চট্টগ্রাম বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

সর্বশেষ:

অস্থিতিশীল অবস্থা বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে

নিজস্ব প্রতিবেদক

১ অক্টোবর, ২০১৯ | ৬:১৫ অপরাহ্ণ

বৈদেশিক মুদ্রাবাজার দিনদিন হয়ে উঠছে অস্থিতিশীল। রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাচ্ছে চলমান পরিস্থিতিতে। সাথে সাথে কমছে রপ্তানি আয়। এতে সরবরাহ কমে যাচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার। কিন্তু চাহিদা ক্রমবর্ধমান। সঙ্কট বেড়ে যাচ্ছে চাহিদা ও জোগানের মধ্যে পার্থক্য বেড়ে যাওয়ায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার ৮৪ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে আরো ১ থেকে ২ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। হঠাৎ করে খোলাবাজারেও চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় প্রতি ডলার কিনতে সাধারণ গ্রাহকের ব্যয় করতে হচ্ছে সাড়ে ৮৬ টাকা থেকে ৮৭ টাকা পর্যন্ত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বাজার স্থিতিশীল রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার লেনদেনের ওপর সীমা বেঁধে দিলেও প্রকৃতপক্ষে সেটা কার্যকর হচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের যে মূল্যের তথ্য দিচ্ছে বাস্তবে কেনাবেচা হচ্ছে তার চেয়ে বেশি মূল্যে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকেরও তেমন করার কিছু নেই। বাজারে সঙ্কট কিছুটা বেড়ে যাওয়ার কারণ চাহিদা জোগানের মধ্যে পার্থক্য বেড়ে যাওয়া। অনেক ব্যাংক বাধ্য হয়ে নীতিমালার ফাঁকফোকর দিয়ে লেনদেন করছে বেশি দরে।

সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত মাসের চেয়ে চলতি মাসে ১০ কোটিরও বেশি ডলার কম আসবে। গত মাসে প্রায় দেড় শ’ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। কিন্তু চলতি মাসের শেষে ১৪০ কোটি ডলারের কম আসবে রেমিট্যান্স। আগামী মাসেও অব্যাহত থাকতে পারে রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার ধারা। অন্যদিকে কাঙ্ক্ষিত হারে হচ্ছে না রপ্তানি আয়; বরং তা কমে যাচ্ছে। যেমন- গত আগস্টে রপ্তানি আয় হয়েছে ২৮৪ কোটি ডলার, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে আয় হয়েছিল ৩২৩ কোটি ডলার; অর্থাৎ গত আগস্টে রপ্তানি আয় আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে কমে গেছে প্রায় সাড়ে ১১ শতাংশ। এভাবেই কমে যাচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ। কিন্তু বিপরীত দিকে চাহিদা কমছে না, বরং বেড়ে যাচ্ছে দিন দিন। আমদানি বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করছে এলএনজি ও কুইক রেন্টালের জন্য জ্বালানি তেল আমদানি ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রতি মাসেই এলএনজি আমদানির জন্য পরিশোধ করতে হচ্ছে ১১ কোটি ডলার। আর বিপিসির দায় বাবদ প্রতি মাসেই ২৫ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হচ্ছে। আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বেড়ে গেছে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা। সামনে এ চাহিদা কমবে না বরং বেড়ে যাবে। বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা ও জোগানের মধ্যে পার্থক্য বেড়ে যাওয়ায় আশঙ্কা করা হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্কট সামনে বেড়ে যাওয়ার।

এ দিকে বাজারে ডলারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেয়া ডলারের দর কার্যকর করছে না ব্যাংকগুলো। কারণ হিসেবে রাষ্ট্রীয় এক ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও আর আগের মতো ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে না। ফলে পণ্য আমদানির দায় পরিশোধ করতে বাজার থেকে হয় তাদের ডলার কিনতে হচ্ছে, অথবা একটি নির্ধারিত কমিশনের বিপরীতে ধার নিতে হচ্ছে। আর এ সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছে কিছু কিছু ব্যাংক। তারা আদায় করছে ইচ্ছামাফিক ডলার মূল্য।

তবে এ ক্ষেত্রে তেমন করার কিছু নেই বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকেও। লেনদেনের দিন শতকরা ২ টাকা অতিরিক্ত ধরে অর্থাৎ ৮৬ টাকায় ডলার লেনদেন করছে। এভাবেই বাজারে কার্যকর হচ্ছে না বাংলাদেশ ব্যাংক বেঁধে দেয়া দর। এ বিষয়ে অপর একটি ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, তাদের করার কিছুই নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক নীতিমালা দিয়ে ব্যাংকগুলোকে আটকাতে না পারলেও তাদেরকে ডেকে এনে এ বিষয়ে সতর্ক করতে পারে। কিন্তু তাও করা হচ্ছে না। ফলে চুটিয়ে ব্যবসা করছে একশ্রেণীর ব্যাংক। জিম্মি হয়ে পড়ছে ওই সব ব্যাংকের কাছে।

এদিকে, খোলাবাজারেও ডলারের মূল্য অস্থির হয়ে পড়েছে। এর কারণ হিসেবে একজন মানিচেঞ্জার ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, ক্যাসিনো, টেন্ডারবাজিসহ চলমান অসামাজিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানের কারণেই অনেকেই আর স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন না নগদ টাকা রাখতে। এতে অনেকেই বাজার থেকে ডলার কিনছেন। আবার অনেকেই যাচ্ছেন বিদেশে। এতে  হঠাৎ করে ডলারের চাহিদা বেড়ে গেছে খোলাবাজারে।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হওয়ার আগেই বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার কারসাজিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নিলে সম্ভব হবে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানো।

পূর্বকোণ/রাশেদ

শেয়ার করুন

সম্পর্কিত পোস্ট