চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

টিকার জন্য কেন্দ্রে কেন্দ্রে ‘যুদ্ধ’

নিজস্ব প্রতিবেদক 

১২ আগস্ট, ২০২১ | ১২:৪৮ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল কেন্দ্র থেকে গত মাসের ৮ তারিখে মডার্নার প্রথম ডোজ গ্রহণ করেন প্রবাসী কামরুল হাসান। টিকা কার্ডে দ্বিতীয় ডোজের জন্য তারিখ দেয়া হয় গতকাল বুধবার (১১ আগস্ট)। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রায় তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়ানোর পর কেন্দ্র থেকে জানানো হয় টিকা ফুরিয়ে গেছে। অন্যদিন আসতে।

শুধু কামরুল হাসান নয়, গতকাল বুধবার দুপুরে হাসপাতালটিতে টিকা নিতে আসা অসংখ্য মানুষ এসএমএস পেয়েও টিকা না নিয়ে ফিরে গেছেন। আবার এসএমএস পাননি কিন্তু টিকা কার্ডে ১১ আগস্ট দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণের লিখিত থাকারাও আসেন তার কাক্সিক্ষত টিকার জন্য। তারাও ফিরে গেছেন টিকা না নিয়ে।

এদিকে, প্রবাসীরা তাদের টিকা না পেয়ে দুপুরে হাসপাতালটির অদূরে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিক্ষুব্ধ হয়ে অবস্থান নেয়ার ঘোষণাও দেন। টিকা না পাওয়ায় হট্টগোল বাধে জেনারেল হাসপাতাল কেন্দ্রেও। যদিও পুলিশের উপস্থিত থাকায় তা নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়। অন্যদিকে প্রবাসীদের চিৎকার চেঁচামেচিতে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে তালা লাগাতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। যদিও শেষ পর্যন্ত টিকা পাওয়া শর্তে প্রবাসীদের অগ্রাধিকার দেয়ার কথা জানালে স্থান ত্যাগ করেন তারা।

তবে বিক্ষুব্ধ জনগণ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের জেনারেল হাসপাতাল আর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হট্টগোল বাঁধিয়েই ছাড়েন। শেষ পর্যন্ত দুটো কেন্দ্রে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ সদস্যদেরও হিমশিম খেতে হয়। গতকাল সরেজমিনে গিয়ে এসব কেন্দ্রে দেখা যায়, টিকা পাওয়ার জন্য যেন যুদ্ধে নেমেছেন গ্রহীতারা। তাদের সকলেরই চাওয়া, যেভাবেই হোক একটি টিকা চাই।

শাহেনুর আলম নামে এক ব্যক্তি বলেন, সকাল দশটা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করে জানানো হয় টিকা নেই। টিকাই যদি না থাকে , তাহলে আমাদের কেন এসএমএস দিল তারা? টিকার সংকট আছে, সেটি সকালেই জানিয়ে দিলেইতো হতো। কিন্তু পাঁচ ঘণ্টা পর কেন বলছে? মূলত মানুষদের হয়রানি করা হচ্ছে।

সাব্বির নামে এক প্রবাসী বলেন, স্বাভাবিকের চেয়ে চারগুণ বেশি মূল্যে বিশেষ ফ্লাইটের টিকিট নিয়েছি। কিন্তু টিকার সনদ না পেলে যেতে পারবো না। এসএমএস পেয়ে কেন্দ্রে আসার পরও বলে টিকা নেই। প্রবাসীদের জন্য অগ্রাধিকার দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু এত প্রবাসীর এখন কী হবে?

গত মঙ্গলবার হঠাৎ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সিটি কর্পোরেশন এলাকাগুলোতে মডার্নার প্রথম ডোজ টিকাদান প্রদান বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়। যার কারণে অন্যদিনের তুলনায় বুধবার প্রতিটি কেন্দ্রেই দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ পর্যন্ত মানুষ তার টিকা পাওয়ার জন্য ভিড় করেন। যদিও এদিন দুপুর গড়াতেই রক্ষিত টিকা শেষ হয়ে যায় কেন্দ্রগুলোতে। ফলে সকলকে টিকা দেয়া যায়নি। শুধু তাই নয়, সংকটের কারণে অন্যদিনের তুলনায় গতকাল মাত্র ৬ হাজার মানুষকে টিকা দিতে পেরেছে স্বাস্থ্যবিভাগ। যদিও স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, দু-একদিনের মধ্যেই নতুন করে দ্বিতীয় ডোজের জন্য লক্ষাধিকের কাছাকাছি টিকা পাচ্ছে চট্টগ্রাম। ফলে কিছুটা হলেও সংকট কাটিয়ে ওঠবে।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘কেন্দ্রীয়ভাবে জানানো হয়েছে, দু-একদিনের মধ্যে আবার টিকা পাঠানো হচ্ছে। তাতে দ্বিতীয় ডোজের জন্য ব্যবহার করা হবে। আপাতত প্রথম ডোজ কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তবে টিকা পাওয়া এবং নির্দেশনা আসলে সেটিও চালু করা হবে।’

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট