চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

টিকাদান কমেছে ৯৭ শতাংশ

ইমাম হোসাইন রাজু 

১৩ এপ্রিল, ২০২১ | ১২:১৩ অপরাহ্ণ

দেশে গণহারে টিকাদান কর্মযজ্ঞ শুরু আগে ও প্রথম দিকে টিকা গ্রহণে অনীহা ছিল সাধারণের মাঝে। যদিও টিকাদান শুরুর সপ্তাহখানেক পর সেই চিত্র একেবারেই বদলে যায়। দিনদিন ওই সময়ে বাড়তে শুরু করে গ্রহীতার সংখ্যা।

অথচ টিকাদান কর্মসূচির দেড় মাস পর সেই চিত্রে ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে শুরু করে। যা এখনও বিদ্যমান। যেখানে দৈনিক টিকাদানের সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার পর্যন্ত পৌঁছেছে, সেই সংখ্যা এখন ৮০১ জনে এসে নেমেছে। অর্থাৎ টিকাদানের সংখ্যা প্রায় ৯৭ শতাংশই কমেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টিকা নিয়ে বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারণা প্রচার, বয়স সীমা বেঁধে দেয়া ও সচেতনতার অভাবসহ বিভিন্ন কারণে এ সংখ্যা কমেছে। তবে এমন বাস্তবতায় টিকাদানের কৌশল বদলানো এবং এ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রচারের পরামর্শ দিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার টিকা যেহেতু নতুন, তাই মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি থাকা স্বাভাবিক। এ সংকট দূর করতে প্রয়োজনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে বোঝাতে হবে এবং জনপ্রতিনিধি ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো প্রচারের যুক্ত করতে হবে। প্রয়োজনে অনস্পট নিবন্ধন করে টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে

এর আগে গত ৭ ফেব্রুয়ারিতে সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও শুরু হয় গণহারে টিকাদান কমর্যজ্ঞ। ওই দিন নগরীরসহ চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলায় টিকা গ্রহণ করেন ১ হাজার ৯০ জন। যা ধীরে ধীরে একদিনেই সর্বোচ্চ প্রায় ২৫ হাজার পর্যন্ত গিয়েছে। কিন্তু মার্চের শেষ দিকে এসে চিত্র পুরোই বদলাতে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত ২৫ হাজার থেকে এ সংখ্যা কমতে কমতে ৮০১ জনে এসে দাঁড়িয়েছে।

কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যারাই টিকা গ্রহণ করছেন, তাদের সিংহভাগই শহুরকেন্দ্রিক। কিন্তু গ্রামাঞ্চল বা শহরের ভেতরে থাকা নিম্মশ্রেণি বা বস্তিবাসী ও ভাসমান মানুষসহ কয়েকটি শ্রেণী এখনও টিকার আওতায় আসেনি। অনেকেই নিবন্ধন কী? সেটিও বোঝার কারণে আগ্রহী হয়ে ওঠছে না।  আর যদি এসব শ্রেণির মানুষকে টিকার আওতায় আনা না যায়, তাহলে কোভিড নিয়ন্ত্রণ করাও খুব দুষ্কর হয়ে পড়বে। তাই এসব শ্রেণির মানুষদের টিকার আওতায় আনতে প্রচারণা বাড়ানোর পরামর্শ তাদের।

মোবাইল টিমের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করে অনস্পট টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে এমন পরামর্শ দিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া বলেন, গ্রামাঞ্চল ও নিম্ম শ্রেণির মানুষতো করোনা রোগকে তোয়াক্কা করে না শুরু থেকেই। তাদের দৈনন্দিন জীবনে অন্ন জোগাতে দিনরাত কষ্ট করে। টিকা দিতে গেলে অনেক সময় নষ্ট হবে এই ধারণাও আছে। যার কারণে তারা অনীহা। একই সাথে অপপ্রচার মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। সংক্রমণ হার বেড়ে যাওয়াতে অনেকেই ভয় পাচ্ছে।  তাই এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ টিকাদানের জন্য অধিকতর প্রচার বাড়াতে হবে।

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান বলেন, ‘ইপিআই মডেল যেভাবে বিশ্বাসযোগ্যতা পেয়েছে, সেভাবেই কোভিড ভ্যাকসিন কর্মসূচিকে জনপ্রিয় করে তুলতে হবে। নিম্ন ও গ্রামাঞ্চলের মানুষ এপস বা অনলাইন নিবন্ধন কী, সেটিও তাদের কাছে সহজ করতে হবে। কমিউনিটি এনগেজম্যান্ট বাড়াতে হবে। ঘরে ঘরে গিয়ে টিকার সম্পর্কে জানাতে হবে। ওয়ার্ড প্রতিনিধি থেকে শুরু করে মেয়র-কাউন্সিলর পর্যন্ত সকলকে এ বিষয়ে প্রচার করতে হবে। তাহলেই মানুষ টিকা গ্রহণে আরও বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠবে।’

টিকা গ্রহণের সংখ্যা কমে যাওয়ার বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ ইতোমধ্যে ভাবতে শুরু করেছেন উল্লেখ করে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, একটি নির্দিষ্ট অংশকে প্রথমদিকে টিকার আওতায় আনা হবে। পরবর্তীতে ধাপেধাপে সকলকেই টিকার ব্যবস্থা করা হবে। এ নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ ভাবছেন। সকলের সহযোগিতা ছাড়া এ কাজ সম্পন্ন করা দুষ্কর উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন- দ্রুত সবাইকে টিকার আওতায় আনতে ওয়ার্ড পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিসহ সকলকে প্রচারের কাজ করতে হবে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট