চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

এক ঘণ্টাও শ্বাস নিতে পারেনি কিশোর রিয়াদ

ইমাম হোসাইন রাজু 

১০ জুলাই, ২০২১ | ২:৪১ অপরাহ্ণ

মো. রিয়াদ হোসেন। সপ্তাহখানেক আগে ১৫ বছর বয়সী এই কিশোরের দেখা দেয় করোনার উপসর্গ। চিকিৎসকের পরামর্শে নমুনা পরীক্ষা করে জানা যায়, করোনার সংক্রমণ তার শরীরে বাসা বেঁধেছে। প্রাথমিক পর্যায়ে বাসায় চিকিৎসা নিলেও গেল বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু হয় শ্বাস নেয়ার কষ্ট। যা ধীরে ধীরেই বাড়তে থাকে।

একটু দেরি হলেও গতকাল (শুক্রবার) প্রায় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আনা হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করে কোভিড ওয়ার্ডে পৌঁছাতে ঘড়ির কাঁটা তখন ১২টা ছুঁই ছুঁই। নিঃশ্বাসের যন্ত্রণা যখন রিয়াদকে ধুঁকে মারছে তখনও শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক করতে প্রাণপণে চেষ্টা করেন চিকিৎসকরা। অসহায় মা বাবাও হাতপাখার বাতাস দিয়ে প্রিয় সন্তানকে চেষ্টা করেন একটু শ্বাস নিতে। কিন্তু কোন কিছুই তার কাজে আসেনি। বরং একটি ঘণ্টাও ঠিক মতো শ্বাস নিতে পারেনি কিশোর রিয়াদ। চিরতরেই বন্ধ হয়ে যায় তার শ্বাস। মাত্র এক ঘণ্টার এমন করুণ চিত্রই ছিল চমেক হাসপাতালের কোভিড রেড জোন-২ এর।

গতকাল (শুক্রবার) দুপুর ১টার দিকে মৃত্যু হয় কিশোর রিয়াদের। সে নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী থানাধীন এলাকার মো. কামাল হোসেনের ছেলে।  নগরীর সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালের প্রাপ্ত তথ্য বলছে, শুধু কিশোর রিয়াদই নয়। বর্তমানে একই বয়সী বহু কিশোর কিশোরী করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে ভর্তি হচ্ছেন বিভিন্ন হাসপাতালে। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তহয়ে শূন্য থেকে ২০ বছর বয়সী ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। যদিও কাগজের এ সংখ্যা আরও অনেক হতে পারে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। তাছাড়া আক্রান্তের তালিকাতেও একই বয়সীদের সংখ্যা কম নয়। গতকাল (শুক্রবার) পর্যন্ত শূন্য থেকে ২০ বছর বয়সী প্রায় সাড়ে ৬ হাজার আক্রান্ত হয়েছেন।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুসারে, শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে ৪ শিশুর মৃত্যু হয়। যাদের ৩ জন ছেলে ও একজন মেয়ে শিশু । একই বয়সী আক্রান্তের সংখ্যাও কম নয় । ১ হাজার ৭২৭ জন এ বয়সী শিশু আক্রান্ত হয়েছে। যাদের ৯৯৪ জন ছেলে ও ৭৩৩ জন মেয়ে শিশু। শিশুদের এ অবস্থার চেয়ে আরও ভয়ংকর হচ্ছে, ১১ থেকে ২০ বছর বয়সীদের মধ্যে। এ বয়সের আক্রান্তের সংখ্যা ৪ হাজার ৬৮১ জন ছাঁড়িয়েছে। যাদের মধ্যে ২ হাজার ৬১৫ জন কিশোর ও ২ হাজার ৬৬ জন কিশোরী রয়েছে। মৃত্যুর তালিকাতে তাদেরও সংখ্যা কম নয়। তালিকায় ৬ সংখ্যা দখলে রয়েছে এ বয়সীদের। যাদের ৫ জনই কিশোরী আর একজন কিশোর। নতুন করে মৃত্যু হওয়া এ কিশোরের নাম যুক্ত হলে সংখ্যা ৭ এ এসে দাঁড়াবে।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আবদুর রব মাসুম বলেন, করোনা এখন সব বয়সীদের মধ্যেই হচ্ছে। মোট সংক্রমণের তুলনায় শিশু-কিশোরের সংখ্যা কিছুটা কম হলেও, বর্তমানে সংখ্যা বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে অবশ্যই এ বয়সীদের বাড়তি সর্তক থাকতে হবে। পুষ্টিকর খাওয়ারের পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘অন্য বয়সীদের তুলনায় বেশি অসচেতন কিশোররাই। অলি-গলি থেকে শুরু করে সড়কে-বিভিন্ন স্থানে তাদের আড্ডাতো আছেই, স্বাস্থ্যবিধি বা মাস্ক ব্যবহারে অনিহাও অনেক বেশি। অন্তত সংক্রমণ রোধ করতে হলে পরিবারের সদস্যদের এ বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে। প্রয়োজন হলে বাসা-বাড়ি থেকে বের না হতে নিষেধ করতে হবে। কেননা বর্তমান ভেরিয়েন্ট কোন বয়স মানছে না। সকল বয়সীরাই আক্রান্ত হচ্ছেন’।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট