লো প্রেসারের রয়ছে নানা কারন। তবে ইদানিং কিটো ডায়েট করে অনেককে মাথা ঘুরিয়ে পরে যেতে দেখা গেছে। এদের সবার প্রেসার অনেক লো হয়ে গিয়ছিলো। কিটো ডায়েট করলে শরীরে পানির পরিমাণ অনেক কমে যায়। ফলে লো প্রেসার হয়ে যায়। লো প্রেসার হতে পারে আরও অনেক কারণে। জেনে নিন কি করবেন লো প্রেসার হলে।
লো প্রেসার কি?
লো প্রেসার মানে হল রক্ত চাপ নরমালের চেয়ে কম। নরমাল প্রেসার কত? ১৩০/৮০ এর চেয়ে কম যে কোন প্রেসারই হল নরমাল প্রেসার। তা হলে লো প্রেসার কখন বলা হয়? কারো প্রেসার যদি ৯০/৬০ এর কম হয়ে যায় তখন তাকে লো প্রেসার বলা হয়। তবে প্রেসার ৯০/৬০ এর উপরে থাকা সত্বেও যদি কারো লো প্রেসারের উপসর্গ দেখা দেয় তাহলে সেটাও লো প্রেসার।
লো প্রেসারের উপসর্গ কি?
লো প্রেসার হলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে রক্ত সরবরাহ কমে যায়। তাই খুব দুর্বল লাগে। ব্রেনে রক্ত সরবরাহ কমে গেলে মাথা ঝিম ঝিম করে। মাথা হাল্কা লাগে। মাথা ঘুড়ায়। বমি বমি ভাব হয়। হাটা চলা করতে গেলে মাথা ঘুড়িয়ে পড়ে যেতে পারে। শোয়া বসা অবস্থা থেকে দাড়াতে গেলে মাথায় পাক দেয়।
লো প্রেসার কি খারাপ কোন রোগ?
চিকিৎসা বিজ্ঞানে লো প্রেসার বলে আসলে কোন রোগ নেই। কেউ হঠাৎ করে মাথা ঘুরে পড়ে গেলে, অজ্ঞান হয়ে গেলে লোকেরা এটাকে লো প্রেসার বলে। লো প্রেসার সাধারণত অন্য কোন রোগের কারণে হয়।
লো প্রেসার কেন হয়?
লো প্রেসার বংশগত যেমন হতে পারে তেমনি কোনো দীর্ঘমেয়াদী অসুখে ভোগার ফলে, হার্ট এটাকের পরে হার্ট ফেইলার হয়ে, কোন কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে বা ডায়রিয়া হলে রক্তের প্রেসার লো হয়ে যায়। উচ্চ রক্তচাপের ঔষধ বেশি মাত্রায় খেলেও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবে প্রেসার লো হতে পারে। গর্ভাবস্থায় লো প্রেসার হতে পারে।
হরমোনের ঘাটতিজনিত কিছু রোগ আছে যেমন এডিসন্স ডিজিস বা হাইপোপিটুইটারিজম রোগেও লো প্রেসার হতে পারে। ডায়াবেটিসের কারণে নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও লো প্রেসার দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে শোয়া বসা অবস্থা থেকে দাঁড়াতে গেলে এদের প্রেসার কমে যায়। তখন মাথা ঘুরিয়ে পরে যেতে পারে। এটাকে বলে পশ্চুরাল হাইপোটেনশন।
ভ্যাসোভ্যাগাল সিঙ্কোপ নামে একটি রোগ আছে। তাতেও লো প্রেসার হতে পারে। কেউ রক্ত দেখলে বা হঠাৎ করে কোন কারনে ভয় পেলে রক্ত নালী অস্বাভাবিক বেশি রকম প্রসারিত হয়ে গিয়ে অনেক লো প্রেসার হতে পারে। তখন রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়।
লো প্রেসার হলে কি করবেন?
আপনার প্রেসার যদি সব সময় লো থাকে কিন্তু কোন সমস্যা মনে হয় না সেক্ষেত্রে কোন চিকিৎসার দরকার নাই। এটাই আপনার জন্য নরমাল প্রেসার। হয়তো বংশগত কারণে আপনার প্রেসারের মাত্রা এই রকম। এটা নিয়ে অযথা দুশ্চিন্তা করবেন না। আর প্রেসার মেপে যদি কম পান এবং সাথে যদি লো প্রেসারের উপসর্গ থাকে তা হলে চিকিৎসা লাগবে।
প্রথমেই দেখতে হবে উচ্চ রক্তচাপের কোন ঔষধ খায় কিনা। তা হলে সেটা কমাতে হবে বা চেইঞ্জ করতে হবে। ডায়রিয়া হলে স্যালাইন দিতে হবে। রক্তক্ষরণ হলে রক্ত দিতে হবে। যাদের এগুলো কোনটি নেই তারা পানি বেশি খাবেন। একটু লবণও বেশি খেতে পারেন। ওরস্যালাইন খেতে পারেন।
যাদের ডায়াবেটিস, প্রেসারের ঔষধ বা অন্য কারণে পশ্চুরাল হাইপোটেনশন হয়েছে মানে বসা বা শোয়া থেকে দাড়াতে গেলে প্রেসার লো হয়ে যায় এবং মাথা ঘুরিয়ে পরে যাওয়ার অবস্থা হয় তারা স্টকিংস পড়তে পারেন। বিছানার মাথার দিক ইট দিয়ে ৬ ইঞ্চি উচু করে নিলে এ সমস্যা কমবে। দীর্ঘ সময় বসে থাকবেন না। শোয়া বা বসা থেকে দাঁড়ানোর সময় আস্তে আস্তে ধীরে ধীরে দাড়াতে হবে। খাবার একবারে বেশি না খেয়ে অল্প অল্প করে বার বার খাবেন। খাবার খাওয়ার পরে কিছুক্ষণ শুয়ে বা বসে থাকবেন।
প্রেসার বেশি কমে গিয়ে যদি শকের উপসর্গ দেখা দেয় এবং রোগীর জ্ঞান থাকে তাহলে পা দুটো মাথার থেকে উচুঁ করে রেখে সমতল জায়গায় শুইয়ে দিতে হবে। রোগীর যদি তীব্র বুকে ব্যথা বা যন্ত্রণা থাকে তাহলে হার্ট এটাক হল কিনা সেটা দেখতে হবে। সেক্ষেত্রে এসপিরিন জাতীয় ঔষধ দিতে হবে। দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। আর অজ্ঞান হলে তাকে একদিকে কাত করে মাথাটা বুকের দিকে ঝুকিয়ে শুইয়ে দিতে হবে। যদি মনে হয় শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তাহলে আঙুল দিয়ে তার জিহবা সামনের দিকে টেনে আনুন। রোগী যদি বমি করে তাহলে তার মুখের ভিতরটা তখনই পরিষ্কার করে দিন। খেয়াল রাখবেন শ্বাসের টানের সাথে বমি ফুসফুসে ঢুকে না যায়। অতিদ্রুত ডাক্তারের সাহায্য নিন।
রক্তের চাপ কম থাকলে অনেক সময় দুর্বল মনে হয় । তাই পুষ্টিকর ও পর্যাপ্ত খাবার খেতে হবে। সাথে প্রচুর পরিমাণে পানি কিংবা অন্যান্য পানীয় যেমন ডাবের পানি, ফলের রস, কিংবা ওরস্যালাইন খেতে পারেন। খাবারে সাথে অতিরিক্ত কাঁচা লবণ খাবেন। যদি কোন অসুস্থতার কারণে রক্তচাপ কমে যায়, তবে যেই অসুখ অনুযায়ী খাবারের ধরণ পরিবর্তন করতে হবে।
সর্বোপরি লো প্রেসারকে এককভাবে কোন রোগ মনে করার কারণ নেই। যে কারণে লো প্রেসার হয় সেই অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে। তাহলেই লো প্রেসারের ঝামেলা থেকে মুক্তি মিলবে ।
লেখক: মেডিসিন ও হার্ট স্পেশালিস্ট
পূর্বকোণ/আরপি