চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

প্রচুর পানি ও ফলের রস পানের পরামর্শ

ঘরে ঘরে ভাইরাস জ¦র

‘ভাইরাসজনিত রোগে এন্টিবায়োটিকের কোন প্রয়োজন নেই। কার্যকরও নয় এটি বরং ক্ষতিকর’

ইফতেখারুল ইসলাম

৯ জুন, ২০১৯ | ১:৪৮ পূর্বাহ্ণ

প্রচ- জ্বর নিয়ে নগরীর মুরাদপুর এলাকায় রিকশ্ াচালাচ্ছেন রংপুর জেলার সাধল্যপুর উপজেলার করিম উদ্দিন। থাকেন বায়েজিদের ছিন্নমূল এলাকায়। যে বস্তিতে থাকেন সেখানে তার ৩ ছেলে-মেয়ে এবং স্ত্রীরও জ্বর। প্যাডেল না ঘুরলে সংসারের চাকা ঘুরবে না। চলবে না ৩ সন্তান ও স্ত্রীর চিকিৎসা। স্ত্রী সুস্থ ছিলেন। স্বামী ও সন্তানদের সেবা করতে গিয়ে তিনিও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। জ্বর নিয়ে এসেছেন রিকশ্ াচালাতে। এই চিত্র শহর গ্রাম সর্বত্রই। ঘরে ঘরে জ¦র। এমন কোন পরিবার খুঁজে পাওয়া দুষ্কর যে ঘরে জ¦র হানা দেয়নি। কোন কোন পরিবারে ছোট বড় সবাই জ¦রে আক্রান্ত হয়েছে। মূলত এটি মৌসুমী ভাইরাস জ¦র। একজনের হাঁছি-কাশি থেকে অপরজনের কাছে এই জ¦র ছড়াচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। এই জ¦রের কারণেই এবার অনেকের ঈদ আনন্দ ম্লাণ হয়ে গেছে। অনেক পরিবারের সদস্যরা জ¦রের কারণে গ্রামে গিয়ে স্বজনদের সাথে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেনি। আবার অনেকেই গ্রামে গিয়ে জ¦রের কবলে পড়েছেন।
মূলত রমজানের সময় প্রচ- গরমে মানুষ যখন হাঁসফাঁস করছিল তখনই ভাইরাস জ¦র হানা দেয়। যা এখন প্রাদুর্ভাব হিসেবে দেখা দিয়েছে। তবে এই জ¦রে আক্রান্তরদের অধিকাংশই প্রাইভেট চিকিৎসক দেখিয়ে ঘরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাই হাসপাতালে সেভাবে রোগীর চাপ বাড়েনি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এই জ¦রকে ভয় না পাওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, প্রচুর পরিমাণে পানি এবং ফলের রস পান করার জন্য। সাথে বিশ্রাম এবং দিনে তিন বেলা প্যারাসিটামল খেলেই ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে যায়।
প্রচ- গরমের মধ্যে খুব প্রয়োজন না হলে শিশুদের ঘরের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে চিকিৎসকরা বলেন, শিশুদের তরল পানীয় জাতীয় খাবার বেশি পরিমাণ খাওয়াতে হবে। ঘাম হলে পাতলা সুতি কাপড় ভিজিয়ে শরীর মুছে দিতে হবে। অনেক অভিভাবক দু-একদিন অপেক্ষা না করেই এন্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়ানো শুরু করেন। এতে হিতে বিপরীত হয়। জ্বর হলে প্রথমত শুধু প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ সেবনের পরামর্শ দিয়ে বলেন, ঠা-া গরমের এই মিশ্র আবহাওয়া ভাইরাসের পক্ষে অনুকূল পরিবেশ। ফলে ঘরে ঘরে বাড়ছে ভাইরাসজনিত জ্বর। আবার এসির মধ্যে দীর্ঘক্ষণ থাকার কারণেও শরীরে বাসা বাঁধছে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া। সর্দিকাশি, জ্বর, গলাব্যথা তো আছেই, সেই সঙ্গে ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে ভিড় বাড়ছে হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের প্রাইভেট চেম্বারে।
বিগত কয়েক দিন তাপমাত্রা ব্যাপকহারে ওঠানামা করছে। প্রচ- গরমে মানুষ হাতের কাছে সস্তায় শরবত পান করেছেন। রোজায় ভাজা-পোড়া খেয়েছেন। এতে ডায়রিয়া ও পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে আক্রান্তদের অর্ধেকই শিশু। শিশুদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। এজন্য তারা ডিহাইড্রেশনের শিকার হচ্ছে বেশি।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বিভাগীয় প্রধান (মেডিসিন) অধ্যাপক ডা. অশোক কুমার দত্ত পূর্বকোণকে বলেন, জ¦র নানাকারণে হতে পারে। তবে বর্তমানে যে জ¦র হচ্ছে তা ভাইরাসজনিত। গরমের কারণে ভাইরাসজনিত জ¦র বেশি হচ্ছে। এর চিকিৎসা হল পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি ও ফলের রস পান করা এবং বিশ্রাম নেয়া। এছাড়া প্যারাসিটামল দিনে তিনবার করে খেতে হবে। জ¦র বেশি হলে শরীর পানি দিয়ে মুছে ফেলা। এভাবে চিকিৎসা নিলে ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে যায়। এছাড়া অন্যান্য সমস্যা থাকলে যেমন প্রচ- মাথাব্যথা, খিঁচুনি ইত্যাদি থাকলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। সাধারণ জ¦র, কাশি, সর্দি, হাত পা ব্যথা, চোখ লালচে ভাব হয়ে যাওয়া এসব ভাইরাসজনিত রোগের লক্ষণ। এজন্য এন্টিবায়োটিকের কোন প্রয়োজন নেই। এন্টিবায়োটিক কার্যকরও না। বরং ক্ষতিকর। তিনি বলেন, অনেক সময় টাইফয়েডসহ অন্যান্য কারণেও জ¦র হয়। তা ৫/৭ দিনের মধ্যে কমে না। তাই প্রথম সপ্তাহ রোগীকে পর্যবেক্ষণ রাখা হয়। এক সপ্তাহে জ¦র ভাল না হলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। তখন যে রোগ ধরা পড়ে সেই রোগের চিকিৎসা করা হয়।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী পূর্বকোণকে বলেন, এখন একদিকে গরম, অপরদিকে বৃষ্টি আবার শুষ্ক মৌসুম। এসব কারণে মানুষ জ¦রে আক্রান্ত হচ্ছে। গরম থেকে এসে সাথে সাথে ঠা-া পানি পান করলেও সর্দি-কাশি জ¦র এসে যেতে পারে। আবার হঠাৎ করে বৃষ্টিতে ভিজলেও এই ধরনের সমস্যা হতে পারে। তাছাড়া গরম থেকে এসে দ্রুত এসি রুমের মধ্যে রেস্ট না নেওয়াই মঙ্গল। বর্তমানে যে জ¦র দেখা দিচ্ছে তা ভাইরাসজনিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভাইরাসগুলি সহজেই বাতাসে ভেসে বেড়াতে পারে। তাই একজন থেকে অপরের কাছে ছড়িয়ে পড়ছে। জ¦রে আক্রান্ত হলে প্রথম দিকে বেশি করে পানি এবং ফলমূল খাওয়া শরীরের পক্ষে ভাল। তাছাড়া প্যারাসিটামল খেতে হবে। তিনদিনের মধ্যে জ¦র চলে না গেলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। সিভিল সার্জন বলেন, এই সময়ে শিশুদেরকে ঘরের বাইরে বেশি খেলতে না দেওয়াই মঙ্গল।

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট