চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের দাপট : বাঁচতে হলে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে

সুপ্রতিম বড়ুয়া

২২ জুন, ২০২১ | ১১:৩৩ অপরাহ্ণ

শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সর্বত্রই মানুষের অবাধে বিচরণ। বেপরোয়াভাবে রাস্তায় নামছে সাধারণ মানুষ। শহরের প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে পাড়া মহল্লার অলিগলি দেখলে বোঝার উপায় নেই গতকাল ছিল সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত। সব রাস্তায় যানবাহনও চলছে সমানতালে। কিছু কিছু এলাকায় মিলেছে চিরচেনা যানজটের দৃশ্যও। স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এমন ঝুঁকিপূর্ণ সময়ে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব কঠোরভাবে পালন করা উচিত। কিন্তু তা না মেনে অবাধে রাস্তায় বেরিয়ে এসেছে মানুষ। শপিংমলগুলো খুলে দেয়ার কারণে মানুষ কেনাকাটার জন্য ভিড় করছে এতে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা আরও বেড়ে যাচ্ছে।

আমার সংসার, আমার দেশ, আমার পৃথিবী। আমরা সুস্থ থাকতে চাই, পরিবারের সদস্যদের সুস্থ রাখতে চাই, চাই প্রতিবেশীকেও। ঘরেই থাকতে চাই, বাইরে গেলে সামাজিক দূরত্ব মানতে চাই। কিন্তু কীভাবে? আমাদের দেশে করোনাভাইরাস শুরু হওয়ার পর সামাজিক দূরত্ব মানার বিষয়টি নিয়ে অনেক আলোচনা শুরু হয়। অনেকেই সমালোচনাও করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রলও দেখা গেছে। সরকারের পক্ষ থেকে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার জন্য নানারকম উদ্যোগ নিলেও বাস্তবায়ন তেমন হয়নি বলা চলে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ দূরত্ব নিশ্চিত সম্ভব হচ্ছে না কেন? তথ্য প্রযুক্তির যুগেও মানুষ কেন করোনাভাইরাস মহামারি থেকে রক্ষা পেতে সামাজিক দূরত্ব মানছেন না। শহরে কি সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত হচ্ছে? না হওয়ার পেছনে তাহলে কি সচেতন হওয়ার অভাব? আমার বেশ কয়েকদিনের অভিজ্ঞতা যা হলো, সচেতন না হওয়ার পেছনে কোনো অভাব না। যারা সামাজিক দূরত্ব মানছেন না, তারা এটাকে এক ধরনের বাহাদুরি ভাব মনে করছেন। কারও কারও বেলা একরোখা স্বভাব। আমার স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি আছে, পরিবারেরও, অনেকেরই থাকতে পারে। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা গণমাধ্যমে যখন দেখি বাইরে সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না, তখন ভাবিয়ে তোলে।

প্রথম যেদিন শনাক্তের ঘোষণা দেয়া হলো সেই দিন থেকে সরকারের বিধিবিধান মেনে চলার চেষ্টা করেছি। একেবারেই অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হইনি। একটা পরিবারের অনেক রকম চাহিদা থাকে সবার। আমারও আছে, আপনারও। বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, গণমাধ্যম ও মাইকিং ছাড়াও আমার মনে হয় প্রত্যেক ঘরে ঘরে এই বার্তা নিশ্চয় সবাই জানে যে, ঘরের বাইরে গেলে কিভাবে চলতে হবে? সামাজিক দূরত্ব কী? এখনো কেন আমরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছি না। প্রিয় জন্মভূমির নিয়ম না মানা এসব মানুষদেরকে কিছু কি বলার আছে। করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখছেন। পরামর্শ, সচেতন হওয়ার উপায়সহ অনেক কিছুই। ভালোই লাগে। এছাড়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গর্বিত সদস্যদের সবজি বাজার, পুলিশের পজেটিভ অনেক বিষয় নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ দেখে ও পড়ে আনন্দিত হই। দেশের ক্রান্তিকালে সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যেভাবে মানুষের কল্যাণে কাজ করছেন, তাতে গর্ববোধ লাগে। অনেকেই নীরবে নিভৃতে মানুষের পাশে আছেন। তারা গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হোক বা ফেসবুকে আত্মপ্রচার কামনা করেন না। নীরবে নিভৃতে মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন।

কবি কাজী নজরুল ইসলামের মানুষ কবিতার:

‘গাহি সাম্যের গান- মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহিয়ান।’ হ্যাঁ, মানবসেবা। নিভৃতচারী থেকে যারা করোনা মহামারির সময় মানুষের সেবা করছেন, তাদেরও জানাই স্যালুট। দুপুরে বাসা থেকে বলা হলো কিছু জরুরি ওষুধ ও অল্প বাজার লাগছেই। ফার্মেসিতে গিয়ে শুনলাম, কর্ণধারসহ চার সহোদর করোনার সাথে যুদ্ধ করছেন। বাজারে গেলাম, বেশিরভাগ মানুষ আমার মনে হয় ইচ্ছা করেই শরীরের ওপর এসে পড়ছেন। ভাবটা এরকম যে, আমি দূরে থাকছি কেন? পণ্য ক্রয় করার পর টাকা হাতে না দিলে বা ফেরত হাতে না নিলে দোকানদার যেভাবে মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন, মনে হয় অনেক বড় অপরাধ করছি। বাইরে বের হলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে চাইলেও বিরক্ত করেন অনেকেই। রাস্তা দিয়ে হেঁটে আসা বা যাওয়ার সময় একজন (অনূর্ধ্ব আঠার) খুব কাছে এসে শরীরে ঘেঁষে পড়েন।

বয়স্করাও কেউ কেউ। কৌতূহলী হয়ে এক তরুণকে জিজ্ঞেস করলাম এরকম করার মানে কী? উত্তর পেলাম, এতো নিয়ম মানলে আপনি ঘরেই থাকেন। হ্যাঁ আমি ঘরেই থাকতে চাই। কিন্তু নিয়ম না মানা কেউ কি আছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবার, বাজার ও ওষুধ একটু দিয়ে যাবেন ? না, তাদের কাউকে পাওয়া যাবে না। সামাজিক দূরত্ব নিয়ে সরকারের সমালোচনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখতে আর কত সময়। একটু পজিটিভ ভাবুন, দেখুন চারপাশে, মানুষ কেন একটু দূরত্ব রাখছেন না। এছাড়া ঘরে থাকুন প্রোফাইল দিয়েছেন যারা, ফেসবুকে লাইভ করে ঘরে থাকা ও সামাজিক দূরত্ব মানার সচেতন করার কথা বলছেন, নিশ্চয় ভালো দিক। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বাস্তবে কি বাইরে গিয়ে পারছেন মানতে বা কাউকে মানাতে? কিন্তু আমরা নিজেরা সব বুঝেও যখন মানছি না, তাহলে সরকারের গঠনমূলক সমালোচনার পাশাপাশি আসুন আমাদের নিজেদের দোষের সমালোচনাও করি।

সুপ্রতিম বড়ুয়া সহকারি অধ্যাপক, গণিত বিভাগ, রামু সরকারি কলেজ।

পূর্বকোণ/এএ/পারভেজ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট