চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

গঠন করা হচ্ছে কাস্টমস ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর

অনলাইন ডেস্ক

৯ নভেম্বর, ২০১৯ | ৭:২১ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশের সঙ্গে সারা বিশ্বের ব্যবসা-বাণিজ্য আরও সহজীকরণকল্পে বিশ্বব্যাংকের শর্ত পূরণ করতে ‘কাস্টমস ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর’ গঠন করছে সরকার। ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধার্থে ২৪ ঘণ্টা চালু থাকবেন নতুন এ অধিদপ্তর। প্রস্তাবিত সরকারের নতুন এ প্রতিষ্ঠান থেকে দেয়া হবে আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যে দেশীয় ব্যবসায়ী, শিল্পগোষ্ঠী ও উদ্যোক্তাদের আধুনিকমানের সেবা। এ ধরনের প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য সম্প্রতি অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ থেকে একটি সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে অর্থমন্ত্রীর কাছে।

নতুন অধিদপ্তরের সুবিধাগুলোর মধ্যে রয়েছে- দ্রুত পণ্যের চালান খালাস, বিদেশের বন্দরে দেশীয় উদ্যোক্তাদের পণ্য চালানের গড় অবস্থানকাল কমিয়ে আনা ও বাণিজ্য ব্যয় হ্রাস করা। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি, কাস্টমস কর্তৃপক্ষের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ। নিশ্চিত করা হবে বহির্বিশ্বের বন্দরগুলোয় পদ্ধতিগত যাত্রী ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে যাত্রীদের দ্রুত আসা-যাওয়ার ব্যবস্থাও।

সূত্র জানায়, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশে কর্মসংস্থান ব্যবস্থা বাড়াতে ‘জব প্রোগামেন্ট ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক ‘কাস্টমস ব্যবস্থাপনা ঝুঁকি অধিদপ্তর’ সৃজনের শর্ত জুড়ে দেয় আন্তর্জাতিক দাতা এই সংস্থাটি। ফলে চলতি বছরের মার্চে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) এ অধিদপ্তর গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়া বাংলাদেশ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ট্রেড ফ্যাসিলেশন এগ্রিমেন্টে স্বাক্ষর করেছে। তাই এ চুক্তির আলোকে বাণিজ্য সহজীকরণের কৌশল হিসেবে চালু করতে হবে কাস্টমস স্বয়ংক্রিয় ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি। নানাদিক থেকে এ বিষয়ে জোরালো পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলায় এনবিআর ‘কাস্টমস ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর’ গঠনের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করেছে।

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, এ ধরনের পৃথক অধিদপ্তর তখনই ভালো হবে, যখন এর মাধ্যমে বাড়ানো যাবে রাজস্ব আয়। পাশাপাশি বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের খরচও কমানো যায়। তিনি বলেন, এ উদ্দেশ্যে ভালো উদ্যোগ হলো কাস্টমস ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর গঠন। কারণ এতে সম্ভব হবে রাজস্ব ফাঁকি উদ্ঘাটন।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, অর্থবছরে (২০১৮-১৯) আমদানি-রপ্তানি মিলে বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের মোট বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকায়। এর মধ্যে রপ্তানি হয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা এবং আমদানি ৪ লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতিবছর বাড়ছে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাণিজ্যের হার। ফলে জাতীয় ও বহির্বিশ্ব পর্যায়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কাস্টমস বিভাগের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। এছাড়া বিশ্বব্যাপী কাস্টমস পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব বাণিজ্য সহজীকরণ বিষয়ে অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোয় উত্তম চর্চার ক্ষেত্র হিসেবে কমপ্লাইন্সের ভিত্তিতে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে কাস্টমস নিয়ন্ত্রণ কৌশল প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। আর এসব পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মেলাতে বাংলাদেশে পৃথক কাস্টমস ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো সারসংক্ষেপে ‘কাস্টমস ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর’ সৃজনের যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণ হচ্ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে বাণিজ্য পদ্ধতিতে জটিলতা ও প্রতিযোগিতা। এছাড়া জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় বাণিজ্য ব্যবস্থাপনা নিরাপত্তার ঝুঁকি আশঙ্কাজনক বেড়েছে।

এ কারণে বাংলাদেশের কাস্টমসের কাজের আওতা ও চ্যালেঞ্জ আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু কাস্টমস ব্যবস্থাপনায় জনবল স্বল্পতা ও কারিগরি সক্ষমতা কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে উন্নীত করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ফলপ্রসূ করা সম্ভব হচ্ছে না।

সারসংক্ষেপে আরও বলা হয়, আধুনিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করা গেলে আইন মান্যকারী অংশীজনের পণ্য চালান সহজ পদ্ধতিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে খালাস করা সম্ভব হবে। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ পণ্য চালান ও সন্দেহভাজন যাত্রী শনাক্ত করা সহজ হবে। আর পণ্যের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যালোচনার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল ও সম্পদ বিনিয়োগ সম্ভব হবে। এতে আইন লঙ্ঘনকারীদের পণ্যের চালান ও সন্দেহভাজন যাত্রী শনাক্তকরণ ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আরও ফলপ্রসূ হবে।

জানা গেছে, বর্তমানে কাস্টমস চলছে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে। বিপুল অঙ্কের আমদানি-রপ্তানি হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ লাখ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে বড় ধরনের ঝুঁকি থাকলেও সীমিত রয়েছে ব্যবস্থাপনা। এতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান মিথ্যা ঘোষণা ও কূটকৌশলের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব ফাঁকির আশঙ্কা করছে। তথ্যসূত্র : যুগান্তর

পূর্বকোণ/রাশেদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট