চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

চট্টগ্রামে জিনোম সিকুয়েন্সিং করার তাগিদ বিশেষজ্ঞদের

নীরবে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে ওমিক্রন!

 

১৩ জানুয়ারি, ২০২২ | ১২:৪৩ অপরাহ্ণ

ইমাম হোসাইন রাজু

পারিবারিক একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে একই পরিবারের ২০ সদস্য আসেন চট্টগ্রামে। সফলভাবে অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরপরই পরিবারটির চার সদস্য আক্রান্ত হন সর্দি-কাশিতে। চিকিৎসকের পরামর্শে ২০ জনই করোনার নমুনা পরীক্ষা করাতে দেন বিআইটিআইডি ল্যাবে। পরীক্ষা শেষে জানা যায়, ২০ জনের ১৪ জনেরই করোনা পজিটিভ।

একই ঘটনা ঘটে আরেকটি পরিবারের ক্ষেত্রেও। তাদের ১১ সদস্যের সবারই করোনার ফলাফল পজিটিভ পাওয়া যায়। তারাও এমন একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার পরই একই লক্ষণে আক্রান্ত হয়ে পজিটিভ হন।  শুধু এ দুই পরিবারের ক্ষেত্রেই নয়, গেল কিছুদিন ধরে চট্টগ্রামের করোনা পরীক্ষার প্রধান এ ল্যাবটিতে এমন আরও পাঁচটি ঘটনা ঘটেছে। যেখানে একই পরিবারের একাধিক সদস্য ছাড়াও পজিটিভের হার বেড়েছে দশগুণের বেশি। একই পরিস্থিতি চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি অন্য ল্যাবগুলোর ক্ষেত্রেও। সবগুলো ল্যাবেই গড়ে ১০ থেকে ১২ গুণ পর্যন্ত পজিটিভের হার বেড়েছে। যার কারণে গবেষক, ল্যাব ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের ধারণা- নীরবেই চট্টগ্রামে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন। তাঁদের দাবি, ওমিক্রনের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে চট্টগ্রামের পজিটিভ হওয়া রোগীদের।

জানতে চাইলে বিআইটিআইডি হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও ল্যাব-প্রধান ডা. শাকিল আহমেদ পূর্বকোণকে বলেন,  ‘গত কিছুদিন ধরে ল্যাবে পজিটিভের হার ৮/১০ গুণ বেড়েছে। তাছাড়া যাদের নমুনা পাওয়া যাচ্ছে, তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনাতেও ওমিক্রনের উপসর্গের সঙ্গে মিল পাওয়া যাচ্ছে। ইতোমধ্যে দেশেও বেশ কয়েকজনের শরীরে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। সেজন্য ধরেই নেয়া যায়, কমিউনিটি ট্রান্সমিশন শুরু হয়ে গেছে।’

‘গেল দুই বছর ধরেই নমুনা পরীক্ষায় দেখা গেছে, উপসর্গ থাকার পরও একটি পরিবারের সর্বোচ্চ এক বা দুইজন আক্রান্ত হতেন। কিন্তু এখন যেসব কেস পাচ্ছি, তাতে দেখা যায় মৃদু বা লক্ষণ না থাকা সত্ত্বেও পরিবারের সবাই পজিটিভ হচ্ছেন। এমন অন্তত ৪/৫টি কেস গেছে কয়েকদিন ধরে। এজন্য আমাদের দৃঢ়মূল ধারণা এসব ওমিক্রনের ভ্যারিয়েন্ট- বলেন গবেষক ও বিআইটিআইডি ল্যাব-প্রধান ডা. শাকিল আহমেদ।’

এদিকে করোনার সঠিক তথ্য জানার জন্য চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত কোনো নমুনার জিনোম সিকুয়েন্সিং করা হয়নি। তাছাড়াও চট্টগ্রামে ওমিক্রণের বিস্তার কেমন, তা জানার মতো সিকুয়েন্সিং মেশিন বা গবেষণাও হয়নি। এমন বাস্তবতায় অতি দ্রুত জিনোম সিকুয়েন্সিং মেশিন স্থাপনের পাশাপাশি, ওমিক্রনের অবস্থান জানতে জিনোম সিকুয়েন্সিং করার প্রতি জোর তাগিদ দিচ্ছেন গবেষকগণ।

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ^বিদ্যালয়ের (সিভাসু) প্যাথলজি এন্ড প্যারাসাইটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ও ল্যাবপ্রধান এবং গবেষক ড. জুনায়েদ সিদ্দিকী পূর্বকোণকে বলেন, ‘ওমিক্রনের যে বৈশিষ্ট্য, তার সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতির মিল রয়েছে। তাই আমারও ধারণা, নীরবে ওমিক্রন ছড়াচ্ছে। তবে এখন খুব বেশি প্রয়োজন চট্টগ্রামে ওমিক্রনের সংক্রমণ কেমন এবং কী পরিমাণ ছড়িয়েছে, তার জন্য বেশি বেশি সিকুয়েন্সিং করা। যদি এ কাজটি করা যেতে পারে, তাহলে অন্তত এ বিষয়ে পদক্ষেপগুলোও গ্রহণ করা সম্ভব হবে।’ এজন্য অন্তত দিনে একশ’ জনের নমুনার সিকুয়েন্সিং করা প্রয়োজন বলে মত এ গবেষকের। ওমিক্রনের জিনোম সিকুয়েন্সিং করার জন্য গবেষকদের তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও কেন করা হচ্ছে না, সেই খবর নিয়ে জানা গেছে এ কাজে পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য কোন মেশিনই নাই। এর আগে যেসব জিনোম সিকুয়েন্সিংয়ের মেশিন ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলো ঢাকার একাধিক প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ হতে হয়েছে। গত প্রায় আড়াই বছর যাবত করোনা নিয়ে বহু কার্যক্রম ও যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হলেও একটিও জিনোম সিকুয়েন্সিং মেশিন চট্টগ্রামের ভাগ্যে মিলেনি। টাকার পরিমাণ যে খুব বেশি, তাও না। মাত্র ২০ থেকে ২৫ লাখ।

গবেষক ড. জুনায়েদ সিদ্দীকি বলেন, ‘ওমিক্রনের পর যদি নতুন করে আরও শক্তিশালী ভ্যারিয়েন্ট আসে তাহলে সেটি কীভাবে শনাক্ত হবে, তা জানতে হলে আমাদের জন্য সিকুয়েন্সিং প্রয়োজন। তাই একটি মেশিন স্থাপন করা খুবই জরুরি। সিকুয়েন্সিং করার মতো যথেষ্ট গবেষক চট্টগ্রামে আছেন। শুধু প্রয়োজন মেশিনের।

একই মত দিয়ে ডা. শাকিল আহমেদ বলেন, জিনোম সিকুয়েন্সিং করাটা খুব বেশি প্রয়োজন। আমি খবর নিয়েছি, ঢাকায় যতগুলো জিনোম সিকুয়েন্সিং করা হয়েছে, তার মধ্যে প্রচুর ওমিক্রণ আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে। তাই চট্টগ্রামেও করা দরকার।

তথ্য অনুসারে, গত বিদায়ী বছরের ২৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছিল মাত্র ৩ জন। এরপর থেকে এ সংখ্যা বাড়তে বাড়তে সর্বশেষ গতকাল পর্যন্ত ২২২ জনে এসে দাঁড়িয়েছে। ১৫ দিন আগেও যেখানে সংক্রমণ হার ছিল ০ দশমিক ২৭ শতাংশ, এখন এসে তা দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ। অর্থাৎ মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে চট্টগ্রামে সংক্রমণ হার বেড়েছে প্রায় ৪৬ গুণ।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের কোভিড ফোকাল পার্সন ডা. আবদুর রব মাসুম বলেন, ‘ওমিক্রনও দ্রুত ছড়ায়, লক্ষণ খুব কম। বর্তমানে যেসব রোগী পাচ্ছি, তাদের লক্ষণ দেখে ধারণা হচ্ছে, ওমিক্রন ছড়িয়ে গেছে। যা খুব তাড়াতাড়ি ছড়াচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত সুখকর হচ্ছে, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত ওইভাবে তৈরি হয়নি। সবারই কাশি, সর্দি, গায়ে ব্যথা, হালকা জ¦র এসবই পাচ্ছি। তাই অবশ্যই সকলকে মাস্ক পড়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতেই হবে। ’

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট