চট্টগ্রাম বৃহষ্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

আজ বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস

চট্টগ্রামে প্রতিদিন কুকুরের আক্রমণের শিকার ৭ জন

ইফতেখারুল ইসলাম

২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ৩:৫৪ অপরাহ্ণ

চট্টগ্রামে প্রতিদিন অন্তত সাত ব্যক্তি কুকুরের আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। তবে কুকুরের কামড়ের রোগী বাড়লেও জলাতঙ্ক রোগী নেই। যথাসময়ে চিকিৎসার ফলে কুকুর কামড়ালেও জলাতঙ্ক রোগ থেকে রেহাই পাচ্ছে মানুষ। আজ বিশ্ব জলাতঙ্ক দিবস। প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালিত হয়। গ্লোবাল এলায়েন্স ফর রেবিজ কন্ট্রোল তার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের দপ্তর থেকে দিবসটি পরিচালনায় প্রধান ভূমিকা পালন করে। এবারের ১৪তম দিবসের প্রতিপাদ্য হলো ‘End rabies: Collaborate vaccinate’ দিবসটি পালনের মূল উদ্দেশ্য হলো জলাতঙ্ক রোগের বিষয়ে পর্যালোচনা এবং জনসচেতনতা তৈরি।
চট্টগ্রাম নগরে প্রতিমাসে গড়ে ২০৪ জন পর্যন্ত কুকুরে কামড়ের রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। একটি কুকুর বছরে গড়ে ১২টি করে বাচ্চা দেয়, মারা যায় ১০ শতাংশ। দেশে কুকুর নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা না থাকায় ব্যাপক হারে বাড়ছে কুকুর। বাড়ছে আতঙ্ক। বাড়ছে কুকুরে কামড়ের রোগী।
জানা যায়, এক সময় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) কুকুর নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করত। তবে ২০১২ সালে ‘নির্বিচারে কুকুর নিধন অমানবিক’ উল্লেখ করে উচ্চ আদালত তা বন্ধের নির্দেশ দেয়। এরপর বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে কুকুরকে বন্ধ্যা (প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট করে দেওয়া) করার সিদ্ধান্ত হয়। পরে এটিও বন্ধ করা হয়। বর্তমানে কুকুর নিধন ও বন্ধ্যা কার্যক্রম নেই। তবে কুকুরকে এন্টি রেবিজ ভ্যাকসিন প্রদান কর্মসূচি পালন করেছে সিটি কর্পোরেশন। নগরীতে চট্টগ্রামে জেনারেল হাসপাতাল এবং চসিক জেনারেল হাসপাতালে কুকুরে কামড়ের চিকিৎসা দেয়া হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিটি কর্পোরেশন জেনারেল হাসপাতালে প্রতিমাসে গড়ে আট থেকে ১০ জন কুকুরে কামড়ের চিকিৎসা নেয় এবং আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালে প্রতিমাসে চিকিৎসা নেয় প্রায় ১৯৪ জন। জেনারেল হাসপাতালে গত মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক হাজার ৩৫৭ জন রোগী চিকিৎসা গ্রহণ করেন। এর মধ্যে মার্চে ১৫৩ জন, এপ্রিলে ১৮৯ জন, মে ১৭৬ জন, জুন ১৭৮, জুলাই ২২১, আগস্ট ২৯৭ ও ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৪৩ জন।
চট্টগ্রাম (আন্দরকিল্লা) জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার বলেন, প্রায় প্রতিদিনই কুকুরে কামড়ের রোগী ইনজেকশন নিতে আসেন। তবে জলাতঙ্ক রোগী খুব একটা পাওয়া যায় না। যথাসময়ে চিকিৎসা নিতে আসে বলেই জলাতংক রোগের হাত থেকে মানুষ রক্ষা পাচ্ছে। তাছাড়া শহর বা গ্রামে যেসব কুকুর দেখা যায়, সেসবের মধ্যে জলাতংকের জীবাণু নেই মনে হয়। কারণ পথে-ঘাটে কুকুর দেখা গেলেও পাগলা কুকুর খুব একটা চোখে পড়ে না। তবে একথা সত্য পর্যায়ক্রমে কুকুরের আক্রমণের শিকার মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।
চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী পূর্বকোণকে বলেন, শহরে কুকুরের সংখ্যা বাড়ছে। তাই কুকুরে কামড়ের রোগীও বাড়ছে। কাউকে কুকুরে কামড়ালে সিটি কর্পোরেশন জেনারেল হাসপাতালে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেয়া হয়। একজন রোগীকে প্রথমদিন একটি, তৃতীয় দিন, সপ্তমদিন, ১৪তম দিন ও ২৮তম দিনে একটি করে ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। তিনি জানান, করোনা মহামারীর আগে সরকারের একটি প্রকল্পের আওতায় ৪১ ওয়ার্ডে কুকুরকে এন্টি রেবিজ ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। যাতে কুকুরের মাঝে জলাতঙ্ক রোগটি না ছড়ায়। আর কুকুর নিরাপদ থাকলে মানুষও নিরাপদ থাকবে।
জানা যায়, জলাতঙ্ক হলো ভাইরাস গঠিত একটি রোগ, যা সাধারণত কুকুর, শিয়াল, বাদুড় জাতীয় প্রাণীদের মধ্যে দেখা যায়। লালা বা রক্তের মাধ্যমে এ ভাইরাস এক প্রাণী থেকে আরেক প্রাণীর দেহে ছড়ায়। দেশে প্রতিবছর সাড়ে ৩ লাখ লোক কুকুরের আক্রমণের শিকার হচ্ছেন।

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট