চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

কিডনি ডায়ালাইসিস: চিকিৎসা ব্যয় যোগাতে সর্বস্বান্ত

ইমাম হোসাইন রাজু 

১১ মার্চ, ২০২১ | ১:১৮ অপরাহ্ণ

রাউজানের বাসিন্দা মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। বছর কয়েক আগে এ প্রবাসী কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে দেশে ফেরত আসেন। উন্নত চিকিৎসা নিতে দেশের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালের পাশাপাশি পাড়ি দেন পার্শ্ববর্তী ভারতেও। চিকিৎসকরা কিডনি পরিবর্তনের পরামর্শ দিলেও অর্থ আর কিডনি সংগ্রহের সংকটে দেশে আসেন এ প্রবাসী। শেষ পর্যন্ত ডায়ালাইসিস করেই জীবযাপন করছেন তিনি।

ইতোমধ্যে গেল ১ বছর ৩ মাসে ডায়ালাইসিস খরচ দিতে গিয়ে বিক্রি করেছেন স্ত্রীর স্বর্ণালংকার, নিজের জমি ও সিএনজি অটোরিকশা। তবুও হাসপাতালের শয্যায় পড়ে থেকে মৃত্যুকে পাহারা দিয়ে যাচ্ছেন জসিম উদ্দিন।  চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের কিডনি বিভাগে চিকিৎসাধীন জসিম উদ্দিন জানান, কিডনি ডায়ালাইসিস করতে প্রতি সপ্তাহে খরচ হচ্ছে তিন হাজার টাকা। পাশাপাশি ওষুধও ক্রয় করতে হচ্ছে। প্রবাসে আয় করে যা সঞ্চয় করেছেন, তা ইতোমধ্যে বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি। এখন চিকিৎসা খরচ ও সপ্তাহের ডায়ালাইসিস এবং ওষুধের খরচ মেটাচ্ছেন মানুষের দানেই।

শুধু জসিম উদ্দিনই নন, ডায়ালাইসিস, ওষুধ ও আনুষঙ্গিক ব্যয় মেটাতে গিয়ে পথে নামতে বাধ্য হচ্ছেন হাজারোও মানুষ। তাই ডায়ালাইসিস ব্যয় কমানোসহ সরকারির পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালে এ খরচ হাতের নাগালে নিয়ে আশার পরামর্শ সংশ্লিষ্টদের।

সংশ্লিষ্টদের দেয়া তথ্য মতে, কিডনি রোগীদের মধ্যে যারা ডায়ালাইসিস করে থাকেন, তাদের মাত্র ২০ শতাংশ রোগী পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা নিতে পারেন। ১০ শতাংশ রোগী দীর্ঘদিন সেবা নিলেও বাকি ৭০ শতাংশই অর্থের অভাবে মাঝপথে ডায়ালাইসিস বন্ধ করতে বাধ্য হন। অর্থাৎ এ ৮০ শতাংশ রোগীই একটা সময়ে এসে অর্থ যোগাড় না করতে পেরে চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুবরণ করছেন। তাই ডায়ালাইসিস ব্যয় কমিয়ে হাতের নাগালে নিয়ে আশার পরামর্শ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের।

প্রত্যন্ত অঞ্চলেও কিডনি রোগের সেবা ছড়িয়ে দিতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. নুরুল হুদা বলেন, ‘দ্রুত সময়ের মধ্যে জেলা পর্যায়ে সদর হাসপাতালগুলোতে কিডনি রোগীদের জন্য চিকিৎসা সেবা চালুর প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এতে করে প্রতিটা অঞ্চলের মানুষ তাদের নাগালেই এ সেবা পেয়ে যাবেন।’

চমেক হাসপাতালে কিডনি ওয়ার্ডে দ্বিগুণ রোগী

৩০ শয্যা নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের তৃতীয় তলায় অবস্থিত নেফ্রোলজি বা কিডনি ওয়ার্ড। কিন্তু সেখানে বর্তমানে ৬০ থেকে ৯০ জনের বেশি রোগীকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসকরা জানান, এ সংখ্যা কোন কোন সময়ে শতকের উপরে যায়। শয্যার চেয়ে রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় মেঝেতে রেখেও চিকিৎসা দিতে হচ্ছে অনেককেই।

নেফ্রোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. নুরুল হুদা বলেন, পৃথিবীর অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেরও কিডনি চিকিৎসা ব্যবস্থায় সুনাম রয়েছে। দুই-তিন বছর আগেও দেশের একটি ফাউন্ডেশন এ কাজে বিশ্বের দ্বিতীয় অবস্থান থাকায় পুরুস্কারও পেয়েছে।’

দেশে ৪০ হাজার মানুষ দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগে আক্রান্ত

এদিকে কিডনি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুসারে, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। দেশে প্রতিবছর ১৬ হাজার রোগী মারা যায়। আট লাখ রোগীর ডায়ালাইসিস প্রয়োজন হয়। অবস্থা বুঝে সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার এ ডায়ালাইসিস করতে হয়। আর প্রতি ডায়ালাইসিসে খরচ হয় আটশ’ থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত। যা সপ্তাহে তিন হাজার থেকে শুরু করে দশ হাজার টাকা পর্যন্ত পৌঁছায়। আবার হাসপাতাল ভেদে এ ব্যয় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত যায়। কিন্তু মাত্র ৩০ হাজার রোগী এ ডায়ালাইসিস করতে পারেন।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট