চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

তরুণদের রক্তনালীর ব্লকজনিত ঝুঁকি এড়াতে করণীয়

অনলাইন ডেস্ক

২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ | ২:১৪ অপরাহ্ণ

এক সময় ধারণা ছিল বয়স বাড়ার সাথেই শুধু হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। কিন্তু আজকাল জীবনযাত্রায় অসচেতনতা কম বয়সেই অনেকের হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।

একটি গবষেণায় দেখা গেছে, ৩০-৪০ বছর বয়সী মানুষের মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের হৃৎপিণ্ড প্রতি মিনিটে ৬০ থেকে ১০০ বার সংকোচন-প্রসারণের মাধ্যমে দেহের প্রতিটি কোষে বিশুদ্ধ রক্ত ও খাদ্যকণা পৌঁছে দেয়। তাই হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে হলে আমাদের সচেতন হতে হবে।

হৃদপিণ্ডের রক্তনালীর ব্লকের অন্যতম কারণ ধূমপান। ধূমপানের ফলে হৃদযন্ত্রের ধমনী সংলগ্ন কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অতিরিক্ত ধূমপান হৃদস্পন্দনও বাড়িয়ে দেয়, যা ক্ষতিকারক। আরেকটি অন্যতম কারণ হলো মানসিক উদ্বেগ। আজকাল তরুণ পেশাজীবীরা এক বিশাল মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যা তাদের হৃৎপিণ্ডের জন্য খুবই ক্ষতিকর। জীবনযাত্রায় অনিয়ম এবং শরীরর্চচার অভাবে হৃদরোগ হতে পারে।

সম্প্রতি অনেকের ডায়াবেটিস ধরা পড়ছে। সেইসঙ্গে বাড়ছে হৃদরোগের ঝুঁকি। অতিরিক্ত মদে বা স্থূলতার কারণেও হৃদরোগ হতে পারে। স্থুলতা ও ডায়াবেটিসের ফলে তরুণদের মধ্যে উচ্চরক্তচাপ, কোলেস্টেরলের মতো সমস্যা দেখা দিচ্ছে, যা হৃদরোগ সৃষ্টি করে। এছাড়া খাদ্যে উচ্চমাত্রার ট্রান্সফ্যাট এই রোগের আরেকটি কারণ হিসেবেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তবে যে সকল অভ্যাস হৃদরোগের অন্যতম কারণ, সেগুলো বর্জন করে হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পুরোপুরিভাবে ধূমপান ত্যাগ করা উচিত। মানসিক উদ্বেগ বা চাপকে কখনোই প্রশ্রয় দেওয়া উচতি না। মানসিক উদ্বেগ কমাতে এবং মনঃসংযোগ বাড়াতে মেডিটেশন করা যেতে পারে। এছাড়া বই পড়া, গান শোনা, দৈনন্দিন কাজ থেকে সাময়িক বিরতি নিয়ে একটু ঘুরতে যাওয়া ইত্যাদি মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত শরীরর্চচা, রাতে ভালো ঘুম, খাবারে পর্যাপ্ত পুষ্টির সঞ্চার হৃৎপিণ্ডকে সুস্থ রাখে। ট্রান্স ফ্যাটি এসডি (টিএফএ) বা ট্রান্সফ্যাট স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর একটি খাদ্য উপাদান। ভাজাপোড়া খাবার তৈরিতে একই তেল বার বার ব্যবহার করলে ট্রান্সফ্যাট তৈরি হয়। এছাড়া ডালডা, ঘি ইত্যাদি দ্বারা তৈরি বিভিন্ন খাবার, ফাস্টফুড ও বেকারি পণ্যে ট্রান্সফ্যাট থাকে। হৃৎপিণ্ড ভালো রাখার জন্য এ ধরনের তেলযুক্ত খাবার বর্জন করতে হবে। উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল এবং ডায়াবেটিক রোগীদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে হবে।

প্রবাদে আছে- স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। হৃৎপিণ্ড আমাদের শরীরের অভ্যন্তরীণ কর্মসঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করে। সুতরাং বলা যায়- একজন মানুষের সুস্থ হৃৎপিণ্ডই সু-স্বাস্থ্যের চাবিকাঠি। সঠিক নিয়ম মেনেও সচেতনতার মাধ্যমে হৃদরোগের ঝুঁকি ৯৫-৯৮ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব।তাই আসুন আমরা এখন থেকেই সচেতন হই এবং সুস্থভাবে জীবনযাপন করি।

লেখক: প্রফেসর ডা. শেখ মোহাম্মদ হাছান মামুন, সিনিয়র কনসালটেন্ট, ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড ইন্টারভনেশনাল কার্ডিওলজি, এভারকেয়ার হসপিটাল, চট্টগ্রাম। 

পূর্বকোণ/পিআর/এএইচ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট