চট্টগ্রাম শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

মোলাসকাম কনটাজিওসাম: শিশুর ত্বকে ভাইরাল ইনফেকশন

ডা. প্রীতীশ বড়ুয়া

৩ জানুয়ারি, ২০২১ | ১০:১১ অপরাহ্ণ

চামড়ায় সচরাচর দেখা যায় এমন একটি ভাইরাল ইনফেকশন এর নাম মোলাসকাম কনটাজিওসাম। দশ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়। তবে অল্প কিছু ক্ষেত্রে বয়স্ক মানুষের মধ্যে দেখা দিতে পারে। গরম আদ্র আবহাওয়া এবং অতি ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে রোগটি বেশি হয়ে থাকে। এর জন্য দায়ি জীবানু এক ধরণের পক্স ভাইরাস- যা কিনা চার ধরণের হতে পারে। অন্যান্য ভাইরাসের মত এটিও ছোঁয়াচে এবং সরাসরি সংস্পর্শে, পানি, টাওয়াল বা কাপড়চোপড় এমনকিছুর মাধ্যমে কিংবা খোঁচাখুচির ফলে একই শরীরের অনান্য স্থানে সংক্রমিত হয়ে থাকে। বলা হয়- ভেজা অবস্থান যেমনঃ গোসল বা সুইমিং পুলে একসাথে থাকলে শিশুদের মধ্যে বেশি সংক্রমণ ঘটে। ভাইরাসটির সুপ্তকাল দুই সপ্তাহ থেকে ছয়মাস অবধি হতে পারে।

সুপ্তকাল পাড় হবার পর চামড়ার উপর গোলাপি, সাদা বা বাদামি একটু শক্ত ছোট ছোট বিচি দেখা দেয় পরে যা গোটা বা দানায় পরিণত হয়। আকৃতিতে গোটাগুলি গোলাকৃত এবং  ১-৬ মিমি হতে পারে। গোটাগুলি চকচকে এবং উপরিতলের কেন্দ্র আপেলের মত একটু দাবানো থাকে। ফেটে গেলে ভিতর থেকে সাদাটে গ্রীজের মত ঘন তরল বের হয়। শরীরের হাত পায়ের তালু ছাড়া সব জায়গায় গোটাগুলি দেখা দিতে পারে। গোটাগুলি একটি নির্দিস্ট অঞ্চলভিত্তিক থাকে, সারাদেহ ব্যাপি হয়না।  শিশুদের মুখমন্ডলসহ দেহের উপরি অংশে বেশি দেখা দেয়। থাকেনা কোন চুলকানি, জ্বর  কিংবা ব্যথা। এগুলি নিয়ে শিশুদের কোনরকম কস্ট হয়না বললেই চলে। চর্মরোগটির ক্ষতিকর প্রভাবও খুব একটা দেখা যায়না। কিছু ক্ষেত্রে ফেটে গিয়ে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন, চোখের পাতায় হলে কনজাংটিভাইটিস, রোগ পরবর্তী ত্বকে সামান্য গর্তভাব কিংবা শরীরগত এটোপিক একজিমাকে খুঁচিয়ে দেয়া, ইত্যাদি। বয়স্কদের ক্ষেত্রে ইমিউনোডেফিসিয়েন্সির একটা সম্পর্ক থাকতে পারে। রোগটিকে নির্ণয় এর জন্যে চিকিৎসকদের খুব একটা বেগ পেতে হয়না। চোখে দেখেই রোগ নির্ণয় করা যায়। সামান্য কিছু ক্ষেত্রে ভেতরের গ্রীজি তরলের উপস্থিতিতে এবং ডারমোসকপি বা বায়পসী করেই নির্ণীত হতে পারে।

মোলাসকাম কনটাজিওসাম রোগটি প্রতিরোধের জন্য সংক্রমিত জনকে এড়িয়ে চলতে হবে। সেসাথে জামাকাপড়- টাওয়াল আলাদা করে ফেলা, সুইমিং পুল বা একসাথে গোসল এড়িয়ে চলা, ইত্যাদি মানা জরুরি। প্রতিকারক হিসেবে এটির কোন একক বা সুনির্দিস্ট চিকিৎসা নেই। ভেতরের সাদা ঘন পদার্থগুলি বের করে নিলে কমে যেতে পারে। তবে সেটা করতে হলে খেয়াল রাখতে হবে যাতে অন্যস্থানে না লাগে। নতুবা অটো-ইনোকুলেশন সম্ভবনা থাকে। ইনফেকশন হলে এন্টিসেপ্টিক মলম বা লোশন ব্যবহার করা হয়। স্থানভেদে পোডোফাইলিন, ক্যান্থেরিডিন বা সালিসাইলিক এসিড ব্যবহৃত হতে পারে। বেশি হলে ক্রায়ো বা ইলেক্ট্রোকটারি, লেজার কিংবা সার্জিক্যাল পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়। তবে সুখের বিষয় হচ্ছে কিছু সময় লাগলেও অধিকাংশ রোগ এমনিতেই চলে যায়।

 

পূর্বকোণ / আরআর

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট