চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

মাতৃদুগ্ধ: শিশুদের সর্বোত্তম পুষ্টির উৎস

৬ আগস্ট, ২০২১ | ৪:৫০ পূর্বাহ্ণ

সন্তানকে মাতৃদুগ্ধদান প্রতিটি মায়ের কাছেই এক পরম প্রাপ্তি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) মাতৃদুগ্ধকে শিশুদের সর্বোত্তম পুষ্টির উৎস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। শিশুর সর্বোৎকৃষ্ট খাবার হিসেবে মায়ের দুধকেই বিবেচনা করা হয়। ডব্লিউএইচও এবং ইউনিসেফ-এর পরামর্শ অনুযায়ী, একটি শিশুর জন্মের এক ঘন্টার মধ্যে অবশ্যই তাকে বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত এবং প্রথম ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধুমাত্র বুকের দুধ (এক্সক্লুসিভ ব্রেস্ট ফিডিং) খাওয়ানো উচিত। তবে শিশুর দ্রুত বৃদ্ধি এবং বিকাশ নিশ্চিতে তাকে দুই বছর বয়স পর্যন্ত পারিবারিক অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি বুকের দুধও খাওয়ানো উত্তম।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র কার্যক্রমের উপর ভিত্তি করে শিশুদের মাতৃদুগ্ধ খাওয়ানোর গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজি বাস্তবায়নে অন্যতম ভূমিকা পালন করে ওয়ার্ল্ড ব্রেস্টফিডিং ট্রেন্ডস ইনিশিয়েটিভ(ডাব্লিউবিটিআই) ।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র তথ্য অনুযায়ী সঠিক সময় অনুযায়ী মাতৃদুগ্ধপান প্রতি বছর প্রায় ৮ লক্ষ শিশুর (৫বছরের নিচে) জীবন বাঁচাতে পারে।

বিশ্বব্যাপী মা এবং শিশুর জন্যে মাতৃদুগ্ধের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে প্রতিবছর আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালিত হয়। ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স ফর ব্রেস্ট ফিডিং অ্যাকশন-এর উদ্যোগে এবং ইউনিসেফ এর সহযোগিতায় ১৯৯২ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী প্রায় ১২০টি দেশে এবং ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশে জাতীয়ভাবে এই কর্মসূচী পালিত হয়ে আসছে। বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ-এর এবছরের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে- “প্রোটেক্ট ব্রেস্টফিডিং: এ শেয়ারড রেসপন্সিবিলিটি” যার বাংলা অর্থ- “মাতৃদুগ্ধদান সুরক্ষা: একটি সম্মিলিত দায়িত্ব”।এই বছরের মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে মাতৃদুগ্ধদানকে সুরক্ষিত করা; মাতৃদুগ্ধদানের গুরুত্ব সম্পর্কে জনসাধারণকে অবহিত করা; ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায় থেকে বৃহত্তর প্রভাব সৃষ্টি করা এবং মাতৃদুগ্ধদান সমর্থন করাএকটি গুরুত্বপূর্ণ জনস্বাস্থ্য দায়িত্ব হিসেবে বিবেচনা করা।

একটি শিশু জন্মের পর থেকে পর্যাপ্ত অনুপাতে মাতৃদুগ্ধ পেলে তার নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, অপুষ্টি, জন্ডিস ও অন্যান্য ঝুঁকিবহুল রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার আশংকার হার তুলনামূলক কমে যায়। মায়ের দুধ না খাওয়ালে শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশ ব্যাহত হয় এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমন ডায়াবেটিস, স্থুলতা, শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ, হৃদরোগ ইত্যাদির ঝুঁকি অনেকাংশেই বৃদ্ধি পায়। মাতৃদুগ্ধ পান করালে মায়েদের স্তনে ক্যান্সার, ডিম্বাশয়ে ক্যান্সার, টাইপ-২ ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস পায়।

চলমান মহামারীতে নবজাতককে মাতৃদুগ্ধদানে সংশয় থাকাটি খুবই স্বাভাবিক। এ বিষয়ে নিশ্চয়তা দেয়া যায় যে, মাতৃদুগ্ধ থেকে শিশুর করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি নেই। একজন করোনা আক্রান্ত মা নিশ্চিন্তে তার সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন। তবে, প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই মানতে হবে। শিশুকে দুধ খাওয়ানোর সময় মাকে সঠিকভাবে মাস্ক পরিধান করতে হবে এবং দুধ খাওয়ানোর আগে ও পরে সাবান পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে বা অ্যালকোহল মিশ্রিত হ্যান্ডরাব দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এমনকি, কোন শিশু কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলে, মায়ের দুধে থাকা অ্যান্টিবডি এবং ল্যাক্টোফোরিন, ল্যাকটালবিউমিন ও অন্যান্য বায়ো অ্যাকটিভ ফ্যাক্টরগুলো করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে সহায়তা করবে।

মাতৃদুগ্ধদান মাকে সুস্থ শিশু এবং একটি দেশকে সুস্থ জাতি উপহার দিতে পারে। দেশব্যাপী মাতৃদুগ্ধদান নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, জাতীয় পুষ্টিসেবা এবং বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশন (বিবিএফ) একযোগে কাজ করে যাচ্ছে।কর্মক্ষেত্রে মাতৃদুগ্ধদানে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি ও মাতৃত্ব সুরক্ষা (ছুটি, বেতন ভাতা, স্বাস্থ্যসেবা, গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের ভাতা প্রদান) এবং মাতৃদুগ্ধ বিকল্প শিশুখাদ্য আইনের প্রয়োগ সর্বস্তরে নিশ্চিত করার মাধ্যমেই এসডিজি অর্জনের দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। তবে জাতির উন্নয়ন সাধনে সরকারের গৃহীত উদ্যোগসমূহ বাস্তবায়নের দায়িত্ব সবার।

লেখক: এমবিবিএস, ডিসিএইচ, এফসিপিএস (পেডিয়াট্রিকস) ও কনসালটেন্ট- নিউনেটোলজি অ্যান্ড পেডিয়াট্রিকস, এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রাম

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট