চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

সু স্থ থা কু ন

চিনি খাওয়া ছেড়ে দিন- শরীরে কী ঘটে দেখুন

২০ জুন, ২০১৯ | ১:৫০ পূর্বাহ্ণ

সংযোজিত চিনি বা পরিশোধিত চিনি যে স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে এটা নতুন করে বলার কিছু নেই। যদি আপনি ইতোমধ্যে চিনিতে আসক্ত হয়ে পড়েন, তাহলে হতাশ না হয়ে আরো ক্ষতি এড়ানোর কথা বিবেচনা করতে পারেন এবং এর জন্য আপনাকে চিনি খাওয়া ছেড়ে দিতে হবে অথবা সীমিত করতে হবে। আপনার জন্য সুখবর হলো, চিনি বর্জন করলে আপনার উপসর্গসমূহ চলে যেতে থাকবে এবং আপনার স্বাস্থ্য পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসতে শুরু করবে। দেখুন-
* আপনাকে অল্প বয়স্ক দেখাবে : মিশিগানের ট্রয়ের প্লাস্টিক সার্জন এবং ‘দ্য এজ ফিক্স: এ লিভিং প্লাস্টিক সার্জন বিলিভস হাউ টু রিয়েলি লুক টেন ইয়ারস ইয়াংগার’র লেখক অ্যান্থনি ইউন বলেন, ‘চিনি গ্লাইকেশন সৃষ্টি করে- এ প্রক্রিয়ায় আমাদের ত্বকের কোলাজেন ও ইলাস্টিন চিনির অণুর সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে বিকৃত হয়ে যায়। কোলাজেন ও ইলাস্টিন হলো দুটি প্রধান প্রোটিন যা আমাদের ত্বককে তারুণ্যদীপ্ত ও নমনীয় করে। তাই যতটা সম্ভব এ প্রোটিন দুটিকে সংরক্ষণ করা উচিত। চিনি এড়িয়ে চললে অথবা চিনি খাওয়া কমিয়ে দিলে রক্তপ্রবাহে গ্লুকোজ ও ইনসুলিনের মাত্রা কমে যাবে, যার ফলে বয়স্কতার সঙ্গে সম্পৃক্ত দীর্ঘস্থায়ী ও সাময়িক প্রদাহ হ্রাস পাবে।
* আপনাকে সুখী করবে : কানসাসের কানসাস সিটির সার্টিফায়েড নিউট্রিশনিস্ট কনসালটেন্ট এবং ‘নো এক্সকিউজ ডিটক্স: ১০০ রেসিপিস টু হেলপ ইউ ইট হেলদি এভরিডে’র লেখক মেগান জিলমোর বলেন, ‘আপনি মনে করতে পারেন যে মিষ্টি বিস্কুট অথবা চিনিসমৃদ্ধ খাবার আপনাকে সুখী করবে, কিন্তু আসলে এর বিপরীতটাই সত্য- চিনি ভোজনের সঙ্গে বিষণœতার উচ্চ হারের যোগসূত্র রয়েছে। এর কারণ হতে পারে চিনির কারণে সৃষ্ট দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ, যা মস্তিষ্কের ফাংশন ব্যাহত করে। চিনি খাওয়া বন্ধ করে দিলে এক থেকে দু’সপ্তাহের মধ্যে বিষণœভাব কেটে যাবে এবং মেজাজ উন্নত হবে।’ গবেষণায় পাওয়া যায়, যেসব নারী গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের তালিকায় থাকা উচ্চ র্যাংযকের খাবার অধিক পরিমাণে খেয়েছিল তারা যারা এসব খাবার অল্প পরিমাণে খেয়েছিল তাদের তুলনায় বেশি বিষণœ ছিল। এ গবেষণাটি ২০১৫ সালের জুনে দ্য আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনে প্রকাশিত হয়। এনওয়াইইউ ল্যানগোন ওয়েট ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামের রেজিস্টার্ড ডায়েটিশিয়ান লিয়াহ কফম্যান বলেন, ‘চিনি এড়িয়ে চলে আপনি মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। হ্যালোইন উৎসবের বাচ্চাদের কথা বিবেচনা করুন- সারাদিন চিনিযুক্ত ক্যান্ডি খাওয়ার পর তাদের রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়, তারপর তাদের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।’ চিনি খেলে প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রেও এমনটা ঘটে। অন্য একটি গবেষণায় পাওয়া যায়, যেসব পুরুষ প্রতিদিন ৬৭ গ্রাম বা এর বেশি চিনি খেয়েছিল তাদের বিষণœতার ঝুঁকি যারা প্রতিদিন ৪০ গ্রামের কম চিনি খেয়েছিল তাদের তুলনায় কম ছিল।
* আপনার ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে যাবে :
চিনি বর্জন করলে শরীরের প্রাকৃতিক বিষমুক্তকরণ পদ্ধতি ভালোভাবে কাজ করার সুযোগ পায়। ম্যাসাচুসেটসের বার্কশায়ারে অবস্থিত ডিটক্স রিট্রিট গ্রাউন্ডসি ফিটনেসের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর ও সার্টিফায়েড নিউট্রিশনাল কাউন্সেলর মার্ক আলাবানজা বলেন, ‘চিনি খাওয়া ছেড়ে দেওয়ার পর প্রথম কিছু ঘন্টায় অগ্ন্যাশয় কম ইনসুলিন উৎপাদন করবে এবং যকৃত বিষ পরিশোষণের প্রক্রিয়ায় জড়িত হবে। কিন্তু যদি আপনি ইতোমধ্যে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্ট (ডায়াবেটিসপূর্ব অবস্থা, যেখানে শরীর হরমোন ইনসুলিন উৎপাদন করে, কিন্তু এটি সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না) হয়ে থাকেন, তাহলে এ প্রক্রিয়া সামান্য বিলম্বিত হবে। অধিকাংশ উপসর্গ সম্পূর্ণ দূর হতে পাঁচ সপ্তাহ পর্যন্ত লাগতে পারে, যদি আপনি পরিশোধিত চিনি না খান।’
* আপনি দীর্ঘায়ু পাবেন : কফম্যান বলেন, ‘যখন চিনিযুক্ত খাবার খাওয়ার পর গ্লুকোজ বেড়ে যায়, এর সঙ্গে তাল মেলাতে আমাদের ইনসুলিনও বৃদ্ধি পায়- এটি আমাদের স্নায়ুতন্ত্রের একটি অংশকে সক্রিয় করে, যা রক্তচাপ ও হার্ট রেট বৃদ্ধি করে।’ উচ্চ রক্তচাপ হলো হৃদরোগের একটি প্রধান রিস্ক ফ্যাক্টর। ডায়াবেটিস ও স্থূলতাও হৃদরোগের ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়, যাদের সঙ্গে অত্যধিক চিনি ভোজনের যোগসূত্র রয়েছে। চিনি রক্তে ট্রাইগ্লিসেরাইড নামক অস্বাস্থ্যকর ফ্যাটও বৃদ্ধি করে, যা হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। ২০১৪ সালের এপ্রিলে প্রকাশিত একটি গবেষণায় পাওয়া যায়, যারা বেশি পরিমাণে সংযোজিত চিনি খেয়েছিল তাদের হৃদরোগে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা যারা খুবই কম পরিমাণে চিনি খেয়েছিল তাদের তুলনায় অধিক ছিল।
* আপনি শিশুর মতো ঘুমাতে পারবেন : ডা. হাইমেন বলেন, ‘অত্যধিক চিনি ভোজনে আপনার রাতে ভালোভাবে ঘুম যাওয়ার সামর্থ্য কমে যেতে পারে। বিছানায় যাওয়ার পূর্বে চিনিযুক্ত স্ন্যাক খেলে নিম্ন রক্ত শর্করা ও রাতে ঘাম নিঃসরণ হবে। ঘুমানোর আগে চিনি খেলে স্ট্রেস হরমোনও বৃদ্ধি পায়, যা ঘুমের সমস্যা তৈরি করে। চিনি খাওয়া ছেড়ে দিলে দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে আপনি পুনরায় ভালোভাবে ঘুমাতে পারবেন।’তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট