চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

ভ্যাকসিন: জিজ্ঞাসার জবাব

পূর্বকোণ ডেস্ক

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ | ৫:১১ অপরাহ্ণ

করোনভাইরাস মহামারীর ক্রান্তিলগ্ন বুঝি শেষ হতে চলেছে। একের পর এক সুখবর আসছে। বহুল প্রতীক্ষিত করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পর তার ব্যবহারও শুরু হয়েছে। আমাদের দেশেও গত ২৭ জানুয়ারি থেকে এই ভ্যাকসিনেশন শুরু হয়েছে। এ সময়ে জনমনে তৈরি হয়েছে অনেক প্রশ্ন।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন ও আরো ক’টি প্রতিষ্ঠান সেসব প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে বিশেষ বিশেষ নিবন্ধ লিখেছে। সেখান থেকে উল্লেখযোগ্য প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে পূর্বকোণের এ আয়োজন।

১. করোনা আক্রান্ত কেউ কি ভ্যাকসিন নিতে পারবে?
করোনা আক্রান্ত বা করোনাভাইরাসবাহী ব্যক্তি ভ্যাকসিন নিতে পারবে। ভাইরাস প্রবেশ করলে বা করোনা আক্রান্ত হলে ব্যক্তির শরীরে এন্টিবডি তৈরি হয়। ভাইরাসটিকে বডি বললে এটিকে প্রতিরোধ করতে শরীরের ভেতর যে বস্তুটি তৈরি হয় তাকে বলা হয় এন্টিবডি। প্রবেশের পর শরীরের ভেতর ভাইরাসের সঙ্গে এন্টিবডির যুদ্ধ শুরু হয়।

এ যুদ্ধে এন্টিবডি জিতে গেলে ব্যক্তিটি করোনা থেকে মুক্ত হয়। ভ্যাকসিনের কাজ হলো শরীরের ভেতর এন্টিবডি তৈরি করা। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে ভ্যাকসিন দিলে এন্টিবডি তৈরি হয়। এ ভ্যাকসিনের এন্টিবডি আগের এন্টিবডির (করোনাভাইরাসের কারণে যেটি তৈরি হয়ে আছে) সঙ্গে মিলে করোনাকে দ্রুত পরাস্ত করে ফেলবে। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি তাড়াতাড়ি করোনামুক্ত বা সুস্থ হয়ে উঠবে। তবে এ বিশ্লেষণটি পুরোপুরি তত্ত্বভিত্তিক।

প্রমাণভিত্তিক সিদ্ধান্তের জন্য করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে ভেক্টরভিত্তিক এবং ‘এমআরএনএ’ উভয় ধরনের ভ্যাকসিনের গ্রহণযোগ্য আকৃতির ট্রায়াল হতে হবে। প্রাপ্ত উপাত্তের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এরকম কোনো ট্রায়াল পরিচালিত হয়নি। এক্ষেত্রেও আরো কিছুদিন আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।

২. করোনাজয়ী ব্যক্তির শরীরে এন্টিবডি তৈরি হয়। এ ক্ষেত্রে তাকে কি ভ্যাকসিন দেওয়া হবে? হলে কেন?
করোনা থেকে সুস্থ হওয়া ব্যক্তিকে ভ্যাকসিন দেওয়া যাবে। করোনাভাইরাস শরীরে প্রবেশ করলে যে এন্টিবডি তৈরি হয় তার নাম ‘মনোক্লোনাল এন্টিবডি’। এটি করোনাভাইরাসকে প্রতিরোধ করে। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এ এন্টিবডিটি শরীরে সর্বোচ্চ ছয় মাস থাকে। ভ্যাকসিন নেওয়ার ফলে তৈরি হয় ‘স্পাইক’ এন্টিবডি।

এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এটি শরীরে কমপক্ষে ১২ মাস থাকে। ভ্যাকসিন নিলে দুই ধরনের এন্টিবডি দ্বারা শরীর সুরক্ষিত থাকবে। মনোক্লোনাল এন্টিবডি কমে গেলেও স্পাইক এন্টিবডি শরীরকে সুরক্ষা দেবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও বিস্তর গবেষণা করতে হবে। কেননা এখন পর্যন্ত করোনাজয়ীদের ওপর ভ্যাকসিনের কোনো ট্রায়াল হয়নি।

৩. এমআরএনএ ভ্যাকসিন নিলে শরীরের ডিএনএ’র পরিবর্তন হবে কি?
ডিএনএ জীবদেহের গঠন ও ক্রিয়াকলাপের জিনগত বা জেনেটিক নির্দেশ ধারণ করে। জেনেটিক প্রযুক্তিতে তৈরি হলেও এমআরএনএ ভ্যাকসিন শরীরের ডিএনএ’র ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। বর্তমান বা আগের কোনো গবেষণায় এরকম কোনো প্রমাণ বা ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। করোনা ভ্যাকসিন তৈরির অনেক আগে থেকেই এমআরএনএ প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা চলে আসছে।

৪. ভ্যাকসিনের প্রয়োজনীয় ডোজ নেওয়ার পরও কেউ কি করোনা ছড়াতে পারে?
করোনা ভ্যাকসিনের প্রয়োজনীয় ডোজ নেওয়ার পর ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হবে। এতে তার শরীরে ভাইরাস প্রবেশ করলেও সে উপসর্গবিহীন থাকবে। ক্ষেত্রবিশেষে অতিমৃদু লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। কিন্তু উভয় অবস্থাতেই তার দ্বারা ভাইরাস চারপাশে ছড়াবে। তাই বলা যায় ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও একজন ব্যক্তি ভাইরাস ছড়াতে পারে।

৫. আর কতদিন মাস্ক পরতে হবে? স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে?
আমরা জানি ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও একজন ব্যক্তি ভাইরাস ছড়াতে পারে। তাই ভ্যাকসিন পেয়েছে এবং পায়নি- এমন সবাইকে মাস্ক পরতে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। তবে দেশের ৭০-৮০% মানুষের ভ্যাকসিন নেওয়া সম্পন্ন হলে তখন আর স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রয়োজন থাকবে না।

কোনো জনগোষ্ঠীর ৭০%-এর বেশি মানুষ বিশেষ একটি সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন হলে তখন পুরো জনগোষ্ঠী ওই রোগটির বিরুদ্ধে প্রতিরোধী হয়ে উঠে। একে বলা হয় ‘গোষ্ঠী প্রতিরোধ’ বা ‘হার্ড ইমিউনিটি’।

পূর্বকোণ/পি-আরপি

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট