চট্টগ্রাম মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪

‘ডেঞ্জার জোন’ জেনারেল হাসপাতাল!

নিজস্ব প্রতিবেদক 

২৩ মার্চ, ২০২১ | ১:০৪ অপরাহ্ণ

‘ডেঞ্জার জোন’-এ পরিণত হচ্ছে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও সিভিল সার্জন কার্যালয় এলাকা। এ দুটি সরকারি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে কোভিড রোগীর সাত ধরণের সেবা কার্যক্রমের কারণে এমন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

কোভিড পজিটিভ রোগীদের চিকিৎসা, নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা এবং টিকাদান কার্যক্রম। এ চারটি কাজ চলে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে। তার অদূরেই সিভিল সার্জন কার্যালয়ে বিরতিহীনভাবে চলছে প্রবাসীদের নমুনা সংগ্রহ, নিবন্ধন এবং সার্টিফিকেট প্রদানের এই তিন ধরণের কার্যক্রম। প্রতিদিন কমপক্ষে দশ হাজারের মতো মানুষ পাশাপাশি অবস্থিত সরকারি এ দুই প্রতিষ্ঠানে কোভিড সম্পৃক্ত সাত ধরনের সেবা নিতে আসেন।

গত বছরের জুলাই মাসে প্রবাসীদের করোনার নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়। প্রথম দিকে এ সংখ্যা কম থাকলেও ধীরে ধীরে তা বাড়তে শুরু করে। যদিও ওই সব নমুনায় পজিটিভ সংখ্যা তেমন পাওয়া যায়নি। অনেক ক্ষেত্রে এ হার শূন্যও ছিল। সদ্যগত ফেব্রুয়ারি মাসের একটি চিত্রে দেখা যায়- গড়ে ওই মাসে প্রতিদিন এক হাজার প্রবাসীর নমুনা পরীক্ষা করানো হয়। যাতে শূন্য থেকে সর্বোচ্চ ৫ জনের ফলাফল পজিটিভ পাওয়া যায়। অথচ চলতি মাসে এসে এ সংখ্যা এখন সর্বোচ্চ ২০ জনে এসে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ গেল মাসগুলোর তুলনায় এখন প্রবাসীদের করোনায় আক্রান্ত রোগী বাড়ছে প্রায় চারগুণ বেশি।

সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রতিদিনই জেনারেল হাসপাতাল ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ে প্রায় দশ হাজার মানুষ আসেন সেবা নিতে। এরমধ্যে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে টিকাদান কার্যক্রম, করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা, আবার অসুস্থ রোগীদের নমুনা সংগ্রহও করা হয়ে থাকে সেখানে। ঠিক হাসপাতালের পাশেই সিভিল সার্জন কার্যালয়েও সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তিনভাগে ভিড় করছেন সাধারণ মানুষ ও প্রবাসীরা। এর একাংশ ভোর থেকে নমুনা জমা দিতে, আরেকভাগ রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে এবং অন্যরা নমুনা পরীক্ষার সার্টিফিকেট নিতে ভিড় করেন। এ তিনভাগেই প্রতিদিন কার্যালয়ে অন্তত চার হাজারের অধিক মানুষ বিচরণ করেন। স্বল্প পরিসরের এই গ-ির মধ্যেই এতগুলো মানুষের পদচারণার কারণে পুরো এলাকা বিপজ্জনক হয়ে ওঠছে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘বিষয়গুলো বহু আগেই আমাদের নজরে আসে। যার জন্য বিআইটিআইডি হাসপাতালে প্রবাসীদের জন্য বুথ করার জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ে তিন হাসপাতাল- ডায়াগনস্টিক সেন্টারেও চালু করার জন্য চিঠি দেয়া হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি। তাছাড়া এখন নতুন করে অন্যস্থানে নিতে গেলে কিংবা আরও বুথ বাড়াতে গেলে যে পরিমাণ জনবল প্রয়োজন, তা মোটেও নেই’।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংকীর্ণ এলাকা থেকে দূরে প্রবাসীদের বুথ স্থাপন করাসহ পুরো এলাকাটি ফাঁকা রাখতে হবে। একই সাথে টিকা কার্যক্রমও যেন স্বাভাবিক চলে সেটাও নজর দিতে হবে। প্রয়োজন হলে প্রবাসীদের জন্য সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে অন্যস্থানে একাধিক বুথ বাড়ানো যেতে পারে। কেননা- এক স্থানে হাজার মানুষের চলাফেরা। কারা কোভিডে আক্রান্ত সেটা বলাটাও মুশকিল। তাই দ্রুত এ বিষয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আবদুর রব মাসুম বলেন, যেখানে টিকাদান সেখানেই কোভিড চিকিৎসা। আবার একই স্থানে নমুনা সংগ্রহ, প্রবাসীদেরও প্রচুর ভিড়। সংকীর্ণ স্থানে এতকিছু থাকলে কিংবা এতো মানুষের ভিড় থাকলে করোনাতো এমনিতেই ছড়াবে’।

পরামর্শ দিয়ে এ চিকিৎসক আরও বলেন, ভাইরাস থেকে নিজেদের রক্ষা করতে কিংবা সংক্রমণ হার হ্রাস করতে বুথ বাড়ানোর বিকল্প নেই। যারা সেবা নিতে আসবেন, তাদেরও সচেতন হতে হবে। ভিড় থেকে বেরিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে কর্মীদের সহযোগিতা করতে হবে। মাস্ক পরিধান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করতে হবে। তা না হলে নিজেরাই ভাইরাস বহন করে পরিবারের অন্য সদস্যদের ক্ষতির মুখে ফেলবো।

জানা যায়, গত বছরের জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ১ লাখ ৪২ হাজার ৮৫২ জন প্রবাসী ও বিদেশ যাত্রীর নমুনা পরীক্ষা করা হয়। যাতে এ পর্যন্ত পজিটিভ ফল পাওয়া যায় ১ হাজার ৫৫১ জনের। এরমধ্যে শুধুমাত্র চলতি মাসের শুরু থেকে গত ২০ মার্চ পর্যন্ত পজিটিভ শনাক্ত হয় ২১৪ জনের। যা গেল আট মাসের গড় হিসেবে প্রায় দ্বিগুণ।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ও জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘গেল ১৭ মার্চ-ই একটি বুথ থেকে দু’টি বুথ করা হয়েছে। তবুও সামলাতে কঠিন হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মানুষের সচেতনা নেই বললেই চলে। সচেতন হলে অনেকটাই ঝুঁকি মুক্ত থাকা সম্ভব’।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট