চট্টগ্রাম শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

সর্বশেষ:

রাজশাহীতে আমের অর্থনীতির আকার দ্বিগুন

অনলাইন ডেস্ক

১৮ নভেম্বর, ২০১৯ | ৮:০২ অপরাহ্ণ

উৎপাদন লাভজনক হওয়ায় অনেকে পরিকল্পিতভাবে বাগান গড়ে তোলায় চার বছরের ব্যবধানে রাজশাহী অঞ্চলের আমের অর্থনীতির আকার দ্বিগুণের বেশি বড় হয়েছে। গত মৌসুমে (জানুয়ারি থেকে আগস্ট) রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোর জেলায় আম থেকে আয় হয়েছে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। ২০১৫ সালে আম থেকে এই চার জেলার আয় ছিল ১৮০০ কোটি টাকা। গেল মৌসুমে এ অঞ্চলে আম থেকে আয়ে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল নওগাঁর।

গত মৌসুমে রাজশাহী অঞ্চলের আমের উৎপাদন ও আয়ের হিসাব করেছে কৃষি বিভাগ। তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আগের বছরের তুলনায় এবার এ অঞ্চলে আমের উৎপাদন কিছুটা কমেছে, তবে দাম ভালো পাওয়া গেছে। সূত্র: দেশ রূপান্তর।

রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি অফিসের তথ্যমতে, ২০১৮ সালে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোরে আমের উৎপাদন হয় ৮ লাখ ৬৬ হাজার ৩৬১ টন। চলতি বছর (২০১৯) উৎপাদন হয়েছে ৮ লাখ ৩১ হাজার ৯৪০ টন। গত বছর এই চার জেলায় আমগাছ ছিল ৭০ হাজার ৩৪৬ হেক্টর জমিতে, তবে এবার হয় ৭২ হাজার ৯০৯ হেক্টরে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে চার জেলায় আম থেকে আয় ছিল ৩ হাজার ৫৯৫ কোটি ৩৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা, যা ২০১৮-১৯ অর্থবছর হয়েছে ৩ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। আম উৎপাদনে নওগাঁ এরই মধ্যে আমের রাজধানীখ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জকে ছাড়িয়ে গেছে।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে সারা দেশে মোট আমের উৎপাদন ছিল ২৩ লাখ ৭২ হাজার টনের কিছু বেশি। এর মধ্য শুধু নওগাঁ থেকে উৎপাদন হয়েছে ৩ লাখ ১৭ হাজার ৮৬৫ টন আম। এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ ২ লাখ ৩৯ হাজার টন ও রাজশাহী থেকে এসেছে ২ লাখ ৯ হাজার ২৯৪ টন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে নওগাঁতে আমের মোট উৎপাদন ছিল ১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৫ টন। তিন বছরের ব্যবধানে এ জেলায় আমের উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে দ্বিগুণ।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাজশাহীতে ৮৩৭ কোটি, নাটোরে ১৬৪ কোটি ৪৫ লাখ ২৫ হাজার, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১ হাজার ১৯৫ কোটি ও নওগাঁয় ১ হাজার ৫৮৯ কোটি ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আম থেকে আয় হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রাজশাহীতে ৫৩৩ কোটি, নাটোরে ১০৯ কোটি ৩৫ লাখ ৪০ হাজার, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১ হাজার ৩৭৫ কোটি ও নওগাঁয় ১ হাজার ৫৭৮ কোটি ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা আম থেকে আয় হয়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাজশাহীতে ৫২১ কোটি, নাটোরে ১২২ কোটি ৪৫ লাখ, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১ হাজার ২২০ কোটি ও নওগাঁয় ১ হাজার ২১৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা আম থেকে আয় হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রাজশাহীতে ৫৯৪ কোটি, নাটোরে ৭০ কোটি ৪৩ লাখ ১০ হাজার, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১ হাজার ২৫০ কোটি ও নওগাঁয় ৬৪০ কোটি টাকা আয় হয়।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাজশাহীতে ১৭ হাজার ৫৭৩ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৯ হাজার ২৯৪ টন, নওগাঁয় ১৮ হাজার ৬৬৬ হেক্টর জমিতে ৩ লাখ ১৭ হাজার ৮৬৫ টন, নাটোরে ৪ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে ৬৫ হাজার ৭৮১ টন ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩১ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৩৯ হাজার টন আম উৎপাদন হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রাজশাহীতে ১৭ হাজার ৪৬৫ হেক্টরে ২ লাখ ১৩ হাজার ৪২৬ টন, নওগাঁয় ১৮ হাজার ৫২৭ হেক্টরে ৩ লাখ ১৫ হাজার ৬০৭ টন, নাটোরে ৪ হাজার ৮৪৪ হেক্টরে ৬২ হাজার ৩২৮ টন ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২৯ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৭৫ হাজার টন আম উৎপাদন হয়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাজশাহীতে ১৭ হাজার ৪২০ হেক্টরে ২ লাখ ৮ হাজার ৬৬৪ টন, নওগাঁয় ১৭ হাজার ৯০৭ হেক্টরে ২ লাখ ৪২ হাজার ৯৬০ টন, নাটোরে ৪ হাজার ৮২৩ হেক্টরে ৬১ হাজার ২২৫ টন ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২৬ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৪৪ হাজার টন আম উৎপাদন হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রাজশাহীতে ১৬ হাজার ৫৮৩ হেক্টরে ২ লাখ ১৫ হাজার ৫৭৯ টন, নওগাঁয় ১২ হাজার ৬৭০ হেক্টরে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৫ টন, নাটোরে ৪ হাজার ৮২৩ হেক্টরে ৫৯ হাজার ১৬৬ টন ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২৪ হাজার ৭৭০ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ২০ হাজার টন আম উৎপাদন হয়। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রাজশাহীতে ১৬ হাজার ৫৮৩ হেক্টরে ১ লাখ ৭০ হাজার ৪৮২ টন, নওগাঁয় ১০ হাজার ১৪৭ হেক্টরে ১ লাখ ২৮ হাজার টন, নাটোরে ৪ হাজার ৬৬৮ হেক্টরে ৫৪ হাজার ২০৭ টন ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২৪ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৫০ হাজার টন আম উৎপাদন হয়।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক দেব দুলাল ঢালী জানান, নওগাঁর পোরশা, সাপাহার, বদলগাছী, পত্নীতলা,  মান্দা, ধামইরহাট, নিয়ামতপুর এসব উপজেলার খরাপীড়িত এলাকা হিসেবে পরিচিত। এ অঞ্চলে পানির স্তর মাটির অনেক নিচে হওয়ায় বছরের বেশি সময় ধরে জমি পতিত থাকে। আমন ধান ছাড়া ইরি-বোরো ধান চাষ হয় না। বর্ষা মৌসুমে এ অঞ্চলের অধিকাংশ জমিতে শুধু আমন ধান চাষ হয়। ধানের জন্য প্রচুর পানির প্রয়োজন হয়। কিন্তু এসব এলাকায় পানি পাওয়া যায় না। অন্যদিকে বৃষ্টির পানিতেই আমের চাষ করা যায়। ধানের চেয়ে আম উৎপাদন বেশি লাভজনক হওয়ায় এসব অঞ্চলে হাইব্রিড জাতের আমবাগান গড়ে উঠছে। পাঁচ বছর আগে এ জেলায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে আমবাগান ছিল, চলতি বছর তা দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার হেক্টরে। রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জেও নতুন বাগান গড়তে অনেকেই উৎসাহিত হচ্ছেন।

আম উৎপাদনে নওগাঁর এগিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, দেশের সবচেয়ে বেশি আমের উৎপাদন হতো চাঁপাইনবাবগঞ্জে। এ জেলার আমের গাছগুলো অনেক পুরনো ও গাছগুলোও বড়। কিন্তু বর্তমানে নওগাঁয় যেসব জাতের আমের উৎপাদন হচ্ছে, যেগুলোর চারা ঘন করে লাগানো হয়, অনেকটা পেয়ারাগাছের মতো। এক-দুই বছরের মধ্যেই আম উৎপাদন হয়। তাছাড়া নতুন এসব হাইব্রিড গাছের চেয়ে পুরনো বা বড় আমগাছে অপেক্ষাকৃত আম কম হয়। ফলে নওগাঁয় আম উৎপাদন বেশি হচ্ছে আর আগামী বছর আরও বাড়বে।

 

পূর্বকোণ-রাশেদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট