চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

ভয়ংকর রূপে করোনা

নিজস্ব প্রতিবেদক 

২ এপ্রিল, ২০২১ | ১:০৯ অপরাহ্ণ

দিনের দিন আরও সংক্রমণাত্মক হয়ে উঠছে করোনা। গত বছরের শেষ দিতে এসে কিছুটা স্বস্তি দেখালেও চলতি বছরের মার্চ মাসে এসে সংক্রমণের গতি বাড়ছেই। একদিকে দৈনিক শনাক্তের হার অন্যদিকে মৃত্যু সংখ্যা। দুটোই হুড়হুড়ে বাড়তে শুরু করেছে। সংক্রমণের বেড়ে যাওয়া এ মাত্রা অনেকটাই ভয়াবহ বলেও দেখছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে, সংক্রমণ হারের এমন গতি প্রাথমিকভাবে ‘সেকেন্ড ওয়েভ’র দিকে যাচ্ছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ পর্যায়ে এসেও যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তাহলে সামনের দিনে সংক্রমণ আরও বেশি বৃদ্ধি পাবে। ফলে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা খুবই দুষ্কর হয়ে পড়বে। তাই এ মুহুর্তেই কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণসহ সকলকে সচেতনতা বাড়ানোর পরার্মশ তাদের।

তথ্য অনুসারে, গেল একদিনেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে আরও ৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা গত বছরের ৩০ জুনের পর সর্বোচ্চ মৃত্যু। শনাক্ত হয়েছে ৬ হাজার ৪৬৯ জন। এরমধ্যে চট্টগ্রামেও শনাক্তের হার একদিনের ব্যবধানে বেড়েছে আড়াইগুণ। গেল একদিনে দৈনিক শনাক্তের হার ২৬ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। যা গেল কয়েক মাসের চেয়ে সর্বোচ্চ সংখ্যা। ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত রোগীর নতুন রেকর্ড হয়েছে; একদিনে মৃত্যু হয়েছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষের।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৬ হাজার ৪৬৯ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে; মত্যু হয়েছে আরও ৫৯ জনের। একদিনে শনাক্ত রোগীর এই সংখ্যা দেশে মহামারী শুরুর পর থেকে সর্বোচ্চ। নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৬ লাখ ১৭ হাজার ৭৬৪ জনে। আর দেশে করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাংলাদেশে গত বছর ৮ মার্চ করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার এক বছর পর সোমবার প্রথমবারের মত এক দিনে পাঁচ হাজারের বেশি নতুন রোগী শনাক্তের খবর আসে। তার মধ্য দিয়ে দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছয় লাখ ছাড়িয়ে যায়। তিন দিনের মাথায় দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছয় হাজারও ছাড়িয়ে গেল।

দৈনিক মৃত্যুর এই সংখ্যা মহামারী শুরুর পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছিল সরকার, বুধবার তা নয় হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে ৩০ জুন একদিনেই ৬৪ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়, যা একদিনের সর্বোচ্চ মৃত্যু। টানা কয়েক দিন ধরে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হারও বেড়ে ২২ দশমিক ৯৪ শতাংশ হয়েছে যা গত ৯ আগস্টের পর সর্বোচ্চ। গত একদিনে যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ৩৫ জন পুরুষ আর নারী ২৪ জন।

এদিকে, মাত্র এক দিনের ব্যবধানেই চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্তের হার দ্বিগুণ বেড়েছে। যেখানে একদিন আগেও দৈনিক শনাক্তের হার ছিল মাত্র ১০ শতাংশ। একদিন পর এ সংখ্যা ২৬ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। যা এক প্রকার পিলে চমকানোর মতোই। দৈনিক শনাক্তের এ হার গেল কয়েকমাসের তুলনায় সর্বোচ্চ সংখ্যা।

চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত হয়ে একদিনেই আরও দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। যাদের একজন নগরের বাসিন্দা, অন্যজন উপজেলার বাসিন্দা বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগ। এ নিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৩৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত বেড়ে যাওয়া ও মৃত্যুর কারণ হিসেবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের উদাসীনতা, স্বাস্থ্যবিধি না মানা, মাস্ক ব্যবহারে অনিহাই এর জন্য দায়ী।

তথ্য অনুসারে, চট্টগ্রামের সরকারি বেসরকারি ছয়টি ও কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে সর্বমোট ১ হাজার ১১৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এরমধ্যে ২৮৭ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের উপস্থিত পাওয়া যায়। গেল বুধবার এ আটটি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় এসব রোগী শনাক্ত হয়। এ নিয়ে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪০ হাজার ২৮৩ জনে এসে দাঁড়িয়েছে। এদিকে, একই সময়ে আক্রান্তদের মধ্যে নতুন করে ৭৫ জন রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেছেন। এ নিয়ে আক্রান্তদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে ওঠেছেন ৩৪ হাজার ৭৯ জন। আর মৃত্যু হওয়া দুইজন নিয়ে এখন পর্যন্ত করোনায় চট্টগ্রামে প্রাণ গেছে ৩৮৮ জনের।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট