চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

করোনার টিকাদান: শঙ্কা রূপ নিল আগ্রহে

ইমাম হোসাইন রাজু 

১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ | ১২:৩০ অপরাহ্ণ

দেশে করোনার টিকা নিয়ে শুরু থেকেই ভয়-ভীতি আর টিকা গ্রহণের অন্তহীন দ্বিধায় ছিল সকলেই। শুরু দিকে বিচ্ছিন্ন খবরে অনাগ্রহীও ছিল অনেকেই। গণহারে টিকাদান শুরুদিনেও চট্টগ্রামের টিকা পেতে আগ্রহী দেখিয়েছিল মাত্র ২৯ হাজার ৬৬০ জন সম্মুখযোদ্ধা।

অথচ পরবর্তী ছয়দিনেই সে সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে। অর্থাৎ ছয়দিনে টিকা গ্রহণ করতে আগ্রহ নিয়ে সাড়ে তিনগুণের বেশি মানুষ নিবন্ধন করেছেন। যদিও এ নিবন্ধন প্রাথমিকভাবে বন্ধ রয়েছে। তবে সম্মুখসারির যোদ্ধাদের পাশাপাশি সাধারণের এমন সাড়ায় উচ্ছাসিত স্বাস্থ্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্টরা।

তথ্য অনুসারে, গত ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নগরীসহ চট্টগ্রাম জেলাতে ২৯ হাজার ৬৬০ জন মানুষ টিকা গ্রহণের জন্য অনলাইনের মাধ্যমে নিবন্ধন করেন। দ্বিতীয় দিনে তা ৩২ হাজার ৪৬৬ জনে দাঁড়ায়। তৃতীয় দিনে নিবন্ধনের সংখ্যা প্রায় ১৭ হাজার বেড়ে ৪৯ হাজার ৯৩১ জনে দাঁড়ায়। সে সংখ্যা গতকাল শনিবার পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার ৯০৫ জনে। অর্থাৎ প্রথম দিনের তুলায় টিকা পেতে নিবন্ধন বেড়েছে ৩ দশমিক ৭৭ গুণ।

এদিকে, গণহারে টিকা কার্যক্রম শুরুর পর ছয়দিনেই ৫৭ হাজার ৯০২ জন ইতোমধ্যে টিকা গ্রহণ করেছেন। শুধুমাত্র গতকাল শনিবার একদিনেই টিকা নিয়েছেন প্রায় ২১ হাজার মানুষ। জেলা সিভিল সার্জন ও সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যে এমনটি জানা যায়।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও কোভিড ভ্যাকসিন কার্যক্রম কমিটির সদস্য সচিব ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী বলেন, ‘১৪ উপজেলার চেয়ে নগরীতে টিকা পেতে নিবন্ধন করেছেন ৮১ হাজার ৫শ জন। আর ১৪ উপজেলায় ৩০ হাজার ৪০৫ জন নিবন্ধন করেছেন। যদিও এরমধ্যে অর্ধেকের বেশি মানুষকে ইতোমধ্যে টিকা দেয়া হয়েছে। বাকিদেরও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টিকা দেয়া হবে। এছাড়া যারা নিবন্ধন করতে পারেননি, তাদের বিষয়েও শীঘ্রই সিদ্ধান্ত আসবে। ধাপে ধাপে সকলকেই টিকার আওতায় আনা হবে।’

অনলাইনে নতুন নিবন্ধন বন্ধ : চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ১১টি কেন্দ্রে মধ্যে সশস্ত্রবাহিনীর চার কেন্দ্র ছাড়া বাকি সাতটি কেন্দ্রে সাধারণ মানুষকে টিকাদান কার্যক্রম চলমান। ইতোমধ্যে গত বুধবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের কোটা পূরণ হয়ে যাওয়ায় তা বন্ধ করা হয়। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে অন্য পাঁচ কেন্দ্রেরও কোটা পূরণ হয়ে যাওয়া বন্ধ হয় ওইসব কেন্দ্রের নিবন্ধনও। গতকাল শনিবার পর্যন্ত নগরীর সকল কেন্দ্রের নিবন্ধন বন্ধ রয়েছে। এরমধ্যে ৭৫ হাজার নগরবাসীর জন্য দেড় লাখ ডোজ টিকা ব্যবস্থা করা হলেও ইতোমধ্যে নিবন্ধনের সংখ্যা সাড়ে ৮১ হাজার ছাড়িয়েছে। যদিও নিবন্ধনকৃত বাকিদের টিকা পেতে সমস্যা হবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

প্রথম ধাপ শেষে করা যাবে নিবন্ধন : প্রাথমিকভাবে নিবন্ধন বন্ধ করা হলেও পরবর্তীতে তা খুলে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, কোটা পূরণ হওয়ায় প্রাথমিক অবস্থায় এ নিবন্ধন বন্ধ করা হয়েছে। তবে উপজেলা পর্যায়ে এখনও এ কার্যক্রম চলছে। ওই সব কেন্দ্রেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলে তা বন্ধ করা হবে। তবে পরবর্তীতে তা খুলে দেয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘যারা অনলাইনে নিবন্ধন করেছেন, তারা টিকা পেতে অপেক্ষা করছেন। বিষয়টি বিবেচনা করেই কেন্দ্রীয়ভাবে তা বন্ধ করেছেন। নিবন্ধনকৃতদের  টিকাদান শেষ হলে পরবর্তীতে আবার খুলে দেয়া হবে। একটা অংশকে টিকা দেয়া শেষে বাকিদেরও ধাপে ধাপে টিকার আওতায় আনা হবে বলেও জানান তিনি।’

৬ষ্ঠ দিনে টিকা নিলেন প্রায় ২১ হাজার : টিকাদান কার্যক্রমের ৬ষ্ঠ দিন ছিল গতকাল শনিবার। অন্য দিনের তুলনায় এ দিনও প্রতিটি কেন্দ্রেই ছিল মানুষের উপচেপড়া ভিড়। টিকাদানের এ দিনে নগরীর ১০ কেন্দ্র এবং ১৪ উপজেলায় টিকা নিয়েছেন ২০ হাজার ৯০৮ জন। এরমধ্যে নগরীর ১০ কেন্দ্রে টিকা নিয়েছেন ১১ হাজার ১৮৭ জন। যারমধ্যে সবচেয়ে বেশি টিকা দেয়া হয়েছে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে। এ কেন্দ্রে এ দিন ২ হাজার ৪৬০ জনকে টিকা দেয়া হয়েছে। এছাড়া উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি টিকা দেয়া হয়েছে রাউজান উপজেলায়। এ উপজেলায় শনিবার ১ হাজার ৪৪০ জনকে টিকার আওতায় আনা হয়েছে।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, প্রতিদিনই টিকাগ্রহণের সংখ্যা বাড়ছে। কেন্দ্রগুলোতেও আগ্রহীদের ভিড় বেড়েছে। যদিও ইতোমধ্যে প্রতিটি কেন্দ্রে বুথের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। আশা করছি সকলকেই টিকার আওতায় আনা হবে। শনিবার ২০ হাজারের বেশি মানুষকে টিকা দেয়া হলেও রবিবার ১৯ হাজার মানুষকে টিকাদানের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।’

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট