়ে কোরবানির ঈদে বেশি মাংস খাওয়া হয় বলে অনেকেই মুটিয়ে যেতে পারেন। সেই ক্ষেত্রে ব্যায়ামের অভ্যাস আজই শুরু করার পরামর্শ দিচ্ছি। তিনি বলেন, নিয়মিত ৩০-৪০ মিনিট হাঁটুন। ঈদের সময় রাস্তা এমনিতেই ফাঁকা থাকে। তাই চাইলে রাস্তায় গিয়ে হাঁটলে খুব ভাল হয়। মুক্ত হাওয়ায় মনটাও ভাল হয়ে যাবে। আর রাস্তায় যেতে না পারলে বাড়ির উঠানে, ছাদে অথবা বারান্দায় হাঁটুন। দেখবেন শরীর-মন দুটোই ঝরঝরে লাগছে-বলেন এ পুষ্টিবিদ।

একদিনের খাদ্য তালিকা:
সকাল : চালের রুটি ৩টা অথবা আটার রুটি ৩টা অথবা পাউরুটি ৩ পিস পরেটা ২পিচ
মাংস-২০০ গ্রামের মতো অর্থাৎ ৬ পিস-৮ পিচ
সবজি অবশ্যই কম তেলে রান্না করে খেতে হবে।

সকাল ১১টায় বেশি করে কাঁচা ফল (পেয়ারা, আমড়া, আমলকি, জামরুল, জাম্বুরা, লেবু)

দুপুর প্রথমেই ডাল (পাতলা) ১ বাটি
ভাত ৩ কাপ
মাছ অথবা মুরগীর মাংস ১পিস অথবা গরুর মাংস ২০০ গ্রামের মতো
শাক+সবজি+সালাদ
টকদই

বিকেল লাচ্ছি অথবা স্যুপ
রাতে প্রথমেই ডাল (পাতলা) ১ বাটি
ভাত ৩ কাপ
মাছ ১ পিস অথবা মুরগীর মাংস ২০০ গ্রামের মতো
শাক+সবজি+সালাদ
টকদই

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট