চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ক্ষণজন্মা হয়েও জীবনকে যে ভালোবেসে যাচ্ছে

পূর্বকোণ ডেস্ক

১৮ জুন, ২০১৯ | ১:৩১ অপরাহ্ণ

বর্তমানে প্রযুক্তির বাহুল্যতা আর বাস্তবতার ব্যস্ত জীবনে কখনো অপ্রাপ্তি আবার কখনোবা হতাশার পৃষ্টতলে নিষ্পেষিত হয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুকে মনের খেয়ালে একবার হলেও কামনা করেন না, এমন মানুষ মেলা ভার।

অথচ ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস!

ছোট্ট নিতু জীবন শুরু করার আগেই জানতে পেরে যায় তার জীবনাবসানের কথা। খুব বেশি সময় নেই প্রোজেরিয়া আক্রান্ত শিশু নিতুর হাতে।

চাইলেও আজীবন মায়ের বুকে ঘুমুতে পারবে না নিতু। বছরখানেকের মধ্যেই মৃত্যু তাকে কেড়ে নেবে মায়ের বুক থেকে, তার আপনজনদের থেকে, আর তার অদেখা এই সুন্দর পৃথিবী থেকে।

তাকলিমা জাহান নিতুর বয়স মাত্র ১২ বছর। ডাক্তারদের ভাষ্যমতে বিরল ব্যাধি প্রোজেরিয়ায় আক্রান্ত এই শিশুটি দাঁড়িয়ে আছে জীবনের অন্তিম প্রান্তে।

কিন্তু মৃত্যু খুব কাছে জেনেও লেখাপড়া, ছবি আঁকা আর গানের মধ্য দিয়ে জীবনকে উপভোগ করার চেষ্টায় ব্যস্ত সিলেটের ছোট্ট এই মেয়েটি।

শিশুটিকে দেখে বোঝার উপায় নেই আর কিছুদিন পরেই মৃত্যুর অজানা অতল গহ্বরে হারিয়ে যাবে সে। চেহারায় বার্ধক্যের ছাপ থাকায় পরিচিতজনদের নিগ্রহের শিকার হতে হয় তাকে।

গোপনে চোখের পানি মুছে নিতুর মা বলেন, ‘আমার মেয়েকে কখনো কেউ কোলে তুলে আদর করেনি, সবাই তাকে ভয় পায়, দানব বলে দূরে ঢেলে দেয়।’

তবে এসব কিছুই থামাতে পারেনি তার নিত্যদিনের আনন্দ-উচ্ছ্বাসকে। এখনো সে নিয়মিত বিদ্যালয়ে যায়, ছবি এঁকে ও পুতুল খেলে নিজের অবসর সময় কাটায়। নিতুর দিনমজুর বাবা আর গৃহিণী মায়ের এখনো আশা, উন্নত চিকিৎসা পেলে হয়তো আবারও সুস্থ হয়ে উঠবে তাদের আদরের চতুর্থ সন্তান।

নিতুর বয়স যখন তিন মাস তখন তার মা অনুভব করেন তার সন্তান অন্য শিশুদের চাইতে আলাদা এবং সে ক্রমাগত চুল হারাচ্ছে। উদ্বিগ্ন হয়ে বিষয়টি নিয়ে তিনি এক প্রতিবেশীর সঙ্গে আলোচনা করেন। ওই প্রতিবেশী তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলেন। এরপর নিতুকে স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান তার মা। ওই চিকিৎসক নিতুকে গ্যাস্ট্রিকের কিছু ওষুধ দেন।

দুর্ভাগ্যক্রমে, ওই চিকিৎসক নিতুর ভুল চিকিৎসা করেন এবং রাতারাতি তার সকল চুল পড়ে যায়। ধীরে ধীরে পড়ে যেতে থাকে তার পায়ের নখ। শরীরের রগগুলো শক্ত হয়ে চামড়ার ওপর দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল। এরপর তারা নিতুকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখানকার চিকিৎসকরা জানান, নিতু প্রোজেরিয়া নামের এক বিরল রোগে ভুগছে এবং এই রোগে আক্রান্ত হলে শিশুরা দ্রুত বুড়িয়ে যায়। পৃথিবীতে প্রতি ৪০ লাখে একজন প্রোজেরিয়া রোগী পাওয়া যায়। এই রোগের কোনো চিকিৎসা নেই এবং এই রোগাক্রান্ত শিশুরা সাধারণত ১৩ বছরের বেশি বাঁচে না।

আর ডাক্তারদের সেই হিসাবমতে নিতুর হাতে আছে আর একটি বছর।

মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে যে শিশু হাসতে পারে, নিয়তির নির্মম পরিহাসের শিকার হয়ে যে জীবনকে ভালোবাসতে পারে, সেতো দেবশিশু!

এই হতাশা আর নৈরাশ্যে ভরা পৃথিবীতে নিতুর মতো দেবশিশুরাই আমাদের শেখায়, কি করে শত প্রতিকূলতায় জীবনকে ভালোবেসে আলিঙ্গন করতে হয়।

 

পূর্বকোণ/ময়মী

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট