চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

ব্রহ্মপুত্র ব্যবহার করে আসামে পণ্য পাঠাতে চায় ভারত

অনলাইন ডেস্ক

২৯ অক্টোবর, ২০১৯ | ১১:০৫ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়ন এবং বাণিজ্য ও যোগাযোগ সহজ করতে বাংলাদেশের ব্রহ্মপুত্র, পদ্মা ও মেঘনা এবং ভারতের বরাক নৌপথে আসামের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরের সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে পণ্য পরিবহন করতে চায় ভারত। কয়েকদিন আগে আসামের গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ-ভারত স্টেকহোল্ডার্স মিট’-এ এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। পরে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সঙ্গে বৈঠকে আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল বলেন, ব্রহ্মপুত্র-বরাক-পদ্মা-মেঘনা নৌপথ চালু হলে গোটা অঞ্চলে বাণিজ্য প্রসারের ক্ষেত্রে নতুন আবহ তৈরি হবে।সূত্র – সময়ের আলো।

আসামের মুখ্যমন্ত্রী চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে ব্যবহার করার সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি উত্থাপন করে এ ক্ষেত্রে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) দ্রুত চূড়ান্ত করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। এ সময় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের কথা তুলে ধরে বলেন, বাণিজ্যের পরিসর বৃদ্ধির মাধ্যমেই বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল আর্থিকভাবে সাবলম্বী হতে পারে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এই বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুস সামাদ, ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমেদ ও গুয়াহাটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার শাহ মোহাম্মদ তানভীর মনসুর।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অভ্যন্তরীণ ও উপকূলীয় নৌযোগাযোগ বাড়াতে ইতোমধ্যে তিনটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ভারতের নয়াদিল্লিতে দুই দেশের নৌসচিব পর্যায়ের বৈঠক শেষে গত বছর এসব চুক্তি সই হয়। দুই দেশের নৌসচিব ভারত থেকে ভারতে পণ্য পরিবহনের জন্য বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করতে নিজ নিজ দেশের পক্ষে চুক্তিগুলোতে স্বাক্ষর করেন। এ ছাড়া ভারতের ধুবরি ও বাংলাদেশের পানগাঁও বন্দরকে নতুন ‘পোর্টস অব কল’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ‘প্রটোকল অন ইংল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেডে (পিআইডব্লিউটিটি) একটি সংযোজনীও স্বাক্ষরিত হয়। এ ছাড়া দুই দেশের মধ্যে অভ্যন্তরীণ প্রটোকল রুট ও কোস্টাল শিপিং রুটে যাত্রী ও ক্রুজ জাহাজ চলাচলের বিষয়ে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) চূড়ান্তকরণ হয় যার মাধ্যমে কলকাতা-ঢাকা-গুয়াহাটি-জোরহাটের মধ্যে রিভার ক্রুজ সার্ভিস শুরু হবে।

ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমেদ জানান, ব্রহ্মপুত্র নৌপথ দিয়ে ভারত তাদের রাজ্য আসামে পণ্য পরিবহন করলে শুধু ভারত নয়, বাংলাদেশও লাভবান হবে। বিষয়টি নিয়ে দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনাও হয়েছে। তিনি বলেন, কলকাতা থেকে আসামে পণ্য নিতে নৌপথে অর্ধেকের কম খরচ হবে। ডব্লিউটিও এর রুলস অনুযায়ী নৌপথ ব্যবহার করতে দিলে বাংলাদেশ শুল্কসহ অন্যান্য চার্জ পাবে। এ ছাড়া নৌপথের ড্রেজিংসহ রক্ষণাবেক্ষণ খরচের একটা অংশ বাংলাদেশ পাবে। নৌপথ ব্যবহার করার জন্য আনুষঙ্গিক বিভিন্ন ধরনের ব্যবসাও হবে বাংলাদেশের।

২২ ও ২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত এই সামিটে আসামের করিমগঞ্জে বরাক নদীর বদরপুর ও বাংলাদেশের আশুগঞ্জের ঘোড়াশালকে সম্প্রসারিত পোর্ট অব কল ঘোষণা এবং কলকাতা থেকে আসামের শিলচর পর্যন্ত প্রটোকল রুটের সম্প্রসারণের প্রস্তাব নিয়েও আলোচনা হয়। সমাপনী দিনে ভারতের কেন্দ্রীয় খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের প্রতিমন্ত্রী রামেশ্বর তেলি জানান, ভারত সরকার আসামসহ বিভিন্ন রাজ্যে ফুডপার্ক তৈরির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের এসব রাজ্যে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ৫০ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়া হবে।

তবে বিনিয়োগের প্রস্তাবে তেমন কোনো সাড়া দেননি বাংলাদেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমেদ বলেন, ভারতে এখন আমরা বিনিয়োগ করতে চাই না। আমরা ভারতের সহযোগিতা নিয়ে দেশেই বিনিয়োগ করব। যেমন ভারতের হিরো মোটরসাইকেল বাংলাদেশে তৈরি হবে। ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লেখা এই মোটরসাইকেল বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতেও বাজারজাত হবে। একইভাবে ডাবরসহ ভারতের নামিদামি ব্র্যান্ডের পণ্য বাংলাদেশেই তৈরি হবে। বাংলাদেশে শ্রমিকের খরচ তিন ভাগের এক ভাগ। তাই বাংলাদেশে পণ্য উৎপাদন করলে খরচ কম হবে। এ কারণে ভারতে বিনিয়োগের বিষয়টি আপাতত ভাবা হচ্ছে না।

 

পূর্বকোণ/রাশেদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট