চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

করোনার চিকিৎসায় যে ব্যায়াম খুবই কার্যকরী

অনলাইন ডেস্ক

১৪ জুলাই, ২০২১ | ২:৪৫ অপরাহ্ণ

করোনা রোগীদের জন্য ব্যায়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। করোনায় ফুসফুস আক্রান্ত হলে ফ্রি রেডিকেল উৎপন্ন হয়। এই ফ্রি রেডিকেল করোনায় নানা জটিলতা তৈরী করে। ব্যায়াম করলে শরীরে এন্টিঅক্সিডেন্ট তৈরি হয়। এই এন্টিঅক্সিডেন্ট ফ্রি রেডিকেলকে প্রশমিত করে।

এছাড়াও ব্যায়াম শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা কমাতে সাহায্য করে। নিদ্রাহীনতা দূর করে। ফুসফুস ও হার্টের কার্যকারিতা বাড়ায়। শরীরের ওজন বেশি থাকলে করোনায় জটিলতা বেশি হয়। ব্যায়াম ওজন বৃদ্ধিতেও বাধা প্রদান করে। প্রেসার ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও ব্যায়াম খুবই কার্যকরী।

কোন ব্যায়াম করা ভালো? কতক্ষণ ব্যায়াম করবেন? যারা সুস্থ সবল আছেন তাদের জন্য জোড়ে ঘাম ঝড়িয়ে হাঁটা, সাইকেল চালানো বা সাঁতার কাটা ভালো ব্যায়াম। প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে সপ্তাহে ৫ দিন করলেই চলবে। যারা ট্রেডমিল বা জগিং করতে চান তারা প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিট করে সপ্তাহে ৫ দিন করবেন। শিশু কিশোরদের ব্যায়াম একটু বেশি করতে হবে। দিনে ১ ঘন্টা করে সপ্তাহে ৫ দিন। যারা বয়স্ক ও দুর্বল তারা প্রতিবার ১৫ মিনিট করে দিনে ২ বার হাঁটবেন।

যারা করোনায় আক্রান্ত হয়ে গেছেন তারা সারাদিন বিছানায় শুয়ে না থেকে হালকা ব্যায়াম করবেন। শরীরের সামর্থ্য অনুযায়ী হালকা থেকে মাঝারি মাত্রায় রুমের মধ্যেই হাঁটবেন। একবারে ৩০ মিনিট না পারলে ২-৩ বারে ভাগ করে সেটা করতে পারেন। যারা মারাত্মক করোনায় আক্রান্ত তাদের ব্যায়াম করা সম্ভব হবে না। এসময়ে তাদের বিশ্রামে থাকতে হবে। তবে এসময়ে তাদের শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম করতে হবে। এটা হলো ডিপ ব্রেদিং এক্সারসাইজ। নাক দিয়ে জোরে বুক ফুলিয়ে শ্বাস নিবেন। ৩-৫ সেকেন্ড শ্বাস ধরে রাখবেন। মোমবাতি নিভাতে যে রকম ফু দিতে হয় সেরকমভাবে লম্বা ফু দিয়ে মুখ দিয়ে শ্বাস ছাড়ুন। এবং উপরের প্রক্রিয়াটি ৫ বার করে করুন। দিনে ৫ বেলা এই শ্বাসের ব্যায়াম করবেন।

করোনা রোগীর শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে শ্বাস নিয়ন্ত্রণ ব্যায়াম বা ব্রেদিং কন্ট্রোল এক্সারসাইজ করবেন। চিৎ হয়ে মাথার নিচে কাধ পর্যন্ত ও হাঁটুর নিচে বালিশ দিয়ে শান্ত হয়ে শোবেন৷ এক হাত পেটের উপর আরেক হাত বুকের উপর রেখে শ্বাস প্রশ্বাস অনুভব করবেন। বুকের প্রসারন না করে শুধুমাত্র পেটের সামান্য প্রসারনের মাধ্যমে স্বাভাবিক শ্বাস প্রশ্বাস চালানোর চেষ্টা করবেন।

অক্সিজেন স্যাচুরেশন মেপে দেখবেন। ৯৩ এর কম হলে অক্সিজেন দিতে হবে। অক্সিজেন কমে গেলে প্রোনিং পজিশনে থাকতে হবে। প্রোনিং পজিশনের মানে হলো উপুর হয়ে শুয়ে থাকা। এতে ফুসফুসে অক্সিজেনের পরিমান বাড়ে। তারপর ডান কাতে শুয়ে থাকবেন। তারপর বালিশে হেলান দিয়ে বসে থাকবেন। তারপর বাম কাতে শুয়ে থাকবেন। প্রতিটি পজিশনে ৩০ মিনিট থেকে ২ ঘন্টা পর্যন্ত যতক্ষণ থাকা সম্ভব হয় থাকবেন। এতে অক্সিজেন বাড়বে এবং শ্বাসকষ্ট কমবে।

রোগীর দুর্বলতা একটু কমলে, কিছুটা সবল হলে তখন শ্বাসের মেশিন দিয়ে ব্যায়াম করবেন। এই মেশিনটির নাম ইনসেনটিভ স্পাইরোমিটার। এই ব্যায়ামে শ্বাস প্রশ্বাসের পেশি শক্তিশালী হয়৷ চেয়ারে বা খাটের কিনারে পা ছেড়ে দিয়ে বসবেন। তারপর ইনসেনটিভ স্পাইরোমিটার মেশিনটি হাতে নিয়ে স্বাভাবিকভাবে শ্বাস ছাড়বেন। মেশিনের মুখের অংশটি ঠোঁট দিয়ে শক্তভাবে ধরে রাখবেন। আস্তে আস্তে যতটা সম্ভব গভীরভাবে শ্বাস নিবেন এবং মেশিনের বলের উঠানামা লক্ষ করবেন। যতক্ষণ সম্ভব শ্বাস ধরে রাখবেন। তবে অন্তত ৫ সেকেন্ড। এবার মুখ থেকে মেশিনের নলটি নামিয়ে ফেলবেন। তারপর ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়বেন। উপরের প্রক্রিয়াটি ১০ বার করবেন। এই ব্যায়মটিও দিনে ৫ বার করবেন।

রোগী আরেকটু ভালো হবার পর হাঁটার ব্যায়াম শুরু করতে হবে। প্রথম সপ্তাহে ৫ মিনিট করে ৫ বার হাঁটবেন। দ্বিতীয় সপ্তাহে ১০ মিনিট করে ৩ বার হাঁটবেন। তৃতীয় সপ্তাহে ১৫ মিনিট করে ২ বার হাঁটবেন। তবে ব্যায়ামের সময় যদি কারো বুকে ব্যথা হয় বা বুক ধরফর করে বা অত্যধিক দুর্বল লাগে কিংবা মাথা হালকা হয়ে যায় অথবা মাথা ঘুরায় এবং অক্সিজেন কমে যায় তাহলে ব্যায়াম বন্ধ করতে হবে। এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

লেখক: ডা. গোলাম মোর্শেদ, সহকারী অধ্যাপক, মেডিসিন স্পেশালিস্ট ও ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট