চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

ঘরে ঘরে তীব্র জ্বর-কাশি, ছড়াচ্ছে করোনা আতংক

ইমাম হোসাইন রাজু

১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২০ | ১২:৩৬ অপরাহ্ণ

তীব্র জ্বর আর সর্দি-কাশি নিয়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ছুটে আসেন চল্লিশোর্ধ আহমেদ করিম। ‘করোনা’ আঘাত হেনেছে ধারণা নিয়ে ভর্তি হতে হবে এমন প্রস্তুতিও ছিল তাঁর। তবে চিকিৎসকের পরামর্শে শুধুমাত্র নমুনা জমা দিয়ে বাড়ি ফিরেন তিনি। একদিন পর জানতে পারলেন করোনার রিপোর্ট তাঁর নেগেটিভ। একই সমস্যা নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ফ্লু কর্নারে ভর্তি হয় মুজাহিদ নামে এক যুবক। করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, এমন ধারণা ছিল তারও। যদিও একদিন পরেই জানতে পারেন করোনা নয় বরং সাধারণ ফ্লুতে আক্রান্ত তিনি।
মুজাহিদ কিংবা আহমেদ করিমই নন। এমন সাধারণ জ্বর আর সর্দি কাশি নিয়ে শুধুমাত্র প্রতিদিনই সরকারি এ দুই হাসপাতালে অন্তত দেড়’শতাধিক রোগী ভিড় করছেন। যাদের বেশিরভাগ অংশই সাধারণ ফ্লু বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসকরা বলছেন, ঠান্ডা গরমের মিশ্র আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে এখন ঘরে ঘরেই রোগজীবাণুর বাসা বাঁধছে। মূলত আবহাওয়ার পরিবর্তণের জন্যই এ প্রকোপটা বেশি। যার কারণে শিশু থেকে বয়স্ক সকলেই জ্বর, সর্দিকাশি, গলাব্যথাসহ ফ্লু ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে এ নিয়ে আতংকিত না হয়ে সতর্ক থাকার পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণের মত বিশেষজ্ঞদের।
তথ্য মতে, গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৫০ জনের বেশি জ্বর-সর্দি ও কাশিতে আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ফ্লু কর্নার ও জরুরি বিভাগে এমন রোগী চিকিৎসা নেয় শতাধিকেরও বেশি। সরকারি এ দুই হাসপাতাল ছাড়াও গত কয়েকদিন ধরে নগরীর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের প্রাইভেট চেম্বারে এ ধরণের রোগীদের ভিড় বেড়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তবে তাদের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত রোগী তেমন পাওয়া যায়নি। বেশিরভাগই আবহাওয়াজনিত ফ্লুতে আক্রান্ত।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আব্দুর রব মাসুম পূর্বকোণকে এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘মানুষের মধ্যে করোনার আতংক এখনো রয়েছে। তবে পূর্বের চেয়ে করোনা রোগী কম। এখন যারা জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের বেশির ভাগেরই সাধারণ ফ্লু। আমাদের হাসপাতালেই প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ জনের বেশি এমন রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন। এতে আতংকিত না হয়ে, সতর্ক থাকতে হবে। মূলত আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণেই এমনটি হচ্ছে। তবে যেকোনো জ্বরে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।’
চট্টগ্রাম আবহাওয়া দপ্তরের তথ্যে, গতকাল শনিবার চট্টগ্রামের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস যা স্বাভাবিকের চেয়ে ১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস যা স্বাভাবিকের চেয়ে ১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। এর আগের দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ম তাপামাত্রা ছিল ২৭.৮ সেলসিয়াস। এতেই বুঝা যায়, তাপমাত্রা দিনদিন বাড়তে শুরু করেছে। আর তাপমাত্রার এ তারতম্যের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে না পারায় মানুষজন সর্দি-কাশি-জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি পূর্বকোণকে বলেন, ‘এখন কম বেশ প্রতিটি ঘরেই জ্বরে আক্রান্ত রোগী আছে। তবে সাধারণ জ্বর হলেও হালকাভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। অবশ্যই করোনার পরীক্ষা করা দরকার। যদিও বেশির ভাগ রোগীরই নমুনা পরীক্ষায় ফলাফল নেগেটিভ। তবুও এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। মূলত আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণেই প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে আবহাওয়া ঠিক হলে বা বৃষ্টি হলে অন্তত এমনটি কমে আসবে বলে অভিমত তাঁর। একই সাথে এ সময়ে খুব প্রয়োজন না হলে শিশুদের ঘরের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ এ চিকিৎসকের।’

পূর্বকোণ/এএ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট