চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

ডিস্কয়েড বা চাকতি একজিমা

ডা. প্রীতীশ বড়ুয়া

১৩ জানুয়ারি, ২০২২ | ১:০২ অপরাহ্ণ

প্রায়ই দেখা যায় অপেক্ষাকৃত হালকা ধরণের একজিমার নাম ডিস্কয়েড একজিমা। এটি দেখতে ডিস্ক বা চাকতির মত গোলাকার। এটিকে অনেকসময় নামমিউলার একজিমাও বলা হয়ে থাকে।

ডিস্কয়েড একজিমা কমবেশি সব বয়সে দেখা দিলেও— বয়স্ক পুরুষদের বেশি হয়। অনান্য একজিমার মত এটির কারণও পুরাপুরি জানা যায়নি, তবে কিছু ক্ষেত্রে স্ট্যাফাইলো— কক্কাস নামক জীবাণুর সংশ্লিষ্টতা থাকে। আবার স্থানীয় চুলকানি, শুষ্ক—চামড়া, পোকার কামড়, পোড়া, ঘা—পাঁচড়া, স্পর্শ, ভেরিকাস একজিমা, দীর্ঘস্থায়ী মদ্যপান, ঔষধ জনিত কারণ, ইত্যাদি অনুঘটক হিসাবে কাজ করতে পারে। অনেকসময় অনান্য একজিমার সাথে এর সহাবস্তান লক্ষ্য করা গেছে। এটি চাকতির মত গোলাকার বা সময় সময় ডিম্বাকৃতি হতে পারে। যদিও পায়ে বেশি দেখা যায়, বিচ্ছিন্নভাবে হাতসহ শরীরের নানা অংশে হয়ে থাকে। শরীরের উভয় পাশে সাদৃশ্যপূর্ণ ভাবে বিস্তৃত থাকলেও ভেরিকোস একজিমার সহাবস্তানে একপাশেও থাকতে পারে। সাধারণত দুইভাবে এই একজিমা আমাদের শরীরে দেখা দেয়। ভেজা—ভেজা একুইট চর্মরোগে প্রদাহ যুক্ত বিচি, ফুসকড়ি ফোসকাসহ চাক হতে পারে। আর শুষ্ক ক্রনিক চর্মরোগে খোসা—খাসা ভাবসহ চাক থাকতে পারে। তবে ভেজা—ভেজা থেকে শুষ্ক কিংবা শুষ্ক থেকে ভেজা—ভেজায় পরিণত হতে পারে। সামান্য কিছু ক্ষেত্রে স্থানীয় হলেও এটি অটো—একজিমাটাইজেশনের কারণে সর্বদেহে ছড়িয়ে পরে।

উপসর্গ হিসাবে থাকে মাঝারি থেকে তীব্র চুলকানি। তীব্রতা মারাত্নক না হলে কোন দাগ ছাড়াই রোগটি মিলিয়ে যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কালচে দাগ মিলিয়ে যেতে বেশ কিছুদিন সময় লাগে। আবার কিছু ক্ষেত্রে প্রদাহ—পরবর্তী সাদাটে দাগ দেখা যায়। তবে মনে রাখতে হবে এটি বার বার হতে পারে, বিশেষত- শীতকালে। অধিকাংশ সময় চোখে দেখেই রোগ নির্ণয় করা যায়। তবে অনেকসময় অনান্য চর্মরোগ থেকে আলাদা করতে, সহাবস্তান নির্ধারণের জন্য অথবা রোগের ব্যাপকতা নির্ণয়ের জন্য কিছু পরীক্ষার প্রয়োজন হয়। যেমন- ছত্রাক ও স্পর্শ জনিত চর্মরোগ পৃথক করার জন্য যথাক্রমে স্কীন—স্ক্রাপিং বা প্যাচ টেস্টিং। প্রদাহ থাকলে ব্যাক্টেরিয়া নির্ণয়ের জন্য সোয়াব টেস্ট, ইত্যাদি। এছাড়াও গোলাকৃতি নানা ধরণের চর্মরোগ যেমন প্ল্যাক সোরিয়াসিস, পিটাইরিয়াসিস রোসিয়া, ইত্যাদি থেকেও এই চর্মরোগটিকে আলাদা করা প্রয়োজন।

প্রতিরোধক চিকিৎসার প্রধান শর্ত হচ্ছে ত্বকের স্থানীয় প্রতিরোধে যেন ঘাটতি না থাকে। কেননা ত্বকের স্থানীয় ব্যারিয়ার নষ্ট হয়ে গেলেই রোগটি আমাদের আক্রমণ করে। তাই চামড়াকে কোন রকমের ঘাত—প্রতিঘাত কিংবা স্পর্শ এলার্জি থেকে রক্ষা করতে হবে। ত্বক নরম মসৃণ রাখার জন্য নানান রকমের ময়েসচারাইজার তেল, সাবান ইত্যাদি ব্যবহার করা দরকার। এডিয়ে চলতে হবে অনান্য অনুঘটক সমূহ। প্রতিকারক চিকিৎসার মধ্যে হালকা থেকে তীব্র মাত্রার স্থানীয়, ইঞ্জেক্টেবল বা মুখে খাবার স্টেরয়েড সহ আল্ট্রা—ভায়োলেট—রে প্রয়োগ হতে পারে। ব্যবহৃত হতে পারে চুলকানির জন্য এন্টিহিস্টামিন কিংবা প্রদাহের জন্য এন্টি—বায়োটিক।

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট