চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

শ্বেতী বা ভিটিলিগো : যা জানা প্রয়োজন

৩০ জুলাই, ২০২১ | ১:০৭ অপরাহ্ণ

আমাদের মানবদেহের চামড়ায় মেলানোসাইট বলে একজাতীয় কোষ থাকে, যাদের কাজ হল মেলানিন নামক পিগমেন্ট উৎপাদন করা। এই কারণে আমাদের ত্বক নানা বর্ণের হয়ে থাকে। মেলানিনের মাত্রা যার যত বেশি তার ত্বকের রঙ ততবেশি কালো। এই মেলানিন আমাদের চামড়ায় মোটামুটি সুষমভাবে বন্টিত থাকে। কিন্তু কিছু কিছু কারণে ত্বকের স্থানে স্থানে মেলানোসাইট কোষ ধ্বংস হয়ে পড়ে এবং ফলে মেলানিন শূন্য হয়ে ত্বকে সাদা দাগের উদ্ভব ঘটে। এই সাদা হয়ে যাওয়া ত্বকের রোগটিকে আমরা শ্বেতী বলি। যার বৈজ্ঞানিক নাম ভিটিলিগো।
সারা বিশ্বে .৫-১% জনগোষ্ঠীতে এটি দেখা যায়। তবে বাদামী চামড়ার মানুষদের মধ্যে এই হার প্রায় ৮.৮%। নারী-পুরুষ সবাই সমভাবে আক্রান্ত হতে পারে। অধিকাংশ সময় ত্রিশ বছরের আগেই এর লক্ষণ প্রকাশ পায়। রোগটির কারণ এখন অবধি পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে শতকরা প্রায় বিশ ভাগ ক্ষেত্রে বংশগতির একটি ধারা লক্ষ্য করা গেছে। ত্রুটিপূর্ণ জীনের একটি এনজাইম ‘টাইরোসিনেজ’ অনেকটা দায়ী হতে পারে। ধারণা করা হয় এটি একটি অটো-ইমিউনো রোগ এবং অন্যান্য অটো-ইমিউনো রোগ যেমন- ডায়াবেটিস, থাইররেড, পারনিসিয়াস এনিমিয়া, সিস্টেমিক লুপাস, এডিসন্স ডিজিজ, রিউমাটোয়েড আরথ্রাইটিস, সোরিয়াসিস, এলোপেসিয়া এরিয়েটা ইত্যাদির সাথে এই রোগটির কিছুটা সম্পৃক্ততা লক্ষ্য করা গেছে।

শ্বেতী বা ভিটিলিগো আমাদের মাথা থেকে শুরু করে চামড়ার যেকোনো স্থানেই দেখা দিতে পারে। হতে পারে তা ছোট বা বড়, এক বা একাধিক। দেখা গেছে কাটাছেড়া, ক্ষত, অতি-ঘর্ষণ, পোড়া কিংবা রোদ উন্মুক্ত অঞ্চলসমূহের প্রতি এর আকর্ষণ একটু বেশি। সাধারণভাবে ‘বৃদ্ধি-স্থিতি-বৃদ্ধি’ এই ধারায় রোগটি চলমান হলেও আরো বাড়বে কিনা, কতদিন বাড়বে ইত্যাদি সুনির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব হয় না। অনেকসময় বেশি মানসিক চাপ এর কারণ হতে পারে। শ্বেতীতে মেলানিন পিগমেন্ট একেবারেই থাকে না, তাই ত্বকের সাদা দাগের পাশাপাশি আক্রান্ত স্থানের কেশগুলিও সাদা হয়ে যেতে পারে। সাদা লক্ষণ ছাড়া উপসর্গ একদম থাকে না বললেই চলে। কিন্তু সামাজিক অবহেলার ভয়ে রোগীর মনে প্রচণ্ড হতাশার উদ্ভব ঘটে।

শ্বেতী বা ভিটিলিগো এর চিকিৎসা শতভাগ কার্যকরী, এটি বলা যাবে না। নির্দিষ্ট কারণ জানা যায়নি বলেই চালু রয়েছে নানান ধরণের চিকিৎসা। প্রাথমিকভাবে সব ক্ষেত্রে রোদ এড়নোর জন্য সানস্ক্রিন এর কথা বলা হয়। সে সাথে ত্বকে বন্ধ রাখতে হবে খোঁচাখুঁচি, প্রয়োজনে ব্যবহার করতে হবে ত্বক ঢেকে রাখার উপাদান বা কসমেটিক ক্যামোফ্লেজ। স্থানীয়ভাবে ব্যবহৃত হয়, স্টেরয়েড বা ক্যালসিনিঊরিন, ফটোথেরাপী কিংবা লেজার। মুখে খাবার জন্য কিছু ক্ষেত্রে স্টেরয়েড, মেথোট্রেক্সেট, সাইক্লোস্পরিন, ইত্যাদি ব্যবহৃত হতে পারে। স্থির থাকা বা সেগমেন্টাল শ্বেতীর জন্য সার্জারী চিকিৎসা যেমন- পাঞ্চ, স্লিপ্ট বা ব্লিস্টার গ্রাফটিং এবং মেলানিন বা মেলানোসাইট ট্রান্সপ্লান্টেশন কিছুটা কার্যকরী। তবে সব ক্ষেত্রেই সামাজিক সুরক্ষা প্রয়োজন। 

লেখক : চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ

 

পূর্বকোণ/এসি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট