চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

এক্রোডারমাটাইটিস এন্টেরোপেথিকা

১৫ জুলাই, ২০২২ | ১:১০ অপরাহ্ণ

এক্রোডারমাটাইটিস এন্টেরোপেথিকা রোগটি আজকাল খুব একটা পাওয়া যায় না। ভয়াবহ দেখতে হলেও চিকিৎসায় ভাল হয়ে যায়। শরীরের পেরি-এক্রাল বা হাত-পায়ের তালু, আঙুলসহ পেরি-অরিফিসাল বা নাক, মুখ, কান ও পায়খানার রাস্তার আশেপাশে এই চর্মরোগটি দেখা যায়। সাথে থাকে ডাইরিয়া ও চুল পড়ে যাওয়া।

রোগটির মূল কারণ আমাদের শরীরে জিংক নামক একটি খনিজের ঘাটতি। রোগটিকে কয়েক ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রাথমিক বা প্রাইমারী এক্রোডারমাটাইটিস এন্টেরোপেথিকা বংশগত বা জন্মগত, তাই সদ্য-ভূমিষ্ট নবজাতক ও অল্প বয়সী শিশুদের মধ্যেই এটি দেখা যায়। অটোজোমাল রিসেসিভ ত্রুটিপূর্ণ দুটি জিনের কারণে এখানে জিংক ঘাটতি প্রকট বা হ্রাসকৃত থাকে। একোয়ার্ড এক্রোডারমাটাইটিস এন্টেরোপেথিকা বংশগত নয়, অর্জিত। তাই কৈশোর থেকে বয়স্ক সবাই আক্রান্ত হতে পারে।

মূলত খাদ্যে অপর্যাপ্ততা, অন্ত্রে ম্যাল-এবসর্পশান, প্রস্রাব দিয়ে বের হয়ে যাওয়া, উচ্চ ক্যাটাবলিজম, নিচু মাত্রার এলবুলিন এর কারণে এখানে জিংক ঘাটতি দেখা দেয়। আরেক প্রকার রয়েছে যা কিনা দেখতে একই রকম হলেও ছদ্মবেশী এবং মূলত জিংক ঘাটতি জনিত নয়।

এক্রোডারমাটাইটিস এন্টেরোপেথিকা যেকোনো প্রকারের হোক না কেনো ত্বকে লক্ষণ-উপসর্গ প্রায় একই। প্রাথমিক এক্রোডারমাটাইটিস এন্টেরোপেথিকায় যা একটু প্রকট হতে পারে। দেখতে অনেকটা ডারমাটাইটিসের মতন রোগটিকে আক্রান্ত অঞ্চল স্বাভাবিক ত্বক থেকে সহজেই আলাদা করা যায়। পেরি-অরিফিসাল অঞ্চলে এটি ঘোড়ার ক্ষুর বা ইংরেজি ইউ আকার ধারণ করে। একজিমা বা সোরিয়াসিস চাকের মত বিচি, ফুসকুড়ি, ফোসকা, পুঁজসহ ঘায়ে পরিণত হতে পারে। এক্রাল অঞ্চলেও একই অবস্থা দেখা যায়। অনেক সময় জিবহায়, মুখে বা ঠোঁটের কোণে ঘা দিয়ে অগ্রিম জানান দিতে পারে। ত্বকের এই অবস্থায় অনান্য জীবাণুর সহাবস্থান ঘটতে পারে এবং ঘা সহজে শুকায় না। মাথা, ভ্রু, চোখের পাতার চুল ঝরে যায়। নখের কোণে ঘা দেখা দেয় এবং ভংগুর হয়ে পড়ে। ত্বকের পাশাপাশি শরীরের অনান্য তন্ত্রে নানান সমস্যা দেখা যায়। যেমন- ক্ষুধামন্দা, স্বাদকমাসহ ডায়রিয়া, চোখের পাতায় ঘা ও আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা, খিটেখিটে মেজাজসহ নানান স্নায়ুবিক সমস্যা, হাইপোগোনাডিজম, ইত্যাদি।

চোখে দেখে ও ইতিহাস নিয়ে রোগ নির্ণয় করা গেলেও নিশ্চিত হবার কিছু পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে। যেমন- রক্তে জিংক, এলকেলাইন ফসফেটেজ, এলবুমিন ইত্যাদিসহ পূর্ণাঙ্গ রক্ত পরীক্ষা। প্রাথমিক এক্রোডারমাটাইটিস এন্টেরোপেথিকা জন্মগত বিধায় প্রতিরোধযোগ্য নয়। তবে একোয়ার্ড এর ক্ষেত্রে জিংক ঘাটতি যাতে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রতিকারক চিকিৎসার প্রধান অস্ত্র হচ্ছে মুখে খাবার জিংক। অবস্থাভেদে মাত্রা বাড়ানো কমানো যেতে পারে। তবে তা হতে হবে রোগীর জন্য সহনশীল এবং ক্ষতিহীন। ডারমাটাইটিস চিকিৎসার পাশাপাশি অনান্য জীবাণুর সংক্রমণ প্রতিহত করতে হবে। সুখের বিষয় হচ্ছে- জিংক গ্রহণের সপ্তাহ খানেকের মধ্যে লক্ষণ-উপসর্গ স্বাভাবিক হয়ে যায়।

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট