চট্টগ্রাম বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না সিভাসু

ইফতেখারুল ইসলাম 

২১ নভেম্বর, ২০২০ | ১২:১৯ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়(সিভাসু) চট্টগ্রামের খামারিদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছে না। পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা না পাওয়া, খামারিদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের দূরত্বসহ নানা কারণে খামারিরা হতাশ। চট্টগ্রামে ক্রমাগত গবাদি পশু পালনের হার বাড়লেও অসুস্থ গবাদি পশুর চিকিৎসা সংকটে ভুগছেন খামারিরা।

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য মো. ওমর ফারুক পূর্বকোণকে বলেন, তারা তৎকালীন তাদের কমিটির চেয়ারম্যান চট্টলদরদী মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরীর নেতৃত্বে ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়নের আন্দোলন করেছিলেন অনেক প্রত্যাশা নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়েছে। কিন্তু তাঁদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। প্রত্যাশা ছিল চট্টগ্রামের খামারিরা তাদের পশুর চিকিৎসাসেবা পাবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় সহযোগিতায় আধুনিক পদ্ধতিতে খামার গড়বে। যাতে ব্যয় কমবে। খামারিরা লাভবান হবে। যোগাযোগ করলে তারা মাঝে মাঝে প্রশিক্ষণের আয়োজন করে। তাদের একটি হাসপাতালও আছে। কিন্তু তা চট্টগ্রামবাসীর জন্য পর্যাপ্ত নয়। গরুর চিকিৎসা করার জন্য এখানে একটি এম্বুলেন্স ছিল। গরু আনা-নেয়ার জন্য ট্রলি ছিল। সেই ট্রলিটিও অযত্নে নষ্ট হয়ে গেছে। এম্বুলেন্সটিও এই কাজে ব্যবহার হয় না। চট্টগ্রামের খামারিরা এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিপূর্ণ সহযোগিতা চায়। শিক্ষকদের গবেষণার ফল চট্টগ্রামের খামারিরা কাজে লাগাতে চায়। কিন্তু বাস্তবতা হল বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টরা খামারিদের সাথে যোগাযোগ রাখতে তেমন আগ্রহী নন। তিনি বলেন, তারা দুধের দাম বাড়ানোর পক্ষে নন। তারা চান বিশ^বিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে খামারিরা আধুনিক পদ্ধতি গরু পালন করুক। যাতে খরচ কমে খামারিরা লাভবান হয়।

একাধিক খামারি পূর্বকোণকে বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ২০০৬ সালে। দীর্ঘ ১৪ বছর পরও চট্টগ্রামের খামারিরা তাদের গবাদি পশুর চিকিৎসা করাতে পারছেন না। চিকিৎসক সংকটে ভুগতে হচ্ছে। মোবাইলে চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। যা অনেক সময় খামারিদের জন্য বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনছে। অথচ চট্টলদরদী মোহাম্মদ ইউসুফ চৌধুরীর স্বপ্ন ছিল এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে খামারিদের চিকিৎসা সংক্রান্ত দুর্দশা লাঘব হবে। খামারিরা দক্ষ হবে। আধুনিক প্রশিক্ষণ পাবে। চট্টগ্রামের খামারিদের নিয়ে নানা গবেষণা হবে।

চিকিৎসা চিত্র :

সিভাসু চট্টগ্রামের খামারিদের অসুস্থ প্রাণির চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য সাহেদুল আলম (এস এ) কাদেরী টিচিং ভেটেরিনারি হাসপাতাল চালু করে। সেই হাসপাতালের পাঁচ মাসের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, করোনার আগে গত জানুয়ারি হতে মার্চ এবং গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরসহ মোট পাঁচ মাসে এখানে ২১৬২টি প্রাণির চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। মাঝের পাঁচ মাস করোনার কারণে হাসপাতাল বন্ধ ছিল। এখানে ১২ ধরনের প্রাণি চিকিৎসাসেবা পায়। যার মধ্যে ৪০ দশমিক ২০ শতাংশ ছাগল এবং ৩৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ কুকুর ও বিড়াল। এছাড়া পাঁচ মাসে গরুর চিকিৎসা করেছে মাত্র ১০৭টি। বাকি প্রাণিগুলোর মধ্যে রয়েছে ভেড়া, ঘোড়া, মুরগি, কবুতর, খরগোশ, ময়না, টিয়া।

জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে চট্টগ্রামে দেশি প্রজাতির গবাদিপশু রয়েছে ১৪ লাখ ৮৩ হাজার ১১২টি, মহিষ ৪৬ হাজার ৪৭৪টি, ছাগল পাঁচ লাখ ১৬ হাজার ৭৯৩টি, ভেড়া ৩৯ হাজার ৩৭৬টি, মুরগি ৩০ লাখ ৪৩ হাজার ৫০৪টি, হাঁস সাত লাখ ৯১ হাজার ২৪১টি, কবুতর তিন লাখ ৯১ হাজার ২৪১টি, ঘোড়া ১৫০টি। শংকর জাতের গরুর মধ্যে গাভীর সংখ্যা তিন লাখ ২৬ হাজার ৫১৩টিসহ মোট আট লাখ ৯১ হাজার ৫১১টি ষাড়, বকনা ও বিভিন্ন বয়সী গরু রয়েছে। তাদের তথ্যমতে গত ছয় বছরে চট্টগ্রামে গবাদি পশুর উৎপাদন দ্বিগুন হয়েছে। তাতেই বুঝা যায়, চট্টগ্রামে গবাদি পশুর উৎপাদন প্রতিবছর বেশ ভালভাবেই বাড়ছে।

এছাড়া চট্টগ্রামে ডেইরি খামারের সংখ্যা ১৮ হাজার ৩১২টি। মহিষের খামার ৪২৮টি। ছাগলের খামার ২৭৭০টি, ভেড়ার খামার ৫৫২টি। লেয়ার, ব্রয়লার, হাঁস, ব্রিডার এবং সোনালী মুরগির খামার রয়েছে ছয় হাজার ১৪৪টি।

উপাচার্যের বক্তব্য :

 বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে চট্টগ্রামবাসীর প্রত্যাশা প্রসঙ্গে ওয়াকিবহাল উল্লেখ করে অধ্যাপক ড. গৌতম বুদ্ধ দাশ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যে হাসপাতাল আছে তাতে সবাই তাদের অসুস্থ পশুকে নিয়ে আসতে পারে না। তাই আমরা বাইরে সেবা দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছি। হাটহাজারীতে একটি হাসপাতাল হচ্ছে। বছরখানেকের মধ্যে সেটি চালু হবে। দক্ষিণ চট্টগ্রামে একটি করতে চেয়েছিলাম। জায়গার জন্য তিন বছর ঘুরেছি। কেউ ছয় শতক জমি দান করতে রাজি হল না। প্রকল্পের এক কোটি ২৪ লাখ টাকা গত জুনে ফেরত গেছে। খামারিদের সাথে যোগাযোগ রাখতে তারা আগ্রহী একথা উল্লেখ করে বলেন, আমরা চাই খামারিরা আমাদের কাছ থেকে সেবা নিক। এম্বুলেন্স প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেটি এখন কোভিড-১৯ ল্যাবের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

হাসপাতাল পরিচালকের বক্তব্য :

প্রফেসর ড. ভজন চন্দ্র দাশ বলেন, অসুস্থ প্রাণি আনলে আমরা কখনোই ফেরত দিই না। বর্তমানে করোনার কারণে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত নিবন্ধন করা হয়। এখানে কম খরচে গৃহপালিত প্রাণির এমন জটিল অপারেশন হয় যা অন্য কোথাও হয় কিনা সন্দেহ। তবে করোনার আগে সকাল-বিকাল দুই শিফটে প্রাণির চিকিৎসা দেয়া হত বলে জানান তিনি। করোনাকালিন পাঁচ মাস বন্ধ থাকলেও বিশেষ ক্ষেত্রে চিকিৎসা সেবা দিতে হয়েছে।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট