চট্টগ্রাম শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

ভালো থাকুন, ভালো রাখুন আপনার হার্ট

ডা. গোলাম মোর্শেদ

২৪ মার্চ, ২০২১ | ২:৫৮ অপরাহ্ণ

হার্ট এটাকের জন্য কোলেস্টেরল, অতিরিক্ত ওজন, ব্যায়াম না করা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এসব অনেক কারণের কথা বলি। এ দেশে মানুষ কতো আর চর্বি কোলেস্টেরল খায়? পৃথুল শরীর ক’জনের? তবুও হার্ট এটাক তো হচ্ছে। তো সেই হার্ট এটাকের কারণ কি?

হয়তো নেতিবাচক সামাজিক চাপ, অস্বাভাবিক মানসিক চাপ। গবেষণায় দেখা গেছে, ব্যক্তিত্বের নেতিবাচক দিক ও আবেগের নেতিবাচক দিক হার্ট এটাকের জন্য বড় কারণ। জীবনযুদ্ধ চলছে অথচ পুরস্কার নেই। ভালো থাকছি, সৎ থাকছি তবু নিগৃহীত হচ্ছি। যোগ্য লোক ঠিক জায়গায় থাকছে না। এ যন্ত্রণা, এ মানসিক নিগ্রহ অনেকের রক্তচাপ বাড়াচ্ছে, হার্ট এটাক ঘটাচ্ছে। জীবনে চাপ থাকলে, লড়াই থাকলে জীবন আহত হয় না, যদি এর পুরস্কার থাকে, প্রশংসা হয়। ভালো কাজের জন্য, সৎ থাকার জন্য যদি পুরস্কার থাকে তাহলে বরং হার্ট আরো সতেজ থাকে।

দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপে যেমন হার্টের রক্তনালীতে ব্লক হয়ে হার্ট এটাক হতে পারে তেমনি আকস্মিক অতিমাত্রার কোন মানসিক চাপে হার্ট ফেইলুরও হয়ে যেতে পারে। একে বলে ব্রোকেন হার্ট সিন্ড্রম। এ রোগে রোগীর বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট হয়। হার্ট ফেইলুরের চিকিৎসা নিতে হয় রোগীকে।

বিষণ্ণতা কি হার্ট এটাকের জন্য দায়ী

বিষণ্ণতা হার্ট এটাকের অন্যতম একটি কারণ। যাদের বিষণ্ণতা আছে তাদের হার্ট এটাক হওয়ার ঝুঁকি ৪ গুণ বেশি। যাদের বিষণ্ণতা আছে তাদের রক্তে স্ট্রেস হরমোন বেশি থাকে। শরীর চর্চার সঙ্গে সঙ্গে এদের হৃদছন্দের উঠানামা সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এদের রক্ত জমাট বাঁধে সহজে। তাই এদের রক্তনালী সহজে রুদ্ধ হয়ে যায়, হার্ট এটাক হওয়ার পথ সুগম হয়।

বিষণ্ণ লোক সহজে অনেক বদভ্যাস ছাড়তে পারেন না। ধূমপান ও মদ্যপানের মতো বদভ্যাস। এগুলোও হার্ট এটাকের রিস্ক বাড়িয়ে দেয়।

তীব্র মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তায় রক্তে ঝলকে ঝলকে বেড়িয়ে আসে এড্রেনালিন ও অন্যান্য স্ট্রেস হরমোন। এতে হৃদপিন্ড ধুঁকপুক করবে দ্রুত, রক্তচাপ ফুসে ওঠবে দ্রুত, শক্তি পাওয়ার জন্য রক্তে বাড়বে চর্বিকণা।

বারবার রক্ত যদি ফুসে ওঠে তাহলে ধমনীর আস্তরণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। করোনারিতে ধমনীর পথ রোধ হতে পারে। হৃদপেশীতে হতে পারে রক্তের অভাব।

প্রথম হার্ট এটাকের পর বেঁচে ওঠা, বেঁচে থাকা অনেকটা নির্ভর করে মনের উপর। দুশ্চিন্তা খুব বেশি হলে দ্বিতীয় হার্ট এটাকের ঝুঁকি খুবই বেশি।

রাগ হার্টের জন্য আরো খারাপ

রেগে গেলে শ্বাস দ্রুত হবে, হৃদস্পন্দন দ্রুত হবে, রক্তচাপ বাড়বে, হজম কমে যাবে, রক্তের সুগার বেড়ে যাবে, অন্য অঙ্গ থেকে রক্ত চলে আসবে হৃদপিন্ডে। বেড়ে যাবে এড্রেনালিন ও অন্যান্য স্ট্রেস হরমোন। যা হার্টের রক্তনালীতে চর্বি জমানো ত্বরান্বিত করে হার্ট এটাক করাতে ভূমিকা রাখে।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, ক্রোধ ও দুশ্চিন্তা হৃদছন্দে অনিয়ম আনে। হৃদছন্দচ্যুতি খুবই শঙ্কার ব্যাপার । ছন্দচ্যুতি বেশি হলে হৃদপিন্ড মগজ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে রক্ত সরবরাহ করতে পারে না।

আবেগকে দমন করতে হবে। সংযত হওয়া শিখতে হবে। হাসুন, হাসতে শিখুন। প্রতিদিন ১০ মিনিট হাসুন। মন খুলে হাসতে পারে এমন বন্ধুদের সাথে দিনে অন্তত একবার মিনিট দশেকের জন্য আড্ডা দিন। হতে পারে সেটা টেলিফোন বা ভিডিও কল।

মজার কোনো কাজ, কোনো জিনিস বেছে নিন। নিজেকে উপভোগ করা এবং দুর্ভাবনা করা এক সঙ্গে চলতে পারে না! হাসতে শিখুন। বন্ধুদের সঙ্গে বা বাচ্চাদের সাথে কোনো খেলা খেলুন। নতুন কিছু করার চেষ্টা করুন। পিকনিক, পার্টি, মেলা, কতো বিনোদনের জিনিস। যা করবেন অন্যদের সঙ্গে অন্যদের নিয়ে মিলেমিশে করুন। যতো বেশি করবেন ততো বেশি উৎফুল্ল হবেন।

চারপাশের মানুষজন এড়িয়ে না চলে সবার সাথে কথা বলুন। হেসে হেসে কথা বলুন। অন্যের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। নিজের সঙ্গেও কথা বলুন। চারপাশে যা ঘটছে তা থেকে আপনি যদি বিরক্ত হন, বিষণ্ণ হন তা হলে সেখান থেকে আপনার ভিতরে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হবে। যা আপনার হার্টের জন্য মঙ্গলজনক নয়। নিজে নিজেই এসব মোকাবেলা করুন। গভীর শ্বাস নিন এবং এসব পরাজয়ের চক্র না ভেবে আনন্দ রোমাঞ্চ বলে ভাবতে শিখুন। যা চারপাশে ঘটছে এর নামই কেবল জীবন নয়, যা চিন্তা করছেন তাও জীবনের অংশ। তাহলেই হৃদপিন্ড সহসাই ইতিবাচক স্পন্দনে সাড়া দেবে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট