চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

রোজাসিয়া : ব্রণের মত দেখতে হলেও ব্রণ নয়

৬ আগস্ট, ২০২১ | ১২:৫০ অপরাহ্ণ

দেখতে ব্রণের মত হলেও রোজাসিয়া কিন্তু ভিন্ন ধরণের একটি চর্মরোগ। লালচে ভাব ও প্রাথমিকভাবে বিচি-যুক্ত রোজাসিয়া মুখ-মণ্ডলের মধ্যভাগে বেশি দেখা যায়। 
সাদা ত্বক ও নীল চোখের ৩০-৬০ বছর বয়সীদের এটির প্রকোপ বেশি। এটি ক্ষণস্থায়ী, স্থায়ী কিংবা বারবার হতে পারে এমন একটি চর্মরোগ। পুরোপুরি জানা না গেলেও রোগটির কারণ হিসাবে বংশগতি, আবহাওয়া, ভাস্কুলার, সূর্যের অতি বেগুনি-রশ্নি, প্রদাহ বা ইনফ্লেমেশনকে ধারণা করা হয়।
রোজাসিয়াতে এন্টি-মাইক্রোবিয়াল কিছু পেপটাইডের সন্ধান পাওয়া গেছে- যা কিনা রক্তনালিকে সম্প্রসারিত করতে পারে ফলে নালি ছিদ্র হয়ে রক্ত বের হয় যায় এবং ত্বকে লাল ও ফোলাভাবসহ প্রদাহ দেখা যায়। প্রদাহ সৃষ্টিকারী ম্যাট্রিক্স মেটালোপ্রোটিনেজ এর উপস্থিতিও রোগটির মধ্যে দেখা গেছে। শতভাগ নিশ্চিত না হলেও, রোজাসিয়ার প্যাপিউলে ডেমোডেক্স জাতীয় একপ্রকার জীবাণুর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। দেখা গেছে ঝাল ও গরম খাদ্য, এলকোহল জাতীয় পানীয়, তৈলাক্ত প্রসাধনী ও স্টেরয়েড মলমের ব্যবহার রোগটিকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।

আগেই বলা হয়েছে রোজাসিয়া মুখ-মণ্ডলের মধ্যভাগে দেখা যায়, যদিও পরে অনান্য স্থানে ছড়িয়ে পরতে পারে। লালচে ভাব মাঝেমধ্যে উজ্জ্বল হয়ে ঝলক দিয়ে উঠে। ত্বকের নিচে শিরা-উপশিরাগুলি প্রকট হয়ে দেখা দিতে পারে। লাল বিচিগুলো ধীরে ধীরে পুঁজযুক্ত পাসটিউলে পরিণত হয়। মনে রাখতে হবে রোজাসিয়াতে কিন্তু ব্রণের মত ব্ল্যাক বা হোয়াইট হেড ও নডিউল থাকে না। জ্বালাপোড়াসহ ত্বক খসখসে হয়ে যায়। প্রদাহের কারণে চোখের পাতা ফুলে যেতে থাকে এবং ক্রমশ চোখে এর প্রভাব পরতে পারে। লিম্ফ বা অন্তক্ষরা রসের প্রবাহ বন্ধ হয়ে গিয়ে মুখের ফোলাভাব আরও বেড়ে যায়। প্যাপিউল ও পাসটিউলের কারণে প্রদাহ আরও বেড়ে নাক বড় হয়ে বিকৃত হতে পারে।

রোগের লক্ষণ-উপসর্গ বিচার করে রোগটি নির্ণয় করা যায়। পরীক্ষার প্রয়োজন তেমন একটা নাই। তবে রোগটিকে অন্য রোগ যেমন- একনি ভালগারিস বা ব্রণ, পেরি-ওর‍্যাল, সেবরিক, কন্টাক্ট ডারমাটাইটিস, সিস্টেমিক লুপাস, ডারমাটোমায়োসাইটিস ইত্যাদি থেকে আলাদা করা প্রয়োজন। রোগটি প্রতিরোধে উল্লেখিত অনুঘটকগুলো যথাসাধ্য এড়িয়ে চলতে হবে। প্রতিকারক চিকিৎসার প্রাথমিক পদক্ষেপে তেলতেলে ও স্টেরয়েড ক্রিম ব্যবহার বন্ধ করতে হয়। সূর্যালোক এড়িয়ে ঠাণ্ডা স্থান বেছে নিতে হবে। ঝাল ও গরম খাবার, এলকোহল কিংবা স্টীম-বাথ পরিহার আবশ্যক। মেট্রোনিডাজল, এজালয়িক এসিড, ব্রিমনিডাইন, আইভারমেক্টিন, ক্যালসিনিউরিন ইনহেবিটার ইত্যাদি স্থানীয়ভাবে ব্যবহার করা হয়। মুখে খাবার এন্টি-বায়টিক, টেট্রাসাইক্লিন, ডক্সিসাইক্লিন বা মিনোসাইক্লিন ৬-১২ সপ্তাহ কাল ব্যবহৃত হয়। এগুলো কাজ না করলে কোট্রিমাক্সাজল বা মেট্রোনিডাজল ট্যাবলেট দেওয়া যেতে পারে। এন্টিবায়টিক প্রতিরোধী হয়ে গেলে অনেকসময় আইসোট্রেটিনয়েন ট্যাবলেট দিতে হয়। বেশি জটিলতায় ভাসকুলার লেজার প্রয়োগ করা যেতে পারে। নাকের বিকৃতিতে কার্বন-ডাই অস্কাইড লেজার অথবা সার্জারী চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়া হয়।

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট