চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন

প্রবৃদ্ধি বাড়লেও কমছে না দারিদ্র্য

অনলাইন ডেস্ক

৮ অক্টোবর, ২০১৯ | ১০:০২ অপরাহ্ণ

দেশের প্রতি চারজনের একজন দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছে। সাম্প্রতিককালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি বাড়লেও দারিদ্র্য বিমোচনের গতি কমেছে। ২০১০-১৬ সময়ে ৮০ লাখ বাংলাদেশি দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসেছে, যার বেশিরভাগই সম্ভব হয়েছে শ্রম আয় বৃদ্ধির কারণে। শহরাঞ্চলে অতিদারিদ্র্য কমেনি। দারিদ্র্য বিমোচনের ৯০ শতাংশই গ্রামে হয়েছে। একই সঙ্গে যারা দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠে এসেছে, তাদের মধ্যে একটি বড় অংশ ফের দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। একই সময় বাংলাদেশে ভোগ ব্যয়ের প্রবৃদ্ধির হারও কমতির দিকে রয়েছে। বাংলাদেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

গতকাল সোমবার রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশ পোভার্টি অ্যাসেসমেন্ট’ নামে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জোরালো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে দারিদ্র্য কমছে তুলনামূলক কম গতিতে। ২০১০ সাল থেকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি বাড়লেও দারিদ্র্য বিমোচনের গতি কমেছে। শহর ও গ্রামাঞ্চলের হিসাবে দারিদ্র্য কমেছে অসমভাবে। ২০১০ সাল থেকে দেশের পূর্ব এবং পশ্চিমের বিভাগগুলোর মধ্যে দারিদ্র্য পরিস্থিতির ঐতিহাসিক পার্থক্য আবার ফিরে এসেছে। পশ্চিমে রংপুর বিভাগে দারিদ্র্যের হার বেড়েছে এবং রাজশাহী ও খুলনায় একই জায়গায় রয়েছে। অন্যদিকে চট্টগ্রামে দারিদ্র্য কমেছে পরিমিতভাবে এবং বরিশাল, ঢাকা ও সিলেটে দ্রুত কমেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত দেড় দশকে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠে এসেছে। কিন্তু ২০১০ সালের পর যে হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেড়েছে, দারিদ্র্য সে হারে কমেনি। কর্মসংস্থান হারও সমানতালে বাড়েনি। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে প্রথাগত পদ্ধতির পাশাপাশি নতুন সমাধান ব্যবস্থা নিয়ে ভাবার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

প্রতিবেদনটি প্রস্তুতের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ মারিয়া ইউজেনিয়া বলেন, প্রথাগত কিছু চালিকাশক্তি দারিদ্র্য বিমোচনে ভূমিকা রাখছে। কিন্তু অগ্রগতি আনার ক্ষেত্রে কিছু চালকের ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এছাড়া আগামী দশকের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে হলে বাংলাদেশের নিজস্ব উদ্ভাবনী নীতি পরীক্ষার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নগরায়িত অর্থনীতিতে দারিদ্র্য মোকাবিলা করতে হবে।

প্রতিবেদনে দেশের সব অঞ্চলে দারিদ্র্য কমার ক্ষেত্রে বৈষম্যের বিষয়টিও উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, গ্রামাঞ্চলের চেয়ে শহরে দারিদ্র্য কমছে সীমিত হারে। অন্যদিকে শহরাঞ্চলে অতিদারিদ্র্য কমেনি। দারিদ্র্য বিমোচনের ৯০ শতাংশই গ্রামে হয়েছে।

বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন বলেন, বিগত দশকে দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ প্রশংসনীয় অগ্রগতি অর্জন করলেও এখনো প্রতি চারজনে একজন দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে।

অবশ্য দারিদ্র্য নিয়ে বিশ্বব্যাংকের এ প্রতিবেদনের সঙ্গে খানিকটা দ্বিমত প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের এ প্রতিবেদন ২০১৬ সালের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে। আলোচ্য সময়ে দারিদ্র্য ২৪ শতাংশে থাকলেও বর্তমানে তা ২১ শতাংশে নেমে এসেছে। হালনাগাদ পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বব্যাংককে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশের আহ্বান জানান তিনি।

এ সময় দারিদ্র্য কমিয়ে আনতে সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রয়োজন ও কারিগরিভিত্তিক শিক্ষায় জোর দেওয়া হচ্ছে। বিশেষত চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চাহিদার আলোকে শিক্ষাব্যবস্থাকে সাজানো হবে। আগে শক্তিশালী শিক্ষাব্যবস্থা ছিল না। সরকার ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে। আগামী ১০ বছরে শিল্পে এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। সরকারের চলমান উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ শেষ হলে প্রবৃদ্ধি বিদ্যমান ৮ শতাংশ থেকে আরও ২ শতাংশ বেড়ে ১০ শতাংশে উন্নীত হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। এ সময় তিনি বলেন, ২০২৭ সাল নাগাদ বিশ্বের বৃহৎত্তম অর্থনীতির দেশের তালিকায় আসবে বাংলাদেশ।

এক প্রশ্নের জাবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, যারা দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠে এসেছে, তারা আর গরিব হবে না। তাদের গরিব হওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। অন্যদিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে, তা অর্জন হবে। এছাড়া নগর ও গ্রামীণ এলাকার মধ্যে কোনো বৈষম্য নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

আলোচনায় অংশ নিয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান প্রবৃদ্ধি কৌশল নিয়ে পুনরায় চিন্তা করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, পবৃদ্ধির জন্য নতুন চালিকাশক্তির দিকে তাকানোর সময় এসেছে।

এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান ড. জায়েদী সাত্তার, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. শামসুল আলম প্রমুখ।

পূর্বকোণ/এএএস

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট