চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

খালি নেই শয্যা-আইসিইউ

ইমাম হোসাইন রাজু 

১৮ মার্চ, ২০২১ | ১২:০০ অপরাহ্ণ

শ্বাসকষ্ট হলে কেমন লাগে, বিধাতা দেখিয়েছেন আমাকে। শুধু একটা ফরিয়াদ.. শ্বাসের কষ্ট দিওনা প্রভু মানুষকে। অচিরেই মুক্তি দাও প্রভু মানুষকে এই মহামারী থেকে। মানুষ যে আর পারে না!’

শ্বাসকষ্ট নিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জাহানারা শিখা নামে এ নারী চিকিৎসক নিজের কিছু বাস্তবতা তুলে ধরেন ফেসবুকে। যিনি চট্টগ্রামের করোনার প্রকোপ শুরুর প্রথম দিকেই মানুষের সেবায় ছিলেন প্রখর। প্রায় এক বছর পর  শ্বাসযন্ত্রণা নিয়ে এখন নিজেই ভুগছেন।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আরেক চিকিৎসক ডা. আব্দুর রব। তিনি সম্প্রতি তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন-‘আমরা কি আবার সেই ভয়ংকর দিনগুলোতে ফিরে যাচ্ছি’। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়াও মানুষের মধ্যে সচেতনার সৃষ্টি করতে নিজ ফেসবুকে লিখে যাচ্ছেন। সবশেষ এ কর্মকর্তার ওয়ালে লেখা ছিল ‘সাত সপ্তাহে সর্বোচ্চ’।

আলোচ্য এসব চিকিৎসক ছাড়াও চট্টগ্রামে সংক্রমণ ফের বৃদ্ধিতে উৎকণ্ঠায় আছেন অন্য চিকিৎসক থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও। প্রতিদিনই রোগীর সংখ্যা বাড়ায় শঙ্কায় স্বাস্থ্য বিভাগও। এরমধ্যে নতুন করে শঙ্কা দেখা দিয়েছে রোগীদের চিকিৎসা সেবায় হাসপাতালের শয্যা। শারীরিক পরিস্থিতি অবনতি হওয়া রোগীদের ক্ষেত্রে আইসিইউ শয্যাও এখন চট্টগ্রামে নেই বললেই চলে।

তথ্য অনুসারে, চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের কোভিড রোগীদের সংখ্যা গেল মাসের তুলনায় বেড়েছে কয়েকগুণ। পাশাপাশি আইসিইউতেও বেড়েছে রোগীর চাপ। এরমধ্যে কোভিড চিকিৎসা দেয়া সরকারি-বেসরকারি ২৭টি হাসপাতালেই ৯০ শতাংশের বেশি আইসিইউ শয্যা রোগীতে পূর্ণ। সরকারি হাসপাতালগুলোতে স্বল্প সংখ্যক সাধারণ শয্যা খালি থাকলেও বেসরকারি পর্যায়ে কোন শয্যাই আপাতত খালি নেই।

কোভিড চিকিৎসার সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাঝখানে করোনার সংক্রমণ কমে গেলেও তা আবার তীব্র হচ্ছে। সংক্রমণ নতুন করে তার রূপ বদল করছে। হাসপাতালে এখন যে সকল পজিটিভ রোগী ভর্তি হচ্ছেন, তাদের ধরনও আগের মতো নয়। তাই এটি হয়তো সামনে আরও ভয়ংক হতে পারে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোভিড চিকিৎসায় চট্টগ্রাম নগরীতে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে ২৭টি। যার মধ্যে আইসিইউ শয্যা রয়েছে এমন সংখ্যা মাত্র ১৪টির। এ ১৪টি হাসপাতালের কাগজে কলমে আইসিইউ শয্যা রয়েছে সব মিলিয়ে ১৩৭টি। যদিও বাস্তবে তা অনেক কম। ১৩৭টি আইসিইউ’র শয্যা থাকলেও রোগীদের চিকিৎসা দেয় এমন সংখ্যা অর্ধেকের কম। আর তাতে বর্তমানে ৯০ শতাংশের বেশি রোগী ভর্তি আছেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগ।

এরমধ্যে গতকাল বুধবার কোভিড ডেডিকেটেড চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে থাকা ১০টি আইসিইউ শয্যা পূর্ণ রয়েছেন। খালি না থাকায় অন্যত্র পাঠাতে হচ্ছে কাউকে। আর সাধারণ শয্যার রোগী আছেন ৪৬ জন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে তিন জন, সাধারণ শয্যায় ২৪ জন এবং উপসর্গ নিয়ে ৪৬ জন ভর্তি রয়েছেন। বেসরকারি পর্যায়ের উল্লেখযোগ্য হাসপাতালগুলোর মধ্যে, মা ও শিশু হাসপাতালের আইসিইউতে ১৮ জন আর সাধারণ শয্যায় ৭৯ জন, পার্কভিউ হাসপাতালের আইসিইউতে ৮ জন, সাধারণ শয্যায় ৩০ জন, ম্যাক্স হাসপাতালের আইসিইউতে ৬ জন এবং সাধারণ শয্যায় ২৭ জন, ডেলটা হাসপাতালে ৪ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। বাকি হাসপাতালগুলোর চিত্রই একই রকম।

বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, সপ্তাহ দুয়েক আগেও বেশিরভাগ আইসিইউ শয্যা ছিল খালি। সাধারণ শয্যাতেও রোগী তেমন ছিল না। কিন্তু তা দিনদিন বাড়তে শুরু করেছে। রোগীর পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় প্রয়োজন বাড়ছে আইসিইউ শয্যার। শয্যা খালি না থাকায় রোগীদের ফেরত পাঠাতেও বাধ্য হচ্ছেন কর্তৃপক্ষ।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি পূর্বকোণকে বলেন, চলতি মাসের শুরু থেকে তা ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করে। অনেকের ধারণা টিকা নেয়ার পর মাস্ক ব্যবহার করতে হবে না, কিংবা স্বাস্থ্যবিধি না মানলেও চলবে।  যার কারণে নতুন করে আবার সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। এরমধ্যে মঙ্গলবার যে পরিমাণ রোগী শনাক্ত হয়েছে, তা গেল তিন মাসের সর্বোচ্চ। এখন থেকে যদি সতর্ক না হওয়া যায়, তাহলে সামনের দিন ভয়ংকর হতে পারে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট