চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

‘ব্লু-ইকোনমি’র কর্মযজ্ঞ জোরদার করায় ব্যর্থতার দায় কার?

ড. মইনুল ইসলাম

১৮ নভেম্বর, ২০১৯ | ১১:৩৪ অপরাহ্ণ

প্রতিবেশী মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে কয়েক দশকের বিরোধ অত্যন্ত সফলভাবে মোকাবেলা করে ইন্টারন্যাশনাল ট্রাইব্যুনাল অন ল’স অব দ্য সি’স (ইটলস) এবং দ্য হ্যাগের আন্তর্জাতিক আদালত থেকে ২০১২ ও ২০১৩ সালে বিজয় নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। আমরা অনেকেই জানি না যে, এ বিরোধে বাংলাদেশকে আইনি লড়াইয়ে হারানোর জন্য ভারত মিয়ানমারের সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগসাজশে লিপ্ত হয়েছিল। ইটলসে মিয়ানমারের পক্ষে আইনি লড়াই চালানোর দায়িত্ব নিয়েছিল ভারত, খ্যাতিমান সব ভারতীয় আইনবিদ মিয়ানমারের মামলা পরিচালনা করেছেন। এ সত্ত্বেও মিয়ানমার ইটলসের ঐতিহাসিক রায় তাদের পক্ষে নিতে পারেনি। এ পরাজয়ের পর ভারত চাণক্য চাল চেলেছিল বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার মাধ্যমে সমুদ্রসীমার ভাগবাটোয়ারা নির্ধারণ করার প্রস্তাব দিয়ে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশের এ-সংক্রান্ত নীতিনির্ধারকরা ভারতের কূটচালের ফাঁদে ধরা না দিয়ে বিষয়টি সমাধানের দায়িত্ব আন্তর্জাতিক আদালতে রেখে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যেখানে ভারতের বিখ্যাত আইনবিদের যুক্তি অগ্রাহ্য করে আদালত বাংলাদেশকে কোণঠাসা করার ভারতীয় অপপ্রয়াসকে নস্যাৎ করে দিয়েছেন (ভারতীয় যুক্তি মানলে বাংলাদেশ ‘সি-লকড’ হয়ে যেত, যার মানে কন্টিনেন্টাল শেলফ অতিক্রম করে ভারত মহাসাগরের সীমানায় প্রবেশের জন্য বাংলাদেশকে ভারত ও মিয়ানমারের করুণার ওপর নির্ভরশীল হতে হতো)। বাংলাদেশ এ মহাবিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছে। এই ঐতিহাসিক সমুদ্র বিজয়ের জন্য ইতিহাস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে চিরদিন কৃতিত্ব দিয়ে যাবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, এ সমুদ্র বিজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সমুদ্রসীমার ওপর নিরঙ্কুশ অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হয়েছে। এই ঐতিহাসিক বিজয় শুধু বিশাল সমুদ্রসীমার ওপর ‘অর্থনৈতিক কর্তৃত্ব’ স্থাপনের কৃতিত্ব নয়, বাংলাদেশকে বঙ্গোপসাগরের একটি বিশাল এলাকার সমুদ্রসম্পদ আহরণের স্বর্ণ সুযোগ উপহার দিয়েছে এ সমুদ্র বিজয়। বাংলাদেশের স্থলভাগের আয়তন যেখানে মাত্র ১ লাখ ৪৪ হাজার বর্গকিলোমিটারের সামান্য বেশি, সেখানে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সমুদ্রসীমার ওপর অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ অর্জন যে আমাদের কত বড় সৌভাগ্য, সেটা আমরা উপলব্ধি করতে পারছি কি? আরো দুঃখজনক হলো, এ বিজয় অর্জনের ছয় বছর অতিক্রান্ত হলেও যথাযথ অগ্রাধিকার দিয়ে আজো এই বিশাল সমুদ্রসীমা থেকে সম্পদ আহরণ জোরদার করা যায়নি। সূত্র: বণিক বার্তা।

এটা স্বীকার করতে হবে যে ‘ব্লু-ইকোনমি’ সম্পর্কে কয়েকটি সভা-সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে, সম্প্রতি তিনদিনের একটি আন্তর্জাতিক ডায়ালগও সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু ছয় বছরেও আমাদের প্রস্তুতি এখনো শেষ হলো না কেন? এখনো পত্রপত্রিকায় প্রায়ই খবর প্রকাশিত হচ্ছে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় হানা দিয়ে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে থাইল্যান্ড ও ভারতের ফিশিং ট্রলার। সেন্টমার্টিন দ্বীপের অদূরে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সমুদ্রসীমায় বিপুল গ্যাস আবিষ্কৃত হয়েছে, যা চীনের কাছে পাইপলাইনে রপ্তানি করছে মিয়ানমার। অথচ মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের সাত বছর অতিক্রান্ত হলেও ওই অঞ্চলের বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় এখনো তেল-গ্যাস অনুসন্ধান শুরুই করা গেল না! ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ব্লু-ইকোনমি পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রশি টানাটানি এই বিলম্বের প্রধান কারণ! সমুদ্র ব্লকগুলোয় তেল-গ্যাস আহরণে জন্য বিভিন্ন বিদেশী কোম্পানিকে ‘প্রডাকশান শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট’-এর ভিত্তিতে ব্লকের ইজারা প্রদানের বিষয়ে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াও নাকি আটকে আছে বিভিন্ন শক্তিধর দেশের টানাপড়েনের কারণে। কিন্তু এমন বিলম্ব যে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি ঘটিয়ে চলেছে, তার দায় কে নেবে? নিচের বিষয়গুলো একটু গভীরভাবে বিবেচনা করুন:

বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সমুদ্রসীমার অদূরে মিয়ানমারের নিয়ন্ত্রণাধীন সমুদ্রে বেশ কয়েক বছর আগে প্রায় ৪ ট্রিলিয়ন ঘণফুট গ্যাস আবিষ্কৃত হয়েছে। ওই গ্যাস এখন পুরোটাই চীনে রপ্তানি করছে মিয়ানমার। ভারত এ গ্যাসের একটা অংশ পাইপলাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশের ভূখণ্ডের ওপর দিয়ে নিজেদের দেশে আমদানি করার জন্য প্রকল্প প্রণয়ন করে বাংলাদেশকে রাজি করানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল ২০০১-০৬ মেয়াদের বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়। প্রস্তাবিত ওই চুক্তিতে এমন শর্তও রাখা হয়েছিল যে, বাংলাদেশের ভূখণ্ডের ওপর দিয়ে যাওয়া পাইপলাইনের হুইলিং চার্জ তো বাংলাদেশ পাবেই, তদুপরি বাংলাদেশের প্রয়োজন হলে ওই গ্যাসের একটা অংশ কিনে নিতে পারবে। জোট সরকারের অন্ধ ভারতবিরোধিতার কারণে বাংলাদেশ ওই লোভনীয় প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল। অথচ দেড় দশক ধরে বাংলাদেশ যে ক্রমবর্ধমান গ্যাস সংকটে জর্জরিত হচ্ছে, সেটা একেবারেই হতো না ওই প্রস্তাব গ্রহণ করা হলে! বিএনপি-জামায়াতের অন্ধ ভারতবিদ্বেষ বাংলাদেশের জনগণকে এই প্রয়োজনীয় গ্যাস পাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছে। এখন চার-পাঁচ গুণ দাম দিয়ে এলএনজি আমদানি করে আমরা ওই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করে চলেছি! এরপর শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর ওই অঞ্চলের বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় একটি ব্লক দক্ষিণ কোরিয়ার দাইয়ু কোম্পানিকে তেল-গ্যাস আহরণের জন্য ইজারা দিয়েছিল। দাইয়ু যথাযথ প্রস্তুতি এবং সরঞ্জাম নিয়ে ওই অঞ্চলে তেল-গ্যাস এক্সপ্লোরেশন চালানোর জন্য কয়েকটি জাহাজ নিয়ে উপস্থিত হলে সেখানে মিয়ানমারের নৌবাহিনী তাদের বাধা দেয় এবং ফিরে আসতে বাধ্য করে। মিয়ানমারের যুক্তি ছিল, ওই অঞ্চলের সমুদ্রসীমার মালিক মিয়ানমার, বাংলাদেশের কোনো অধিকার নেই ওখানে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের। ইটলসের রায়ে ওই বিরোধপূর্ণ অঞ্চলের মালিকানা এখন পেয়ে গেছে বাংলাদেশ, কিন্তু গত সাত বছরেও ওখানে এখনো কোনো নতুন এক্সপ্লোরেশন শুরু করতে পারেনি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোনো ইজারাদার কোম্পানি। এ অক্ষম্য বিলম্বের কারণে মিয়ানমার যে এ সমুদ্রাঞ্চলের ভূগর্ভস্থ গ্যাস তুলে নিঃশেষ করে দিচ্ছে, সে গ্যাস তো বাংলাদেশও পেতে পারত। কারণ সন্নিহিত অঞ্চলগুলোর ভূগর্ভে গ্যাসের মজুদ তো শুধু মিয়ানমারের নিয়ন্ত্রণাধীন সমুদ্রসীমায় সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় ওখানে নিশ্চিতভাবেই গ্যাস পাওয়া যাবে। হয়তো এমন বিলম্বের কারণে কয়েক ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস থেকে বঞ্চিত হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ!

বাংলাদেশের ১ লাখ ১৮ হাজারেরও বেশি বর্গকিলোমিটার অর্থনৈতিক সমুদ্রসীমায় আরো ২৩টি ব্লক ইজারা দেয়ার সুযোগ রয়েছে তেল-গ্যাসসহ অন্যান্য খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণের জন্য। কিন্তু গত ছয় বছরে এ ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিই পরিলক্ষিত হয়নি, কিন্তু কেন? এ ব্লকগুলো পাওয়ার জন্য বিভিন্ন শক্তিধর দেশের বহুজাতিক করপোরেশনগুলো পর্দার আড়ালে লবিং চালিয়ে যাচ্ছে বলে শোনা যায়। কিন্তু ছয় বছরেও সরকারের নীতিনির্ধারকদের কোনো সিদ্ধান্তে আসতে না পারাটা বড়ই রহস্যজনক (রাশিয়ার গ্যাজপ্রমের সঙ্গে সম্পাদিত বাংলাদেশের গ্যাস অনুসন্ধান চুক্তিগুলোর শর্তাবলি সম্পর্কেও বাংলাদেশের অধিকাংশ জ্বালানি বিশেষজ্ঞের ঘোর আপত্তি রয়েছে। তাদের অভিমত, যেসব স্থলভাগে গ্যাজপ্রমকে অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, ওগুলোয় বাংলাদেশের নিজস্ব কোম্পানি বাপেক্স দায়িত্ব পেলে অনেক কম খরচে অনুসন্ধান চালানো যেত। গ্যাজপ্রম এ ঠিকাদারি পাওয়ার পেছনে দুর্নীতির খাই মেটানোর সুস্পষ্ট আলামত রয়েছে)। গভীর সমুদ্রের ব্লকগুলো নিয়েও নাকি রশি টানাটানি চলেছে কমিশনভোগীদের কারণে!

 ২০১৮ সালের জুলাইয়ে পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে যে ডিপ সি ফিশিংয়ের জন্য সরকার ১৬টি ফার্মকে অনুমতি দিয়েছে। এরপর ১৬ মাস অতিক্রান্ত হলেও কোনো অগ্রগতির হদিস মিলছে না। ডিপ সি ফিশিংয়ে এখন যে, অত্যাধুনিক ‘ফ্যাক্টরি শিপ’ ব্যবহৃত হয়, সেগুলো ক্রয় করে পরিচালনার ক্ষমতা এখন বাংলাদেশের কয়েক ডজন বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের থাকার কথা। এসব ফ্যাক্টরি শিপে মাছ ধরা থেকে শুরু করে মাছ প্রসেসিং করে রপ্তানির জন্য ক্যানিং পর্যন্ত অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে সম্পন্ন করার ব্যবস্থা থাকে, যাতে একেক ট্রিপে মাসাধিককালও জাহাজগুলো গভীর সমুদ্রে মত্স্য আহরণ চালিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, যথাসময়ে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে এতদিনে বাংলাদেশ টুনা মাছ রপ্তানিতে একটা উল্লেখযোগ্য দেশের মর্যাদায় হয়তো উন্নীত হয়ে যেত। কারণ বঙ্গোপসাগরের ‘সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড’ টুনা মাছের একটা সমৃদ্ধ বিচরণ ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত, যেখানে এখন বাংলাদেশের আইনি কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সম্প্রতি একটি খবর প্রকাশ হয়েছে যে প্রাথমিকভাবে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ আদৌ লাভজনক হবে কিনা, সেটা নিয়েই নাকি সন্দেহ কাটছে না। যথাযথ সম্ভাব্যতা জরিপ চালিয়ে এ সন্দেহ নিরসন করতে আর কতদিন লাগবে?

 নৌবাহিনী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং অন্য কোনো মন্ত্রণালয়ের ক্ষমতার রশি টানাটানি সমস্যা নিরসনের জন্য সরকারের একটি স্বতন্ত্র ‘সমুদ্রসম্পদ মন্ত্রণালয়’ প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের দাবি। বিকল্প হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী ‘আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় কমিটি’ গঠন করে টানাপড়েন কমানো যেতে পারে, রশি টানাটানি দেশের অপূরণীয় ক্ষতি করে চলেছে।

সোনাদিয়ায় একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের ব্যাপারে অনেক দূর অগ্রগতি সাধিত হয়েছিল। ২০১৪ সালে ভারতের চাপে বাংলাদেশ চীনের অর্থায়নে ওই বন্দর নির্মাণ প্রকল্প বাতিল করে দিয়েছে। আমি এখনো দৃঢ়ভাবে বলছি, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ আমাদের করতেই হবে, প্রয়োজনে নিজস্ব অর্থায়নে। সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর গড়ে তোলার ‘ফিজিবিলিটি স্টাডি’ জাপানের একটি ফার্মের মাধ্যমেই সম্পন্ন করা হয়েছিল ২০০৯ সালে। ওই স্টাডিতেই বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের জন্য সোনাদিয়া সর্বোত্তম স্থান হবে। কারণ সোনাদিয়ার অদূরে স্থলভাগ পর্যন্ত ১৫ মিটারের মানে ৫০ ফুটেরও বেশি গভীর বঙ্গোপসাগরে একটি স্বাভাবিক খাঁড়ি রয়েছে। বরং সোনাদিয়াকে আগামী দিনের ব্লু-ইকোনমি কর্মযজ্ঞের মূল কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলাই এখন সময়ের দাবি।

লেখক : একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক

পূর্বকোণ-রাশেদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট